ইসলাম বেকারত্ব, কর্মহীনতা, ভিক্ষাবৃত্তি ও বৈরাগ্যবাদ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। তেমনি অর্থ উপার্জনকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বানাতেও নিরুৎসাহ করেছে। বরং মধ্যপন্থা অবলম্বন করে হালাল জীবিকা অর্জনের প্রতি ইসলাম বরাবরই উৎসাহ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে নবী-রাসুলরা নিজেদের জীবনাদর্শে উত্তম নমুনা স্থাপন করেছেন। একদিকে তাঁরা নবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, অন্যদিকে প্রয়োজন পরিমাণ জীবনধারণের জন্য বিভিন্ন পেশা অবলম্বন করেছেন। নিম্নে নবী-রাসুলদের কিছু পেশা তুলে ধরা হলো—
নুহ (আ.) কাঠের কাজ করতেন : তিনি কাঠের কাজে পারদর্শী ছিলেন। মহাপ্লাবনের সময় মহান আল্লাহর নির্দেশে তিনি একটি নৌকা তৈরি করেন। এটা এত বড় ছিল যে সব ধরনের জীব এক জোড়া করে তাতে আরোহণ করানো সম্ভব হয়েছিল।
মুসা (আ.) মেষ পালন করতেন : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুসা বলেন, এটা আমার লাঠি, আমি এতে ভর দিই এবং এর দ্বারা আঘাত করে আমি আমার মেষপালের জন্য গাছের পাতা ফেলে থাকি, আর এটা আমার অন্য কাজেও লাগে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১৮)। ইতিহাস খুঁজলে পাওয়া যায়, তিনি দীর্ঘ ১০ বছর শুয়াইব (আ.)-এর গৃহে পশু রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন।
লৌহকর্ম করতেন দাউদ (আ.) : দাউদ (আ.) ছিলেন নিজ সময়ের বাদশাহ। তা সত্ত্বেও তিনি কঠোর পরিশ্রম করে লৌহকর্মের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ কারণে প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, সর্বোত্তম আহার তা-ই, যা মানুষ তার নিজ হাতে উপার্জন করে। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জিত অর্থ দ্বারা আহার করতেন। (বুখারি, হাদিস : ২০৭২)
নির্মাণশিল্পে ইবরাহিম (আ.) : পবিত্র নগরী মক্কায় মানবজাতির প্রথম গৃহ স্থাপন করেন তিনি। কাবাঘর নির্মাণের বরকতপূর্ণ কাজ নির্মাণশিল্পে তাঁর অসামান্য সাফল্য। এ কাজে তাঁর সঙ্গে ছিলেন পুত্র ইসমাইল (আ.)।
জীবিকার তাগিদে প্রিয় নবী (সা.) : রাসুল (সা.) অল্প বয়সে মক্কার উত্তপ্ত পাথুরে ভূমিতে ছাগল চরিয়েছেন। অতঃপর যৌবনে পদার্পণ করতেই ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত হয়েছেন। এবং খুব অল্প সময়ে ব্যবসায়ী অঙ্গনে এতটাই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন যে মক্কার বড় বড় পুঁজিপতিরা চাইত, তিনি যেন তাদের ব্যবসা পরিচালনা করেন।
নবুয়তপ্রাপ্তির পরও বিভিন্ন সময় ছোটখাটো ব্যবসা করতেন বলে সিরাতের গ্রন্থাদিতে উল্লেখ রয়েছে। মক্কার মুশরিকরা উপহাস করে বলত, এ কেমন নবী যে বাজারে যায়! কিন্তু তিনি এসব কথায় কর্ণপাত করতেন না। ধর্মীয় কাজের ব্যস্ততাকে যারা কামাই-রোজগারের অপারগতা বলে মনে করেন, নবীদের কর্মনির্ভর জীবনীতে তাঁদের জন্য রয়েছে চিন্তার খোরাক।
লেখক : শিক্ষক, ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়ীগেট, খুলনা।
খুলনা গেজেট/কেএম