Edit Content
খুলনা বাংলাদেশ
বুধবার । ২৩শে জুলাই, ২০২৫ । ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

কপোতাক্ষ পাড়ে কাঁকড়া চাষ, রপ্তানি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়

কেশবপুর প্রতিনিধি

কেশবপুরের আবদুল্লাহ আল মামুন (৩৪) ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে স্নাতক শেষ করে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। মাস শেষে ভালো বেতন পেতেন। কিন্তু চাকরির বন্দিজীবন ভালো লাগেনি তাঁর। তাই চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা।

কেশবপুরের ব্যাসডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মামুনের খামার গড়ে উঠেছে সাগরদাঁড়িতে কপোতাক্ষ নদের তীরে। নাম অ্যাকুয়া ক্র্যাব। এখানে বাগদা, গলদা ও ভেনামি চিংড়ির পাশাপাশি কাঁকড়ার চাষ করছেন তিনি। এই প্রকল্পে এ পর্যন্ত দুই কোটি টাকার মতো খরচ করেছেন তিনি। এরই মধ্যে ৫০ লাখ টাকা উঠে এসেছে। গত বছর প্রকল্প থেকে ২০ লাখ টাকার মতো লাভ হয়েছে। সময় যত বাড়বে, এই আয় তত বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।

২০১৮ সালে চাকরি ছেড়ে দেন আবদুল্লাহ আল মামুন। পরে চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৎস্যবিজ্ঞানে একটি কোর্স করেন।

তিনি বলেন, আমি নিজে কিছু করতে চেয়েছিলাম। এরপর কুমিল্লায় এক বন্ধুর সঙ্গে চিংড়ি চাষ শুরু করেন মামুন। সেখানে একদিন জালে ধরা পড়ে দুটি কাঁকড়া। সেগুলো বিক্রি করে তাঁর মনে হয়, চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়া চাষে লাভ বেশি হতে পারে। পরের বছর মহাখালীর বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হন তিনি। পুরস্কার হিসেবে ২৩ লাখ টাকা পান। সেটিই হয় তাঁর প্রাথমিক পুঁজি। লোনাপানিতে কাঁকড়া ভালো হয় বলে কপোতাক্ষ নদঘেঁষা পাঁচ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন খামার। ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসে যেভাবে কাঁকড়ার চাষ হয়, সেটি অনুসরণ করেন তিনি। বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা পরিষদ থেকে তিনি এই পদ্ধতি সম্পর্কে শেখেন। এখন এটি একটি লাভজনক খামারে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি মামুনের খামারে যেয়ে দেখা যায়, কাঠের সেতুর পাশের জমিতে বদ্ধ লোনাপানিতে চলছে কাঁকড়া ও চিংড়ির চাষ। কাঠের বক্সে প্রতিটি কাঁকড়া আলাদা করে চাষ করা হচ্ছে। একটি কাঁকড়া আনার ২৫-৩৫ দিনের মধ্যে খোলস পাল্টে নরম খোলসের কাঁকড়ায় পরিণত হয়। তখনই এটি বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে দুই ধরনের কাঁকড়া চাষ করি- নরম খোলসের ও শক্ত খোলসের। বিদেশে নরম খোলসের কাঁকড়ার বেশি চাহিদা। কারণ এটি পুরোটা খাওয়া যায়। বর্তমানে তাঁর খামারে ৭৩ হাজার বক্সে কাঁকড়া আছে বলে তিনি জানান।

১৭টি গ্রেডের নরম খোলসের কাঁকড়া গ্রেড ভেদে প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয় জানিয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই কাঁকড়া সুন্দরবন উপকূলের বিভিন্ন নদী থেকে সংগ্রহ করেন ৫২০ টাকা কেজি দরে। খাদ্য হিসেবে কাঁকড়াকে দেওয়া হয় তেলাপিয়া মাছ। অবশিষ্ট অংশ চিংড়ি খেয়ে নেয়। এভাবে একই জলাশয়ে কাঁকড়া ও চিংড়ি একসঙ্গে বেড়ে ওঠে। নরম খোলসের কাঁকড়া বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও চীনে রপ্তানি করছেন। কাঁকড়া ধরে কোল্ডস্টোরেজে রেখে প্যাকেট করে বিদেশে পাঠানো হয়। শিগগিরই কাঁকড়ার রেডি ফুড প্যাকেটজাত করে বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

রপ্তানির জন্য কাঁকড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, খামারের বক্স থেকে নরম খোলসের কাঁকড়া তুলে মিঠাপানিতে রাখা হয়, যাতে লবণাক্ততা না থাকে। এরপর ৪০ মিনিট অক্সিজেন দেওয়া হয়। এরপর পুনরায় মিঠাপানিতে ধোয়া, ওজন গ্যাস দেওয়া, ক্লোরিন দ্রবণে ভেজানো এবং আইসবাথ করানোর পর কাঁকড়া প্যাকেটে ঢোকানো হয়। এসব কাঁকড়া সাতক্ষীরার মৌতলা এলাকায় পাঠিয়ে সেখান থেকে বায়ারের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়।

আবদুল্লাহ আল মামুনের ভাষায়, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য নিজের লাভের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তিন বছর আগে খামারে শ্রমিক ছিলেন ৮ জন, এখন কাজ করছেন ২২ জন। ভবিষ্যতে খামারে দুই লাখ কাঁকড়া চাষ করার লক্ষ্য তাঁর। এতে আরও বেশি মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।

কেশবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস বলেন, তিনি প্রকল্পটি দেখেছেন। প্রকল্পটি অনেক লাভজনক, কর্মসংস্থানও বেশি হচ্ছে। সে কারণে বলা যায়, এটি ভালো প্রকল্প। এটি যেহেতু লাভজনক প্রকল্প, তাই অনেকেই এ বিষয়ে উৎসাহিত হতে পারেন।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন