বিগো লাইভ নামক একটি অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া খেলতেন সদ্য প্রয়াত অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু। বিগত তিন বছরে জুয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ খুইয়েছেন তিনি। সম্প্রতি অর্থসংকট পড়ে যাওয়ায় গ্রেপ্তারকৃত বন্ধু মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফি ওরফে উরফি জিয়ার থেকে নানা সময় টাকা নিয়ে থাকেন হিমু। সবশেষ বৃহস্পতিবার হিমুর বাসায় জিয়াউদ্দিন এলে এসব বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে আত্মহত্যা করেন হিমু।
শুক্রবার (০৩ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে উত্তরা পশ্চিম থানায় হুমায়রা হিমুর খালার করা মামলায় ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্ত জিয়াকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব।
খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম হুমায়রা নুসরাত হিমু একজন জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী এবং প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয় করেছেন। ২০১৪ সালে হুমায়রা হিমুর খালাতবোনের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত জিয়াউদ্দিন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যাজনিত কারণে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়ের সম্পর্কের সুবাধে জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে হিমুর পরিচয় হয়। হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়াউদ্দিনের বিচ্ছেদ হলেও হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে জানান জিয়া।
পরবর্তীতে জিয়াউদ্দিন অন্যত্র বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে সে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং বিগত ৪ মাস পূর্বে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে হিমুকে বিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত করতেন জিয়াউদ্দিন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হতো।
এছাড়াও বিগত ২ থেকে ৩ বছর ধরে হিমু বিগো লাইভ অ্যাপ্সের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমান অর্থ অপচয় করেছে বলে জানায় জিয়া। এসব বিষয় নিয়েও বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো।
জিয়াউদ্দিনের বরাত দিয়ে র্যাব পরিচালক বলেন, গত ২ নভেম্বর বিকালে হিমুর উত্তরার বাসায় যান জিয়া। পরবর্তীতে অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিকটিম হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে বাসায় ভাঙচুর করে হিমু। পরে রুমের বাইরে থেকে একটি মই এনে রুমের সিলিং ফ্যান লাগানোর লোহার সঙ্গে প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে জিয়াকে জানায় হিমু।
র্যাব জানায়, হিমু আগেও তিন-চারবার আত্মহত্যা করবে বলে জিয়াকে জানালেও সে পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেনি। এবারও আগের মতো আত্মহত্যার বিষয়ে জিয়াউদ্দিনকে জানালেও তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। কিন্তু হিমু একটু পর বেঁধে রাখা রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিলে জিয়াউদ্দিন তাকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
এসময় পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনেন জিয়া। পরবর্তীতে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামায় এবং বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক হিমুকে মৃত ঘোষণা করেন।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, জিয়াউদ্দিন ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল ক্যামিকেলের ব্যবসা করতো। ঘটনার দিন হিমুকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করার পরে সে হিমুর দুটি আইফোন ও ব্যবহৃত গাড়ি নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে হিমুর গাড়ি উত্তরার বাসার পার্কিংয়ে রেখে দেয় জিয়া এবং হিমুর ফোন দুটি বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে রাজধানীর বংশাল এলাকায় পালিয়ে যায়।
জিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে র্যাব।
খুলনা গেজেট/কেডি