রিজিক বলতে কেবল দু’মুঠো খাবার নয়। বরং মানব জীবনের প্রয়োজনীয় প্রতিটি বস্তুই রিজিক। চাই পার্থিব প্রয়োজন হোক যেমন অন্ন, বস্ত্র এবং বাসস্থান। পাশাপাশি ইজ্জত-সম্মান, সুস্থতা, নিরাপত্তা এবং স্ত্রী পরিবারও এর অন্তর্ভূক্ত।
এমনিভাবে আল্লাহর পথের সঠিক হেদায়েত এবং নেক আমলের তৌফিকও আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ রিজিক। উপরুন্ত এগুলি সর্বত্তম রিজিক।
প্রকৃত অর্থে রমজানে মুমিনবান্দার এই উভয় প্রকার রিজিকে ব্যাপক বরকত হয়। আর্থিকভাবে কেউ অভাব অনাটনে থাকলেও রমজানে সকলেরই খানা পানাহারের তুলনামূলক উত্তম ব্যবস্থা হয়ে থাকে।
আবার এসময় সাধারণত ধনী লোকেরা নিজেদের মালের জাকাত প্রদান করে থাকেন এবং সামর্থবানরা নিজেদের খানার মধ্যে দরিদ্র লোকদেরকে শরিক করে থাকেন। এমনকি রোজাদারকে সামান্য ইফতার করানো বা এক ঢোক পানি পান করানোর পূণ্য হাসিলে আগ্রহী থাকেন সবাই। এটা তার প্রতি করুনাবসত নয়, বরং তা আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজাদারের বিশেষ সম্মান।
প্রিয় নবীজি সা. এ বিষয়ের প্রতি বিশেষ উৎসাহ প্রদান করেছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তি রমজানে কোন রোজাদারকে ইফতার করায় মহান আল্লাহ তার সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। রোজাদারের রোজার পরিপূর্ণ সাওয়াব তাকে দেওয়া হয়। এতে রোজাদারের সাওয়াব একটুও কমানো হয় না।
সাহাবায়ে কেরাম রা. একথা শুনে নবীজি সা. কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমাদের সকলেই তো এমন সামর্থ রাখেনা যে অন্যকে ইফতার করাতে পারে। উত্তরে নবীজি সা. বললেন, পেট ভরে খাওয়াতে হবে বিষয়টি এমন নয়। বরং আল্লাহ তায়ালা এই সাওয়াব তো একটুকরা খেজুর বা এক ঢোক পানি পান করালেও দান করবেন। (বাইহাক্বী, শুয়াবুল ইমান-৩৩৩৬)
অন্যদিকে আখেরাতের পুজি সংগ্রহের জন্য নেক আমলের তৌফিক ও আগ্রহ মুমিনদের জন্য বড় রিজিক। রোজা অবস্থায় অন্তর নরম থাকে। কুপ্রবৃত্তি নিবৃত হয়। যা আল্লাহর দিকে মনোনিবেশে খুব সহায়ক। এছাড়া রমজানে নেক আমলের জন্য পরিবেশও বড় অনুকূল থাকে। বিতাড়িত শয়তান শৃংক্ষলাবদ্ধ থাকায় পাপ কাজের প্রবণতা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কমে যায়।
সুতরাং এসময় মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়। দান সদকাকারী বাড়ে। মানুষ গোনাহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে অধিকহারে আল্লাহর ইবাদতের রিজিকের মধ্যে অংশিদার হয়।
তাই রমজান মুমিনের জন্য উভয় ধরনের রিজিক বৃদ্ধির মৌসুম। তবে অনেকের ধারণা মতে, রোজা তো তারাই রাখবে যাদের ঘরে খাবার নেই। আবার অনেকে বলে থাকেন আমাদের ক্ষুধার্ত রেখে আল্লাহর কি লাভ! কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলো তাই যা রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, রমজান এমন মাস যখন মুমিনের রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। (বাইহাক্বী- ৫/২২৪)
(লেখক : শিক্ষক, ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়ী গেট, খুলনা )
খুলনা গেজেট/এমএইচবি