আধুনিক সমাজের ব্যস্ত জীবনে অনেকেই অনিদ্রায় ভুগে থাকেন। যদিও এর পেছনে এক বা একাধিক কারণ থাকতে পারে এবং এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাময়িক সময়ের জন্য হয়ে থাকে, নিচে সমসাময়িক বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ফলাফল ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে এ থেকে মুক্তির দশটি পয়েন্ট তুলে ধরা হল-
১. ‘নিদ্রাহীনতা’ বা ‘অনিদ্রা’ নিয়ে দুশ্চিন্তাটা আগে বাদ দিতে হবে। ‘আমার ঘুম আসছে না কেন’ -এই চিন্তা অনেক সময় ব্যাক অব দ্যা মাইন্ডে কাজ করলে ঘুম আসতে সমস্যা হয়।
২. দিনের বেলা ঘুমানো যাবে না। সামান্য বিশ্রাম নেয়া যেতে পারে, তবে সেটা অবশ্যই সন্ধ্যার পরে নয়। সারাদিন পরিশ্রম করে শরীর ক্লান্ত করে ফেলতে পারলে একটা পর্যায়ে শরীর তার যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু ঘুম নিয়ে নেবেই। ব্যায়ামও এক্ষেত্রে কার্যকরী একটি অপশন হতে পারে।
৩. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অল্প ডোজের অ্যাংজিওলিটিক ওষুধ যেমন ‘রিভট্রিল’ খেতে পারেন কিছুদিনের জন্য। পরিমিতি মাত্রায় অল্প দিনের জন্য এগুলো ব্যবহারে সাধারণত তেমন কোন ক্ষতি নেই। তবে, এসব ওষুধ অবশ্যই জেনে, বুঝে ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে ও ছাড়তে হবে।
৪. নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখুন। মানুষের সাথে মেশার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে পরবার বা কাছের শুভাকাঙ্ক্ষী। তাদের সাথে কথা বলুন। নেগেটিভ লোকজন এড়িয়ে চলুন। এতে আন্ডারলাইং দুশ্চিন্তা কমবে। দুশ্চিন্তা কমলে ঘুম সহজে আসবে।
৫. প্রার্থনা/ইবাদতে সময় দিন। সৃষ্টিকর্তার কাছে একান্তে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আপনার চাহিদাগুলো তাঁর কাছে বলুন। গ্রাটিচিউড মনকে শান্ত করে।
৬. অনেকের জন্য মেডিটেশন ভাল কাজ দিতে পারে। কোয়ান্টাম মেথড এক্ষেত্রে ভাল একটা অপশন হতে পারে। শিথিলায়নের কিছু ভিডিও আছে ইউটিউবে। একেকটা প্রায় আধ-ঘণ্টার। এগুলো প্লে করে ইন্সট্রাকশনস ফলো করুন। তেমন জটিল কিছু না। ঠিকভাবে ফোকাস করতে পারলে একেকটা সেশনের পর মন অনেকটা শান্ত লাগবে।
৭. বিভিন্ন বদঅভ্যাস যেমন চা-কফি, ধুমপান, মদ্যপান, অধিক রাত জাগা, রাত্রে তেল-চর্বি মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণ, শোবার আগে ব্লু স্ক্রিন অর্থাৎ টিভি/মনিটর/মোবাইলে চোখ রাখা, উত্তেজক অনুষ্ঠান দেখা/শোনা বা উত্তেজনাকর কথাবার্তা বলা কিংবা ঝগড়াঝাটি থেকে বিরত থাকুন।
৮. ঘরে অন্ধকার ও শীতল পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। অনেক সময় বেশি আলো কিংবা গরম পরিবেশের জন্য ঘুম আসতে সমস্যা হয়। অন্ধকারে আমাদের শরীরে মেলাটোনিন অ্যাকটিভ হয় যা ঘুমের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অনেকে আবার অন্ধকারে ঘুমাতে পারেন না। তাদের ক্ষেত্রে রুমে অল্প আলো/ডিমড লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে।
৯. নেগেটিভ ভাবনাগুলো যতদূর সম্ভব মাথা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। এটা বেশ কঠিন একটা কাজ, তারপরেও চেষ্টা করতে হবে। আর্থিক সমস্যা কিংবা পারিবারিক সমস্যাগুলোর মত বড় সমস্যার ক্ষেত্রেও পজিটিভ দিকগুলো খুঁজে বের করতে হবে। যেমন আপনার অবস্থা কতটা শোচনীয় তা না ভেবে, আপনি এসব ক্ষেত্রে কোন কোন দিক দিয়ে সমৃদ্ধ সেগুলো ভাবতে হবে। হতে পারে আপনার বাবা অনেক অসুস্থ, তাঁর চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে আপনি হিমশিম খাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে ভাবতে হবে অনেকের বাবা-ই নেই। আপনার একজন বাবা আছেন এবং আপনি তার সেবা করতে পারছেন, এটা অনেক বড় একটা আশীর্বাদ। বাবা-মায়ের সাথে আপনার শৈশবের সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা স্মরণ করতে পারেন। এভাবে করে সবকিছুর পজিটিভ দিক খুঁজে বের করতে হবে।
১০. প্রয়োজনে একজন ভাল চিকিৎসক কিংবা কাউন্সেলরের দ্বারস্থ হতে হবে। শরীরের অভ্যন্তরে অন্য কোন সমস্যা আছে কিনা পরীক্ষা করা যেতে পারে। তাতে সমস্যা থাকলে ধরা পরবে, আবার মানসিক শান্তিও মিলবে যা নিদ্রার জন্য সহায়ক হবে।
এতো কিছু ফলো করার পরেও অনিদ্রা রাতারাতি দূর হয়ে যাবে এমনটা জোর দিয়ে বলা যায় না। তবে এগুলো করতে পারলে অনেকে উপকার পেতে পারেন। আপনার সুস্বাস্থ্য ও শান্তিময় জীবনের জন্য নিরন্তর শুভকামনা।
লেখক : পিএইচডি ক্যান্ডিডেট/ক্যাজুয়াল অ্যাকাডেমিক, স্কুল অব হেলথ, ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইংল্যান্ড ও সহযোগী অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
খুলনা গেজেট/এনএম