ভারতের ওড়িশা রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর লাগাতার নিপীড়ন, মিথ্যা অপবাদ আরোপ ও বেআইনিভাবে বাংলাদেশে পুশব্যাকের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদে শুক্রবার (১৮ জুলাই) মেঘ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কলকাতার রাজপথ বিশাল মিছিলে কাঁপালো সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি আম ইণ্ডিয়া (এসডিপিআই) । এদিন দলের পক্ষ থেকে কলকাতার ওড়িশা ভবন ঘেরাও করা হয়। ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছিল। ওড়িশা ভবনের সামনে বিক্ষোভও করা হয়।
শিয়ালদা স্টেশন চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ওড়িশা ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় পথসভা ও অবস্থান বিক্ষোভ। এসডিপিআই-এর দাবি ছিল— অবিলম্বে এই বেআইনি পুশব্যাক বন্ধ করতে হবে, বাঙালিদের বাংলাদেশি অপবাদ দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
পথসভায় রাজ্য সম্পাদক মাসুদুল ইসলাম বলেন, বিজেপি শাসিত ওড়িশা রাজ্যে বাংলার শ্রমজীবী মানুষ, প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনা, জাতিগত বৈষম্য ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। তাদের কাছে বৈধ পরিচয়পত্র, আধার, ভোটার কার্ড, এমনকি জমির দলিল থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র বাঙালি পরিচয়ের কারণে বিএসএফ জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে। এটি সরাসরি সংবিধান ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
এদিন এসডিপিআই- এর একটি প্রতিনিধি দল ওড়িশা ভবনে গিয়ে ওড়িশা সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থিত প্রতিনিধির সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন এবং লিখিত ডেপুটেশন জমা দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্য সভাপতি হাকিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ডা. কামাল বাসিরুজ্জামান, সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক সুমন মণ্ডল, সম্পাদক মাসুদুল ইসলাম ও দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি আব্দুল করিম মণ্ডল।
দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনার পর প্রতিনিধি দল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, তাঁরা শুধু ডেপুটেশন জমা দিতে আসেননি— এসেছেন ওড়িশায় বাঙালি শ্রমিকদের উপর চলা অত্যাচার বন্ধ করতে।
রাজ্য সভাপতি হাকিকুল ইসলাম জানান, ওড়িশা সরকারের প্রতিনিধিকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে প্রথমে স্পষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি। পরে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে ওড়িশার হোম সেক্রেটারির সঙ্গে সরাসরি কথোপকথন হয়। তিনি নিজে স্বীকার করেন যে, এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, তবে রাজ্য সরকারের তরফে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তর তিনি কিছুই তথ্য দিতে পারেননি।
এসডিপিআই-এর পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, এই বিষয়ে ওড়িশা সরকারকে লিখিত আশ্বাস দিতে হবে এবং জনসমক্ষে প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করতে হবে।
দীর্ঘ আলোচনার শেষে ওড়িশার হোম সেক্রেটারি লিখিতভাবে জানান, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও এসডিপিআই অভিযোগ তোলে, পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত ওড়িশা ভবনের নামফলকে বাংলা ভাষায় কিছুই লেখা নেই। এই অভিযোগের ভিত্তিতে হোম সেক্রেটারি আশ্বাস দেন, ২০ দিনের মধ্যে বাংলা ভাষায় লেখার ব্যবস্থা করা হবে।
রাজ্য সভাপতি হাকিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের সামনে ঘোষণা করেন, এই প্রতিবাদ ছিল প্রথম ধাপ। আমরা চাই সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। যদি ১৫ দিনের মধ্যে বাঙালি শ্রমিকদের উপর চলা নিপীড়ন বন্ধ না হয় এবং যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে এসডিপিআই বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে ও ওড়িশা ভবন ঘেরাও করে অবরোধ গড়বে।
খুলনা গেজেট/এএজে