একটি নাটকে চার চরিত্র—বাকের ভাই, মুনা, বদি এবং মজনু। হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ গত শতকের নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ধারাবাহিক। চারটি চরিত্রই দর্শকের ভীষণ প্রিয়। হঠাৎ নাটকের গল্পে মোড় ঘুরে যায়। সবার প্রিয় বদি হয়ে ওঠে সবার অপ্রিয় একজন। বাকের ভাইয়ের সহচর হয়েও তিনি হয়েছিলেন বাকের ভাইয়ের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী! ফাঁসি হয় বাকের ভাইয়ের। বদি চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়েছিলেন অভিনেতা আবদুল কাদের। নাটকে তাঁর একটি সংলাপ—‘মাইরের মধ্যে ভাইটামিন আছে’ এখনো শোনা যায় মানুষের মুখে।
আজ শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন ক্যানসার–আক্রান্ত অভিনেতা আবদুল কাদের। তাঁর মৃত্যুতে অভিনয় জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বদি, নিরুপায় হয়ে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়। আদালত খুনের দায়ে নির্দোষ বাকের ভাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আজ সেই ‘বদি’ চরিত্রের অভিনেতা আবদুল কাদের চলে গেলেন। আজ শনিবার সকালে তাঁর বিদায়ের পর বন্ধু-স্বজন ও অনুরাগীরা গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করছেন তাঁকে। কেউ কেউ অতীত দিনের স্মৃতিচারণা করছেন।
বাকের ভাইয়ের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন বদি। যে চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে পরিচিতি পেয়েছিলেন আবদুল কাদের। বদির প্রয়াণে বিষণ্ন হয়েছেন মুনা চরিত্রে অভিনয় করা সুবর্ণা মুস্তাফা। ফেসবুকে পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা করেছেন তিনি। লিখেছেন, ‘১৯৮৬, ফরীদি এবং আমি ভারতে যাচ্ছিলাম। ফ্লাইট ছিল পরের দিন। আমাদের দরজায় কেউ একজন কড়া নাড়লেন, ইনস্ট্যান্ট ক্যামেরা হাতে কাদের ভাই দাঁড়িয়ে। তিনি সেটি আমাদের দিলেন, ‘ইন্ডিয়া যাবা, সুন্দর সুন্দর জায়গা দেখবা আর ছবি তুলবা।’ এমনই ছিলেন কাদের ভাই। আমাদের তখন কোনো ক্যামেরা ছিল না…সেটা কাদের ভাই কীভাবে জানলেন, সে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই। এটি আমার সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতিগুলোর একটি। শান্তিতে থাকুন কাদের ভাই। আমরা আপনাকে ভালোবাসি।’
দীর্ঘদিন মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগেছেন আবদুল কাদের। উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ ডিসেম্বর ভারতের চেন্নাইতে যান তিনি। সেখানকার হাসপাতালেই ১৫ ডিসেম্বর ক্যানসার ধরা পড়ে কাদেরের। জানা যায়, ক্যানসার সংক্রমণের চতুর্থ স্তরে পৌঁছে গেছে। ছড়িয়ে পড়েছে সারা শরীরে। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তখন তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়া যায়নি। ফলে ২০ ডিসেম্বর আবদুল কাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফিরেই তাঁকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। আজ শনিবার সকালে সেখানেই মারা যান তিনি।
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ও মোহাম্মদ বরকতুল্লাহর পরিচালনায় ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিক নাটকে বদি চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পান আবদুল কাদের। টিভিনাটক, মঞ্চনাটক ও চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও দেখা গেছে তাঁকে। মঞ্চে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনো ক্রীতদাস’, ‘তোমরাই’, ‘স্পর্ধা’, ‘দুই বোন’, ‘শিবের গীত’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’ নাটকগুলোতে অভিনয় করেছেন তিনি।
খুলনা গেজেট/কেএম