Edit Content
খুলনা, বাংলাদেশ
শুক্রবার । ২৫শে জুলাই, ২০২৫ । ১০ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

মোরেলগঞ্জে জমে উঠেছে কালাচাঁদ আউলিয়ার মেলা

মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জমে উঠেছে প্রায় ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কালাচাঁদ আউলিয়ার মেলা। পঙ্খিরাজ ও নাগর দোলাসহ শিশু কিশোরদের বিনোদনের নানা সামগ্রীতে উপচেপড়া ভীড়। একদিকে মাজার প্রঙ্গনে চলছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কালা চাঁদের অনুসারী ফকির ভক্তবৃন্দ ও আশেকাবৃন্দের জিকির আজগার। অন্যদিকে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের প্রসাধনী দোকান গুলোতে কেনা কাটার ভীড়।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও বাংলা ২৫ অগ্রহায়ণ এক দিনের এ ভর মেলা হলেও মূলত মেলা থাকে ৩ দিন। এ মেলাকে ঘিরে দূর দূরন্ত থেকে আসা দর্শনার্থী ও ভক্তবৃন্দের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার রাখা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বক্ষনিক মোবাইল টিম গঠন করা হয়েছে।

সরেজমিনে মেলার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও ঐতিহ্যবাহী পীর কালাচাঁদ আউলিয়ার মাজারে এ মেলায়ে বসেছে নানা প্রসাধনী দোকান। শত শত দোকানীরা মেলা প্রাঙ্গনে শিশু খেলনা টমটম, কাঠের বাশি, সিলভারের হাড়ি পাতিল, গৃহস্তদের ঘরে ব্যবহারে কাঠের নানা সামগ্রী দোকান। এছাড়াও মেয়েদের সাজ সজ্জার কসমেটিক্স দোকান। এবারে মেলায় উল্লেখযোগ্য পঙ্খিরাজ দোলা, নাগর দোলা, ড্রাগন ট্রেন ও জাম্পিপিং স্ট্যান্ড কিশোর কিশোরীদের মন কেড়েছে। খাবারে দোকানের পরশাও কোন অংশে কমতি নেই।

কথা হয় বগুড়া থেকে আশা শিশু খেলনা বিক্রেতা দোকানি মাসুদ মন্ডল, মোস্তাকিন মন্ডল, নওগার জনি ইসলাম, পারভেজ আকন এরা ৩০ টি দোকান নিয়ে এসেছে। ৩দিন ধরে বিক্রি করবে শিশুদের নানা খেলনা। প্রতিটি দোকানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার খেলনা বিক্রির জন্য প্রস্তুত রাখা আছে। ভাল বেচা কেনা হলে ১ লাখ টাকারও উর্ধ্বে বিক্রি হবে প্রতি দোকানে।

পান বিক্রেতা মো. ছোবাহান হাওলাদার, মুড়ির মোয়া বিক্রিতা আব্দুল লফিত, দেলোয়ার হোসেন, আচার বিক্রেতা জুবায়ের আল মাহমুদ বলেন, কালাচাদ মেলার মাঠে ৩০ থেকে ৩৫ বছল ধরে দোকান নিয়ে আসছেন। গত ২/৩ বছর করোনার সময় মেলা জমেনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। বিগত বছরের বিক্রয় এ বছর পুশিয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তারা।

প্রায় ৩০০ বছর আগে শিশু কালাচাঁদ আউলিয়া পানগুছি নদীতে ভেসে এসেছিল এবং বারইখালী কাজী বাড়ি এলাকায় বট বৃক্ষের গাছের নিচে আস্থানা গড়েছিল। লোকমুখে রয়েছে তার বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক কাহিনী। দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার ভক্ত ও আশেকানবৃন্দ ও দর্শনার্থীরা এ মেলায় সমবেত হয়ে ব্যাপক লোক সমগম ঘটে এ মেলায়।

১০০ বছরের বৃদ্ধ মো. ওয়াজেদ কাজী, বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেক কাজী, মুজাম কাজীসহ মেলা মাঠের আশেপাসের দীর্ঘদিনের একাধিক বাসিন্দারা অলৌকিক কাহিনীর বর্ননা দিতে গিয়ে বলেন, এক লোক শীতার্ত কালাচাঁদকে দেখে তার গাঁয়ের চাদর দিয়ে দেয়। কালাচাঁদ চাদরটি পেয়ে তার সামনে জলন্ত আগুনে ভিতরে ফেলে দিলে তা পুড়ে যায়। এতে ঐ লোকটি আফসোস করলে কালাচাঁদ জ্বলন্ত আগুন থেকে অক্ষত চাদরটি উঠিয়ে তাকে ফেরত দেয়। সমসাময়িক সময়ে কালাচাঁদ আউলিয়া নাকি বাঘের পিঠে ঘুরে বেড়াত। এভাবে তার নামে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। বারইখালী ফকিরের তাকিয়া মৌজা তার নামেই হয়েছে। বারইখালীর কাজী বাড়ির চত্বরে তিনি আস্তানা গড়েন এবং আর এখানেই তিনি জ্যান্ত কবর নিয়েছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তার নামে এখানে প্রতিবছর মেলা বসে।

৩ দিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত মেলায় রাতভর চলবে ওয়াজ মাহফিল, ওরশ, মুর্শিদী ও মাইজ ভান্ডারী গান। ভক্তবৃন্দরা কালাচাঁদ আউলিয়ার মাজারে আগরবাতি আর মোমবাতি দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। মানতের টাকা পয়সা দান করতে পেরে তৃপ্ত হবে ভক্তগন।

এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ ও কালাচাঁদ মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল হাসান বলেন, কালাচাঁদ আউলিয়ার মাজারে এ মেলাকে ঘিড়ে দর্শনার্থী ও ভক্তদের নিরাপত্তার জন্য আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে ইতিমধ্যে পুলিশের ৪ সদস্য ৩টি মোবাইল টিম গঠন করা হয়েছে। সকল প্রকার অপ্রতীকর ঘটনা রোধে সার্বক্ষনিক তারা মাঠে নজরদারীতে রয়েছেন।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন