খুলনা, বাংলাদেশ | ১৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  মাদারীপুরে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ৪ যুবক নিহত
  ইসরাইলের বর্বর হামলায় ১০ দিনে ৩২২ শিশুর মৃত্যু
  ঈদের দিন ১০ জেলায় সড়কে ঝরলো ২১ প্রাণ

ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে যে কাজগুলো করবেন

লাইফ স্টাইল ডেস্ক

জীবিকার তাগিদে শত শত মানুষের ঠিকানা খুলনা শহর। এরপরেও অল্পকিছু সময় সুযোগ মিললেই নাড়ির টানে সবাই ছুটে যান গ্রামের বাড়িতে। বিশেষ করে ঈদের ছুটিটা মা-বাবার সঙ্গে কাটানোর জন্য সারা বছর ধরে দিন গুনতে থাকেন প্রতিটি কর্মজীবী মানুষ। স্বভাবতই বছরের এই সময়টাতে সবার মধ্যেই এক রকম তাড়াহুড়ো কাজ করে। ঈদের কেনাকাটা আর ট্রেন বা বাসের টিকেট ব্যবস্থা করতে যেয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শহরবাসী। এই ঝক্কি-ঝামেলায় শহরে নিজের যে ঠিকানাটি তারা ছেড়ে যাচ্ছেন তার কথা বেমালুম ভুলে বসেন অনেকেই। ছুটি শেষে আবার এই যান্ত্রিক সংসারেই ফিরতে হবে জেনেও বিষয়টি প্রতিনিয়ত নজর এড়িয়ে যায়। তাই চলুন, ছুটি কাটানোর জন্য শহরের বাড়িটি ছেড়ে যাওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নেওয়া যাক।

ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সতর্কতা

বাড়ির অভ্যন্তরে বিভিন্ন ত্রুটি যাচাই
বাড়ির মূল ফটকের লকের সমস্যা ও ভাঙা জানালার দিকে সর্বপ্রথম নজর দেওয়া জরুরি। এর সঙ্গে সময় নিয়ে খুঁজে বের করতে হবে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ও পানি সরবরাহের লাইনে কোন ত্রুটি আছে কি না। এগুলো মূলত ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক করে নেওয়া উচিৎ। উপরন্তু, বাড়ি ছাড়ার আগ মুহূর্তে চোখে পড়লে দ্রুত এগুলো মেরামতো করে নিতে হবে। অন্যথায় এড়িয়ে গেলে বা পরে ঠিক করার চিন্তা করলে খালি বাড়িতে যে কোনো অঘটন ঘটার আশঙ্কা থাকতে পারে।

চুলা, পানির কল ও বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো বন্ধ করা
শহরের বাইরে যাওয়ার জন্য বাড়ি ছাড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে এই বিষয়গুলো বারবার যাচাই করে নিতে হবে। এমনকি কোন পানির কলের প্যাচ ঢিল হওয়ার কারণে যদি ফোটায় ফোটায় পানি পড়তে থাকে তাও মেরামতো করে নেওয়া দরকার। একই ভাবে দেখতে হবে প্রতিটি ঘরের বিদ্যুৎ সুইচগুলো বন্ধ আছে কি না। টেলিভিশন, কম্পিউটার, ওভেন, রাউটার, ফ্যানের মতো বিদ্যুৎ সংযোগকৃত প্রতিটি যন্ত্রপাতি বন্ধ করে দিতে হবে। দেওয়াল এবং টেবিল ঘড়ির ব্যাটারিগুলো খুলে যথাস্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।

