বহুল প্রত্যাশিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের আগে বৃহস্পতিবার ভোরে লন্ডনে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই চুক্তিকে উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক ‘মোড় পরিবর্তনের মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্টে মোদি বলেন, ‘এই সফর আমাদের দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্য সমৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ। বৈশ্বিক অগ্রগতির জন্য ভারত-ব্রিটেনের দৃঢ় বন্ধুত্ব অপরিহার্য।’
লন্ডনে পৌঁছানোর পর ভারতীয় প্রবাসীরা মোদিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। সেই মুহূর্তের ছবি শেয়ার করে মোদি লিখেছেন, ‘যুক্তরাজ্যে ভারতীয় কমিউনিটির উষ্ণ অভ্যর্থনায় আমি অভিভূত। ভারতের অগ্রগতির প্রতি তাদের ভালোবাসা ও আগ্রহ সত্যিই হৃদয়স্পর্শী।’
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই সফর
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর মোদির সফরের মূল আয়োজন। ৬ মে এই চুক্তি ঘোষিত হলেও আইনি যাচাই শেষে এবার চূড়ান্ত স্বাক্ষর হচ্ছে। তিন বছর ধরে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টির জয় এবং নতুন সরকারের নেতৃত্বে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে।
স্টারমার এই চুক্তিকে ‘মাইলফলক’ এবং ‘যুক্তরাজ্যের জন্য বড় জয়’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যজুড়ে হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে, ব্যবসায়িক সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের প্রতিটি প্রান্তে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। আমরা কর্মঠ ব্রিটিশদের হাতে আরও অর্থ তুলে দিতে চাই, জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে চাই।’
কী থাকছে চুক্তিতে
চীনের নেতৃত্বাধীন রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) থেকে ২০১৯ সালে সরে যাওয়ার পর এটি ভারতের প্রথম কোনো পশ্চিমা দেশের সঙ্গে বড় বাণিজ্য চুক্তি। এই চুক্তির ফলে পণ্য ও সেবার বাজারে ব্যাপক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে, উদ্ভাবন, সরকারি ক্রয় ও মেধাস্বত্ব ইস্যুতে সমাধান আসবে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে ‘ডাবল কন্ট্রিবিউশন কনভেনশন অ্যাগ্রিমেন্ট’ নামে সামাজিক সুরক্ষা চুক্তিও থাকবে।
ভারতের জন্য এই চুক্তির ফলে টেক্সটাইল ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়বে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের উচ্চমূল্যের গাড়ি ও হুইস্কি ভারতের বাজারে সহজ প্রবেশাধিকার পাবে। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চুক্তি কার্যকরের পর প্রায় ৯৯ শতাংশ শুল্ক লাইনের ওপর শুল্ক বাতিল হবে, যা প্রায় ১০০ শতাংশ বাণিজ্য মূল্যের ওপর প্রযোজ্য হবে।
যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এফটিএ কার্যকরের পর ব্রিটিশ পণ্যের ওপর ভারতের গড় শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নেমে আসবে। সফট ড্রিংক, কসমেটিকস, গাড়ি ও চিকিৎসা যন্ত্রসহ বিভিন্ন ব্রিটিশ পণ্যের জন্য ভারতের বাজার উন্মুক্ত হবে। হুইস্কির ক্ষেত্রে শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে নেমে যাবে এবং এক দশকের মধ্যে তা ৪০ শতাংশে হ্রাস পাবে।
এছাড়া, প্রায় ৬ বিলিয়ন পাউন্ডের নতুন বিনিয়োগ ও রপ্তানি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে বলে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এয়ারবাস ও রোলস-রয়েসসহ ২৬টি ব্রিটিশ কোম্পানি ভারতে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করবে। শিগগিরই ভারতে এয়ারবাসের উড়োজাহাজ সরবরাহ শুরু হবে, যার অর্ধেকের বেশি রোলস-রয়েস ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম