অভয়নগরে সজিনা গাছগুলো ধবধবে সাদা ফুলে ভরে গেছে। ডালগুলির গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত থোকায় থোকায় ফুল আর ফুল। ফুলের পরিমাণ এতোটাই যে গাছের পাতা পর্যন্ত দেখার উপায় নেই।
শীতে সজিনা গাছের পাতা ঝরে পড়ে। পাতা শূন্য ডালে থোকা থোকা সাদা ফুলের শোভা দেখে আত্মহারা হয় অনেকেই। ফুলের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছি মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এক সময় বাড়ির আশেপাশের উঠানে সজিনার গাছ লাগানো হতো। সজনে বিশ্বেও অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি বৃক্ষ। এ গাছের পাতা, ফুল, ব্যাকল ও শিকড় সবই মানুষের উপকারে আসে। সজনের পুষ্টি গুন অনেক বেশী।
মৌসুমের শুরুতে সজিনা প্রতি কেজি ১০০/১৫০ টাকা দরে বিক্রয় হলেও শেষ সময়ে দাম কমে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৪০/৫০ টাকায়।
ফাল্গুনের শেষে ও চৈত্রের শুরুতে সজিনার ডাটা খাওয়ার উপযোগী হয়। সাধারণত শাখা কেটে রোপণ করার মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার হয়। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গাছ থেকে সজিনা সংগ্রহ করা যায়।
ডাটার পাশাপাশি ফুল, পাতা সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। সবজি হিসাবে এটি যেমন উপকার, তেমনি এর ভেষজ গুনাবলী অসাধারন। নানা রোগব্যাধি নিরাময়, রোগ প্রতিরোধ ও শক্তি বৃদ্ধিতে সজিনা অত্যন্ত কার্যকর।
উপজেলার ধোপাদী, একতারপুর, চেঙ্গুটিয়া, প্রেমবাগ, রাজঘাট এলাকার ঘের ও রাস্তার পাশে রয়েছে সজিনা গাছ। গাছ গুলোতে ফুল ও ফল ধরছে।
এ ব্যাপারে উপজেলার চলিশিয় ইউনিয়নের একতারপুর গ্রামের সাগর শেখ বলেন, জমির পাশে রাস্তার ধারে কয়েকটি সজিনা গাছ লাগিয়েছি। বাড়িতে খাবার পর অতিরিক্ত সজিনা বাজারে বিক্রি করি। খরচ তেমন না হলেও দাম ভাল পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছে প্রায় এক থেকে দুই মণ সজিনা হয়।
পায়রা ইউনিয়নের বারান্দী গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার জমির আইলে ও আবাদি জমিতে সজিনা গাছ লাগিয়েছি। গাছে যে হারে ফুল ধরেছে তাতে মনে হচ্ছে অনেক সজিনা হবে। গত বছর বাড়িতে খাবারের পাশাপাশি বাজারে ও বিক্রি করেছি। তেমন খরচ হয় না। গাছের ডাল লাগিয়ে পরিচর্যা করলে ১/২ বছরের মাথায় ফুল হয়।
গ্রামতলা গ্রামের ফারজানা বেগম বলেন, আগে বাড়ির উঠানে সজনো গাছ লাগানো হতো। এখন আবাদের জন্য জমিতে লাগানো হচ্ছে। কাঁচা সবুজ পাতা রান্না করে, ভত্তা করে ও বড়া ভেজে খাওয়া যায়। ফল সবজিব মত রান্না করে খাওয়া যায়, ফল পাকলে সে সব ফলের বীজ বাদামের মতো ভেজে খাওয়া যায়। যেভাবে খাওয়া হোক না কেন তা শরীরে পুষ্টি যোগাবে।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সামদানী জানান, আমরা জনগণকে সজিনার গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহিত করছি। এবার উপজেলায় বর্তমানে দেশিয় জাতের বিশ হাজার একশতটির মতো সজিনা গাছ আছে। গত বছরে পনের হাজারের মতো ছিল। যেসব এলাকায় সজিনার গাছ নেই সেসব এলাকায় সজিনার গাছ লাগানোর জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সজিনার পুষ্টি গুণ অনেক। সরকারি জায়গায় সজিনার গাছ লাগানো হচ্ছে। আগামীতে সজিনার গাছ আরও বৃদ্ধি পাবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই