গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মোল্যার ছেলে মাহমুদ আলম। বর্ণি বাজারে মোবাইলের ব্যবসা করতেন তিনি। ব্যবসা ভালোই চলছিল। এ সময় একই গ্রামের মো. আলী আহম্মেদ বাবু তাকে ব্যবসা ছেড়ে নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার প্রলোভন দেখান। প্রলোভনে পড়ে মাহমুদ আলম ব্যবসা ও জমি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার জন্য বাবুর হাতে ১০ লাখ টাকা তুলে দেন।
কিন্তু প্রতারক বাবু শুরু করেন তালবাহানা। নিউজিল্যান্ডে নিতে না পারায় পরে আলবেনিয়া, কিরগিজস্তান ও ভিয়েতনামে পাঠানোর কথা বলেন। কয়েকবার ভিসা দিলেও তা ভুয়া হিসেবে ধরা পড়ে। এতে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যায় এবং কষ্টার্জিত টাকাও হাতছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মাহমুদ আলম। ধর্ণা দিয়ে একটি ৫০ হাজার টাকার চেক পেলেও তা ব্যাংকে ডিজঅনার হয়।
শুধু মাহমুদ আলম নন, একই গ্রামের আরও ৭টি পরিবারের সঙ্গে একইভাবে প্রতারণা করা হয়েছে। বিদেশ পাঠানোর কথা বলে এসব পরিবারের কাছ থেকে মোট অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক মো. আলী আহম্মেদ বাবু। এ সময় তাদের ভুয়া ভিসাও দেওয়া হয়। বিদেশে যেতে না পারায় বারবার টাকা ফেরত চাইলে ভুক্তভোগীরা হুমকি-ধমকি পাচ্ছেন।
গত সোমবার (১৮ আগস্ট) বর্ণি গ্রামে গিয়ে জানা যায়, লোকমান ফরাজির ছেলে আলী আহম্মেদ বাবু দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে লোক পাঠানোর দালালি করে আসছেন। নিজের গ্রামের যুবক মাহমুদ আলম, রাজীব, আপু, রাব্বী, আনিস, মেহেদী হাসান, ইয়াসিন ও রিয়াজুলসহ ৭ পরিবারের কাছ থেকে ৫ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে তিনি নিয়েছেন। কিন্তু এসব ভিসা পরীক্ষার মাধ্যমে ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে ভুক্তভোগীরা টাকা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
একই এলাকার ইয়াসিন খানকে আলবেনিয়া নেওয়ার কথা বলে শ্রীলঙ্কায় আটকে রাখেন বাবু। পরে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এর পর থেকেই বাবু এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আছেন। একাধিক শালিস বৈঠক হলেও টাকা ফেরত না দিয়ে বরং হুমকি দিচ্ছেন তিনি।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মাহমুদ আলমের স্ত্রী চাঁদনী বেগম টুঙ্গিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে বাবু ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কয়েকবার ভিসা ও টিকিট দিলেও সব ভুয়া প্রমাণিত হয়। টাকা ফেরত চাইলে মোবাইল বন্ধ করে পালিয়ে গেছে। আমি চাই দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে আমাদের টাকা ফেরত দেওয়া হোক।’
ভুক্তভোগী মাহমুদ আলম বলেন, ‘প্রথমে নিউজিল্যান্ডে নেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা নেই। পরে আলবেনিয়া, কিরগিজস্তান ও ভিয়েতনামে নেওয়ার কথা বললেও তা আর সম্ভব হয়নি। সব ভিসাই ভুয়া ছিল। পরে আরও ৫০ হাজার টাকা নিলেও কিছুই হয়নি। এখন টাকা হারিয়ে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।’
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য বাদশা মোল্যা বলেন, “আমার ছেলেকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা নিয়েছিল। পরে শালিসে ফেরত দেওয়ার কথা বললেও টাকা দেয়নি। বরং আরও টাকা দাবি করেছে। ভিসা দেখালেও তা ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। এরপর থেকে বাবু পলাতক রয়েছে।”
অভিযুক্ত বাবুর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে শুধু মা ও বোন ছিলেন। তারা কোনো কথা বলতে চাননি। বাবুর মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর বাবুর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাকে পাইনি। তবে মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। ছেলেকে বাড়িতে এনে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। টাকা ফেরত না দিলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খুলনা গেজেট/এসএস