রূপসার চর মাথাভাঙ্গা, জাবুসা এলাকা, বটিয়াঘাটার আমতলী নদীর অনুমোদনহীন বালু পাইপ লাইনের মাধ্যমে ভরাট হচ্ছে বিভাগীয় শহর খুলনার নিম্নাঞ্চল-জলাশয়। শহরের জনবহুল আবাসিক এলাকার রাস্তার উপর দিয়ে পাইপ নিয়ে অবৈধ বালু ব্যবসা করছেন প্রভাবশালীরা। বেড়িবাঁধ ভাঙন, ঘরবাড়ীসহ স্থাপনার ক্ষতি, ফসলি জমি নষ্ট ও জনভোগান্তির সৃষ্টি হলেও নিরুপায় জনপ্রতিনিধিরা তাকিয়ে আছেন জেলা প্রশাসনের দিকেই।
নগরীর ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজমল আহমেদ তপন বলেন, ‘অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ২৮, ৩০, ৩১নং ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চল ও জলাশয় ভরাট করছে। তাদের পাইপ স্থাপনে ব্যাপক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে মর্মে স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ব্যবস্থা নেবো কার বিরুদ্ধে? ওরা কারা জানেন? খোঁজ নেন, জানতে পারবেন কার লোক!’
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর ২৮নং ওয়ার্ডের অত্যন্ত জনবহুল সড়ক, দক্ষিন টুটপাড়া, ২নং ক্রস রোড, জোড়াকল বাজার সংলগ্ন রাস্তায় স্কুল ও মন্দির রয়েছে। রূপসা নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বালু এনে, এলাকায় ভরাটের কাজ করছে। সড়কে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে বলে এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর বরাবর।
এসব বিষয়ে জানতে বালু ব্যবসায়ী দুলালের ব্যবহৃত মোবাইল (০১৭১৬ ৭১৫৬৫১) নম্বরে গত রাত ৮টায় কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সূত্রমতে, খুলনায় কাজিবাছা নদীতে একটি মাত্র বালুমহালে ইজারা নিয়ে বৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ঠিকাদার। বাকি সবই অবৈধ। জেলার ডুমুরিয়ার সালতা, মরা ভদ্রা, হরি নদী, রূপসার চর মাথাভাঙ্গা, জাবুসা এলাকা, বটিয়াঘাটার আমতলী নদী, কয়রার কপোতাক্ষ নদের গাববুনিয়া, হরিণখোলা ও মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাট, শাকবাড়িয়া নদীর কাটকাটা, ৬নং কয়রা, কয়রা নদীর গিলাবাড়ি, চাঁদআলীসহ কয়েকটি স্থানে ড্রেজার দিয়ে মাসের পর মাস বালু উত্তোলন করা হয়।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার আমতলী নদীতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনে দায়ী ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫দিনের কারাদন্ড দেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাশেদুজ্জামান। তাতেও বন্ধ হয়নি খুলনায় অবৈধ বালু উত্তোলন।
তবে বটিয়াঘাটা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, নদী-খাল থেকে বালু উত্তোলন ও কৃষি জমি ভরাট বন্ধ করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। লবণচরা ও জিরোপয়েন্টে কয়েকটি এলাকায় প্লট ব্যবসার নামে কৃষি জমিতে বালু ভরাট কাজ বন্ধ করা হয়েছে। সরকারি বালু মহালের বাইরে নদ-নদী থেকে বালু উত্তোলন করলেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। এতে হুমকির মুখে পড়ছে বেড়িবাঁধ, ফসলি জমি, ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। খুলনায় কাজিবাছা নদীতে একটি মাত্র বালুমহালে ইজারা নিয়ে বৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ঠিকাদার। বাকি সবই অবৈধ।
কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন আতঙ্ক রয়েছে এলাকায়। অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণেই কয়রার অধিকাংশ বেড়িবাঁধে ভাঙন। জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, অবিলম্বে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন।
বটিয়াঘাটা এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক নগেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, নদী থেকে বালু উত্তোলনের পর তা পাইপ দিয়ে কৃষি জমি ভরাট করা হচ্ছে। দূরত্ব ভেদে ২-৩ লাখ টাকার চুক্তিতে জমি ভরাট করছে বেপরোয়া ব্যবসায়ীরা। নিষেধ করলে ক্ষমতার দাপট ও ভয়ভীতি দেখায়। একইভাবে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের কথা বলেও নদী থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে।
ডুমুরিয়ার জয়খালী বাজার সংলগ্ন এলাকায় নদী থেকে বালু উত্তোলন করে সাহস-জয়খালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় ৫ লাখ টাকার চুক্তিতে বালু ভরাটের কাজ করছেন ঠিকাদার। এতে আশেপাশের স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কপোতাক্ষ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন লোকা গ্রামের বজলুল করিম, মদিনাবাদ গ্রামের জাহাঙ্গীর, কামরুল, জুলফিকার ও জয়পুর গ্রামের ইউনুস মালি। তাদের পেছনে রয়েছে সরকারি দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতার মদদ। এ ছাড়া শুকনো মৌসুমে তিনটি ইটভাটার মালিক ড্রেজার ভাড়া করে কয়রা নদী থেকে গোপনে রাতের বেলা বালু উত্তোলন করে থাকেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বটিয়াঘাটায় দু’দিন আগেও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এআইএন