যশোরের অভয়নগর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র নওয়াপাড়া শহরে রয়েছে সাতটি বেসরকারি ক্লিনিক ও ছয়টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সাতটি ক্লিনিকের মধ্যে চলতি বছরের লাইসেন্স নবায়ন না থাকায় পাঁচটি ক্লিনিককে ২৩ আগস্টের মধ্যে লাইসেন্স নবায়নের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সতর্কীকরণ করেছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ।
এছাড়া যশোর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে তিনটি বেসরকারি ক্লিনিকের ল্যাবও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অপরদিকে যশোর জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে অভিযানে নওয়াপাড়া শহরে থাকা ছয়টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ল্যাবের কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
দেখা যায়, বন্ধ ঘোষিত পপুলার মেডিকেল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবওয়েভ মেডিকেল সেন্টার ও ফয়সাল ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কলসালটেশন সেন্টারে চলছে রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষার কার্যক্রম।
নোয়াপাড়া সার্জিক্যাল ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন কর্মচারী আর নার্স ছাড়া ক্লিনিকে নেই কোনো ডাক্তার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক এক ব্যক্তি জানান, বিকালের পর ছাড়া ক্লিনিকে কোনো ডাক্তার পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিরোধ ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নতিকল্পে বুধবার দুপুর থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত উপজেলার বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অভিযান চালায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
যশোর সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে তিনটি ক্লিনিকের প্যাথলজিসহ ছয়টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। নতুন লাইসেন্স ও পুরাতন লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য আগামী ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয় পাঁচটি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে।
অভিযানের বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম মাহমুদুর রহমান রিজভী জানান, উপজেলার নওয়াপাড়া শহরে অবস্থিত ছয়টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ছয়টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য বিভাগ অভিযান পরিচালনা করেন। এর মধ্যে নোয়াপাড়া সার্জিক্যাল ক্লিনিক, আল-মদিনা প্রাইভেট. ক্লিনিক ও আরোগ্য সদন প্রাইভেট হাসপাতালের প্যাথলজির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এসব ল্যাবে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি না থাকায় তাদের প্যাথলজি বিভাগগুলো বন্ধ করা হয়।
তিনি জানান, ছয়টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে ফয়সাল ডায়াগনস্টিক ও ল্যাবওয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া পালস ডায়াগনস্টিক, লাইফ কেয়ার, পপুলার ও নওয়াপাড়া ডায়াগনস্টিকের লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি না থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়।
আইন অমান্য করে বন্ধ ঘোষিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ চলার বিষয়ে ডা. এসএম মাহমুদুর রহমান রিজভী জানান, দ্রুত বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
অভিযান টিমের প্রধান যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় বেসরকারি ক্লিনিকগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে ক্লিনিক্যাল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এলবি হাসপাতাল ও আরোগ্য সদন প্রাইভেট হাসপাতাল ছাড়া
কোনো ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটারে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়নি, নেই পোস্ট অপারেটিভ রুম। এক্স-রে মেশিন চালানোর জন্য পাওয়া যায়নি পরমাণু শক্তি কমিশনের অনুমোদিত সনদপত্র। নেই পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ছাড়পত্র। প্রতিটি ক্লিনিকে বেডের সংখ্যা রয়েছে আবেদনের থেকেও অনেক বেশি। পাওয়া যায়নি ডিপ্লোমা পাস নার্স ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকা এমবিবিএস ডাক্তার।
তিনি আরও জানান, এসব বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন ও স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মানুযায়ী প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযান চলাকালে উপস্থিত ছিলেন যশোর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. শেখ মোহাম্মদ আলী, অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আহম্মেদ ফয়সাল পাভেল, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান, অভয়নগর থানার এসআই নাসির উদ্দিনসহ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।
খুলনা গেজেট/এনএম