Edit Content
খুলনা বাংলাদেশ
বুধবার । ২৩শে জুলাই, ২০২৫ । ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

হঠাৎ বৃষ্টি

রুমা ব্যানার্জি

বাসে বসে ঢুলছি, মাঝে মাঝেই মাথাটা ঝাঁকুনি খেয়ে তন্দ্রা ভেঙে জেগে উঠছি। ঘুম জড়ানো চোখে কতদূর এলাম বোঝার চেষ্টা করে আবার ঢুলেছি। নাকে আসছে ঘাম আর ডিওর মিশ্রনে মাখা গন্ধ। এসব নতুন কিছু না। বাসে উঠে ভাগ্যক্রমে জানালার পাশে সিট পেলেই রাজ্যের ঘুম নেমে আসে চোখে। এইভাবে ঢুলতে ঢুলতে আধা ঘুম, আধা জাগারনে পৌঁছে যায়ই গন্তব্যে। সত্যি কি পৌঁছাতে পারি? বোধহয় না, তাই আবার অসময়কে সঙ্গী করে বেড়িয়ে পরা।

আজ কিন্তু তেমন হলো না, বেশ কিছুক্ষণ থেমে আছে , সম্ভবত সবুজের ইশারার আশায়। জীবনটাও এমন একটা সিগন্যালেই তো থেমে থাকে।

জীবনের সব চলে ফেরা এই আলো নিয়ন্ত্রিত। কখনো লাল চোখ, কখনো সবুজের আহ্বানে চলা, আবার সব রঙ মেখে সাদা ভেলায় ভাসা, হলুদ বসন্তের উঁকি, খয়েরী সন্ধ্যা, কাঁচাহলুদ মাখা সকাল, গাঢ় সর্ষের তেল মাখা বাতাসি দুপুর। কত রঙ, আর সেই রঙের সঙ্গে এক একটা গন্ধ। দুটোই অতোপ্রতভাবে জড়িয়ে থাকে সারা জীবন।

এমন সময় একটা চেনা চেনা গন্ধ। কবে পেয়েছি মনে করতে পারছি না। অস্বস্তি বাড়ছে। অস্থির আর বিহ্বল হয়ে উঠলাম। কই রঙটা দেখতে পাচ্ছিনা তো। দূর বাবা!! রঙটাই না যদি পাই গন্ধটা ছোঁব কি করে?

মুহূর্তে একটা বহুদিনের ফেলে আসা সুসময় এসে দাঁড়ালো মুখের সামনে, স্পষ্ট গন্ধ পেলাম। কোথায় যেন পেতাম, সঙ্গে থাকত একটা আশ্বাসের ছোঁয়া, “আছি তো, যা ভয় কি? তুই যে আমার রাজা বেটা।” বাস! স্পষ্ট

বুঝলাম একটা বাবা বাবা গন্ধ উঠে আসছে আমার মনের ভিতর থেকে। সঙ্গে সঙ্গে দু একটা ফোঁটা জল গড়িয়ে এসে পড়ল হাতের ওপর। মন বুঝেই বাইরে ঝেঁপে বৃষ্টি নামলো ।বাইরে ভিজছে আমার শহর, ভিতরে বসে স্মৃতির অঝোর ধারায় ভিজছি আমি। মুখটা ফিরিয়ে নিলাম খোলা জানালার দিকে। এ আমার একার বৃষ্টি … শুধু আমার। হটাৎ বৃষ্টিতে ভিজে মন জুড়ে ভিড় করছে মুছে যাওয়া অবয়ব, অনেকটা ঘষা কাঁচের ওপর ভেসে ওঠা জীবনের ছবির মত। প্রতিটা বিন্দুতে মুছে যাচ্ছে আবার ভেসে উঠছে মুখটা। আমি আর আমার বাপি….।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন