যশোরের অভয়নগর উপজেলায় পুলিশ হেফাজতে আফরোজা বেগম নামে এক নারীর মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার গঠিত তিন সদস্যের ওই কমিটির প্রধান করা হয়েছে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর ই আলম সিদ্দিকিকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, খ-সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম সোহাগ ও যশোরের কোর্ট ইন্সপেক্টর রুখসানা খাতুন।
গত রোববার বেলা ১১টার দিকে আফরোজা বেগম নামে ওই নারীর মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের নর্থবেঙ্গল এলাকার আব্দুল জলিল মোল্লার স্ত্রী। এর আগে গত শনিবার রাত ১টার দিকে ইয়াবাসহ ওই নারীকে তার বাড়ি থেকে অভয়নগর থানা পুলিশ আটক করে।
পুলিশ জানায়, গত শনিবার রাত ১টার দিকে অভিযান চালিয়ে উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে অভয়নগর থানা পুলিশ আফরোজা বেগমকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তার কাছে ৩০পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। অভিযানে উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে এএসআই মিলন, এএসআই শামসুল হক এবং কনস্টেবল রাবেয়া খানম ছিলেন।
গ্রেপ্তারের পর আফরোজাকে মহিলা হাজতে রাখা হয়। পরদিন রোববার সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল ৯টার দিকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার চিকিৎসা দিলে তিনি সুস্থবোধ করেন। এরপর সকাল পৌনে ১০টায় আবারও তিনি অসুস্থবোধ করলে ফের তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎিসক মৃত ঘোষণা করেন। রোববার আফরোজা বেগমের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়।
এদিকে, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের নির্যাতনে আফরোজার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। আফরোজার স্বামী আব্দুল জলিল মোল্লা বলেন, আমি আগে মাদকের ব্যবসা করতাম। অনেক আগেই ওই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। আমি এখন অসুস্থ। অটো রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই।
নিহতের বড় ভাই নূর ইসলাম হাওলাদার বলেন, আমার ছোট বোন আফরোজা খুব ভালো মানুষ। গত শনিবার গভীররাতে অভয়নগর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ আমার বোনের নর্থবেঙ্গল রোডের বাসা থেকে কোনো মামলা বা ওয়ারেন্ট ছাড়া ধরে নিয়ে যায়। রোববার প্রথমে সকাল ৯টার দিকে ও পরে সাড়ে ১০টার দিকে মোট দু’বার পুলিশ বোনকে চিকিৎসার জন্য অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমবার বোনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বললেও পুলিশ সেটা না করে তাকে থানায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এতে অনেক দেরী হয়ে যায়। এরপর এগারটার দিকে চিকিৎসার অভাবে সে মারা যায়।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম সোহাগ সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশি নির্যাতনে আফরোজা বেগমের মৃত্যু হয়নি। তার মৃত্যু হয়েছে যশোর আড়ইশ’ বেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। তার মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর ই আলম সিদ্দিকিকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেডি