খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে বাংলাদেশ সরকারের নিন্দা
  যুবদল নেতা হত্যা মামলায় কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আফজাল ৭ দিনের রিমান্ডে

আশাশুনিতে বিকল্প রিংবাঁধের কাজ শেষের পথে, স্থানীয়দের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন পয়েন্টে আধুনিক মানের জিওটিউব দিয়ে বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণ কাজ এখনো অব্যহত রয়েছে। বাঁধে জিওটিউব বসানোর দ্বিতীয় লেয়ারের কাজ শেষে এখন চলছে তৃতীয় লেযারের কাজ। তবে ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে পানি ঢোকা বন্ধ করা সম্ভব হলেও প্লাবিত এলাকায় খাবার পানির ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে।

নদী ভাঙনে আনুলিয়া ইউনিয়নের প্লাবিত এলাকায় মিষ্টি পানির আধার গুলো তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর গোসল ও গৃহস্থলীর কাজ করতে হচ্ছে নদীর লবণ পানি দিয়ে। এতে করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বানভাসি মানুষেরা। লবন পানি ব্যবহার করায় এলাকার অনেকেই ডায়েরিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের পেটের পিড়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

সরেজমিনে রোববার (৬ এপ্রিল) দুপুরে আশাশুনির বিছট গ্রামের ভাঙন পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙন পয়েন্ট থেকে ১৫০ মিটার দূর দিয়ে ৩৬২ মিটার দৈর্ঘ আধুনিক জিও টিউব দিয়ে বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। জিওটিউব বসানোর প্রথম ও দ্বিতীয় লেয়ারের কাজ শেষে চলছে তৃতীয় লেয়ারের কাজ। সোমবার নাগাদ টিউব বসানোর তৃতীয় লেয়ারের কাজ শেষে মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে টিউবের উপর মাটির কাজ। ভাঙনের পর থেকে পাউবো’র কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিনরাত পরিশ্রম করে বাঁধ নির্মাণের কাজ করছেন। একই সাথে স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাঁধ নির্মাণে সহযোগিতা করছেন।

তবে এটাকে অস্থায়ী বাঁধ হিসেবে উল্লেখ করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। বিশেষ করে বর্তমান ভাঙন থেকে আধা কিলোমিটারের মধ্যে কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে আবারও প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মল্লিক সাঈদ মাহবুব ভাঙন এলাকা পরিদর্শনকালে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।

এদিকে অস্থায়ী এ বিকল্প রিং বাঁধ নদীর বড় জোয়ারে টিকে থাকবে কিনা উৎকণ্ঠার সঙ্গে তারা পাশের গাজী, সরদার ও মোড়ল বাড়ির সামনে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে আবারও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছেন। তারা দ্রুত এই ঝুকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বাঁধ ভাঙনে প্লাবনের শিকার আব্দুস সবুর গাজী বলেন, নদীর পানিতে ঘরবাড়িতে পানি উঠায় পরিবারের সবাই মিলে পাশে ছোট ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। নদীর পানিতে বাড়ির মিষ্টি পানির পুকুর তলিয়ে গেছে। ঈদের পরের দিন থেকেই গোসল করাসহ বাড়িরসব কাজ করতে হচ্ছে লোনা পানি দিয়ে। এতে করে শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। একই সাথে খাবার পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক দূর থেকে পানি কিনে এনে পান করতে হচ্ছে।

নয়াখালী গ্রামের আতাউর রহমান বলেন, নদীভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই গ্রাম। নদীর লবন পানিতে এই গ্রামের সব বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। লবন পানিতে গোসলসহ গৃহস্থলির সব কাজ করায় গ্রামবাসীর শরীরে নানা ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। সেই সাথে রয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। অনেক দূর পায়ে হেটে গিয়ে আনুলিয়া ও কাকবসিয়া থেকে খাবার পানি আনতে হচ্ছে। জ্বর, সর্দি, কাশিসহ পেটেরপিড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে গ্রামের অনেক লোক। এককথায় খুবই কষ্টের মধ্যে আছে নয়াখালী গ্রামের বাসভাসি মানুষ।

বিছট গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন মোড়ল জানান, সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের অর্ন্তভূক্ত বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিছট-হাজরাখালী খেয়াঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর আগেই কয়েকবার এই বাঁধ ভেঙে গ্রাম পানি ঢুকেছে। তবে এবারের ভাঙন ছিল খুবই মারাত্মক ধরনের। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আরো বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়তো। পাউবো কর্মকর্তা দিনরাত পরিশ্রম করছেন ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিংবাঁধ দিয়ে নদীর পানি আটকানোর জন্য। কাজ শুরুর মাত্র তিনদিনের মধ্যে তারা খরস্রোতা খোলপেটুয়া নদীর পানি লোকালয়ে ঢোকা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বিছট গ্রামের মানুষের জানমাল রক্ষায় দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

তিনি আরও বলেন, আশেপাশের প্রতাপনগর, শ্রিউলা, আশাশুনি সদর ও শ্যামনগরের গাবুরা এবং পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অনেকবার বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সে ভাঙন মেরামত করতে অনেকদিন সময় লেগেছে। কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিছট গ্রামের ভাঙন পয়েন্ট আটকিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পাউবো কর্মকর্তারা। তবে স্থানীয় জনগণ তাদেরকে ব্যাপক সহযোগিতা করেছে। এছাড়া ভাঙনের খবরটি বিভিন্ন ইলেট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। যে কারণে সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি ভাঙন পয়েন্টে দ্রুত বাঁধ দিয়ে জনগনের জানমাল রক্ষা করায় জেলা প্রশাসন, পাউবো কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সেনবাহিনী ও সংবাদকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

পাউবো’র সেকশন অফিসার আলমগীর করির জানান, বিছট গ্রামের ভাঙন পয়েন্ট থেকে ১৫০ মিটার দূর দিয়ে ৩৬২ মিটার দৈর্ঘ্য আধুনিক জিও টিউব দিয়ে বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। জিওটিউব বসানোর প্রথম ও দ্বিতীয় লেয়ারের কাজ শেষে এখন চলছে তৃতীয় লেয়ারের কাজ। সোমবার নাগাদ টিউব বসানোর তৃতীয় লেয়ারের কাজ শেষে মঙ্গলবার থেকে টিউবের উপর মাটির কাজ শুরু করা হবে।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভাঙনের পর থেকেই আমরা ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছি। কাজ শুরু করে মাত্র তিনদিনের মধ্যেই আমরা পানি আটকাতে সক্ষম হয়েছি। শুরুতেই আমার উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদ আহমেদ, সেকশান আলমগীর কবিরসহ আমার অফিসের কয়েকজন স্টাফ আমরা বিছট গ্রামেই অবস্থান করছি। টানা তিনদিন দিনরাত পরিশ্রম করে আমরা কাজ চালিয়েছি। বিছট প্রাইমারী স্কুলের একটি কক্ষ নিয়ে সেখানে অস্থায়ীভাবে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমাদের নাওয়া খাওয়া এখানেই চলছে। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিছট গ্রামেই আছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জনগণ, বাংলাদেশ সেনবাহিনী ও জেলা প্রশাসন আমাদেরকে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল পৌনে ৯ টার দিকে পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে আব্দুর রহিম সরদারের ঘেরের বাসার পাশ থেকে প্রায় দেড়’শ ফুট এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধ হঠাৎ করে খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদীর পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ে আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট, বল্লভপুর, আনুলিয়া, নয়াখালী চেঁচুয়া ও কাকবসিয়া গ্রাম। এর মধ্যে নয়াখালী গ্রাম সম্পূর্ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বাকি গুলোর নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!