খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পেলেন সাবেক কূটনীতিক সুফিউর
  চট্টগ্রামে চলন্ত অটোরিকশায় ‘পেট্রোল বোমা’ নিক্ষেপ, দুই নারী দগ্ধ
খুলনা মহানগরীর রুকন শিক্ষা শিবির

‘অবিলম্বে এটিএম আজহারুলকে মুক্তি ও জামায়াতের নিবন্ধন ফেরত দিতে হবে’

গেজেট ডেস্ক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, আমরা চেয়েছিলাম অন্তবর্তীকালীন সরকার বৈষম্যহীনের উদাহরণ সৃষ্টি করবে। কিন্তু কাউকে মুক্তি দেবে কাউকে মুক্তি দেবে না সরকারের এমন কর্মকান্ডে জাতি হতাশ হয়েছে। তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক ফেরত দিতে হবে। নতুবা জামায়াতে ইসলামী রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আল ফারুক সোসাইটি মিলনায়তনে রুকন শিক্ষা শিবির-২০২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহবান জানান।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, ফ্যাসিবাদের জুলুম ধরে রাখা যাবে না। সকল জুলুমের কবর রচনা করতে হবে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদেরকে আওয়ামী লীগ বিচারিক হত্যা করেছে। যখন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন এটিএম আজহারুল ইসলাম, তখন আওয়ামী লীগ তাকে আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়ে ১৩টি বছর কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে তাকে এখনও আটক রাখায় জাতি বিস্মিত ও হতবাক। দেশবাসী স্বৈরাচারের কবল থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি চায়। অবিলম্বে আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানান।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলালের পরিচালনায় আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মুহাদ্দিস রবিউল বাশার। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, আজিজুল ইসলাম ফারাজী, মাওলানা আ ন ম আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, মাওলানা ওলিউল্লাহ, মাওলানা শাহারুল ইসলাম, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, এডভোকেট শফিকুল ইসলাম লিটন, আ স ম মামুন শাহীন, ইঞ্জিনিয়ার মোল্লা আলমগীর, মীম মিরাজ হোসাইন প্রমুখ।

নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরও বলেন, আখেরাতের সফলতায় মুমিন জীবনের প্রকৃত সফলতা। এ জন্য একজন ঈমানদার হিসেবে দুনিয়ার সুযোগ সুবিধা আমাদের জন্য অগ্রগণ্য না। আমাদের মূল টার্গেট হবে আখেরাতে চূড়ান্ত সফলতা। তাই জামায়াতে ইসলামীর রুকনদের আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়ে জীবন পরিচালনা করতে হবে। সকল কাজে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং উলিল আমরের নিকট আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদান করতে হবে। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে ময়দানে সাহসিকতার সাথে ভূমিকা পালন করতে হবে। বর্তমান সময়ের বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেদেরকে কুরআনের রঙে রঙিন করতে হবে। জামায়াতের রুকনদের কুরআনে বর্ণিত গুণাবলী সমুহ নিজেদের চরিত্রে ফুটিয়ে তুলে সমাজের মানুষের মাঝে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে।

তিনি বলেন, মানব জীবনের প্রথম ভিত্তি হচ্ছে পরিবার। ব্যক্তি পরিবারের একটা অংশ। আর পরিবার সমাজের অংশ ও ভিত্তিপ্রস্তর। সমাজকে বাদ দিয়ে যেমন রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না, তেমনি পরিবার ছাড়া সমাজও অকল্পনীয়। এ জন্য ইসলাম পারিবারিক জীবনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে। ফলে জামায়াতের রুকনদের নিজেদের পরিবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে। জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে মুক্তির জন্য পরিবারের সদস্যদের ইসলামের সু-মহান আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। স্ত্রী-সন্তানদের ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি বা ফ্যাক্টর হলেও জামায়াত যে আদর্শকে ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য জামায়াতের জনশক্তিদের টার্গেট ভিত্তিক ও পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক জনশক্তিকে মানবসম্পদে পরিনত করে রাষ্ট্রের সকল সেক্টরে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। একটি সফল বিপ্লবের জন্য জনমত তৈরীর পাশাপাশি যোগ্য লিডারশীপ তৈরী করতে হবে। জামায়াত কর্মীদেরকে সমাজকর্মী হতে হবে। তাদেরকে মানবসেবায় উজ্জীবিত হয়ে সমাজের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, বাইয়াত বা শপথ ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। মানব জীবনে সফলতার জন্য বাইয়াতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বাইয়াত বিহীন মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু। রুকনরাই এই সংগঠনের প্রাণ। একজন রুকন হিসেবে আমাদের পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করতে হবে, বিনয়ের সাথে পথ চলতে হবে, আমিত্ব ভাব পরিত্যাগ করতে হবে। ইকামাতে দ্বীনের কাজ একটি ফরজ ইবাদত। ইকামাতে দ্বীনের কাজকে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য জামায়াতের রুকনদের তাদের কৃত শপথের আলোকে জীবন পরিচালনা করতে হবে।

সভাপতির বক্তৃতায় অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশে আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি এবং জনমত সৃষ্টির মাধ্যমে এদেশে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ করতে চাচ্ছে। এ জন্য জামায়াতের জনশক্তিদের জনগণের সামনে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা, ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা, ইসলামী বিচার ব্যবস্থা ও ইসলামী মূল্যবোধকে ব্যপকভাবে তুলে ধরতে হবে। আর সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে গণভিত্তিকে মজবুত করতে হবে।

তিনি বলেন, আন্দোলনের শপথের জনশক্তিদের নিয়ে এই শিক্ষা শিবিরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সংগঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা। নিজেদেরকে একজন পরিপূর্ণ মুসলিম হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো। আল্লাহর দেওয়া বিধানের সাথে আমাদের সম্পর্ক যতো মজবুত হবে ইকামতে দ্বীন বিজয়ের কাজ ততো সহজ হয়ে উঠবে। সংগঠনকে শক্তিশালী ও বিজয়ী আন্দোলনে পরিণত করতে নিজেদের গণমুখি চরিত্রকে উদ্ভাসিত করতে হবে। খুলনা মহানগরীকে ইসলামী আন্দোলনের দুর্বার ঘাটিতে পরিণত করতে মহানগরীর প্রতিটি পাড়া মহল্লায় সংগঠনকে সম্প্রসারণ ও মজবুত করতে হবে। নিজেদের পরিশুদ্ধ করে জান-মালের কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!