ফ্রিজের রক্ষণাবেক্ষণ
সবগুলো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিদ্যুৎ সংযোগমুক্ত করার সময় ফ্রিজের ব্যাপারে ব্যতিক্রম করা যেতে পারে। কেননা যেসব খাবার সময়ের সঙ্গে নষ্ট হয়ে সেগুলোকে সতেজ রাখার জন্য ফ্রিজে বিদ্যুৎ সংযোগ রাখা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে যদি ভ্রমণের আগেই পচনশীল খাবারগুলো শেষ হয়ে গেলে ভালো। সেক্ষেত্রে ফ্রিজ ছেড়ে রাখতে হবে না। এছাড়া ভ্রমণের আগের দিনগুলোতে কোনো পচনশীল খাবার না কেনাই উত্তম। বাড়ির ছাড়ার আগের সপ্তাহের খাদ্যতালিকায় ফ্রিজের অবশিষ্ট খাবারযোগ্য আইটেমগুলো রাখা যেতে পারে। অপচনশীল খাবার বা কেনার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত খেয়ে ফেলতে হয় এমন খাবারগুলো কেনা যেতে পারে অল্প করে। বের হওয়ার আগের দিন ফ্রিজের ভেতরটা ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ফ্রিজে এমন কিছু রাখা যাবে না যা পরবর্তীতে দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।

আসবাবপত্রের লকারগুলো লক করা
আলমারি, টেবিল, দেরাজ বা কেবিনেটের লকারগুলো ভালো করে চেক করতে হবে। কোনো ত্রুটি থাকলে তা ঠিক করে নিশ্চিত করতে হবে যেন সেগুলো মজবুত ভাবে বন্ধ থাকে। কেননা এগুলোতে নগদ টাকা, ডেভিট বা ক্রেডিট কার্ড, অলঙ্কার, সার্টিফিকেট সহ মূল্যবান সব জিনিসপত্র রাখা হয়। এগুলোর কোনোটাকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে টেবিল বা বিছানার উপর ফেলে রাখা একদমি ঠিক নয়।

যাবতীয় সরঞ্জামসহ রান্নাঘর পরিষ্কার করা
খাবারের পরপরই থালা-বাসন ধুয়ে রাখা হলে এই কাজটি অনেকটা এগিয়ে যায়। রান্নাঘরে প্রায় ক্ষেত্রে ফল ও সবজি স্তূপ করে রাখা হয়। এভাবে এলোমেলাভাবে না রেখে প্রত্যেকটিকে তার যথাস্থানে রাখতে হবে। এতে করে রান্নাঘরের ময়লা পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে। সিঙ্কের জায়গা, কেবিনেট, শেল্ফ ও তৈজসপত্র ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখা উত্তম। এতে করে দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ফিরে এসে নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশের সম্মুখীন হতে হবে না। একই সঙ্গে বাড়ি ফিরেই ক্লান্ত শরীর নিয়ে ধোয়া-মোছার কাজে লেগে পড়তে হবে না।

পরিধেয় কাপড় পরিষ্কার করা
ভ্রমণের জন্য ব্যাগ গোছানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যে বাড়ি ফিরে পরিধানের জন্য পরিষ্কার কাপড় আছে কি না। এছাড়া পরনের কাপড় সব স্তূপ করে রেখে দিলে তা বাজে গন্ধ ছড়ায়। সেই সঙ্গে বদ্ধ ফাঁকা ঘরে এই গন্ধ অস্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাছাড়া ভ্রমণের পর ক্লান্ত শরীর নিয়ে কাপড় ধোয়ার আর অবস্থা থাকে না। তাই এই সব ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে বাড়ি ছাড়ার আগেই কাপড়গুলো পরিষ্কার করা। নিদেনপক্ষে নিয়মিত পরিধানের কাপড়গুলো ধুয়ে শুকিয়ে আয়রন করে রাখতে হবে।

আসবাবপত্রসহ ঘর পরিষ্কার করা
বিছানার চাদর, জানালার পর্দা, ও টেবিল ক্লথ অনেক দিন হয়ে গেলে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং ঘরের পরিবেশ নষ্ট করে। আনন্দের ঈদ উদযাপন করে বাসায় ফিরে এমন অস্বস্তিকর পরিবেশের সম্মুখীন হওয়া কারোই কাম্য নয়। এছাড়া ক্লান্ত শরীরে ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে চান। তাই নিজেই নিজেকে স্বাগত জানানোর জন্য আগে থেকেই এই চাদর-পর্দাসহ প্রতিটি আসবাব পরিষ্কারের দিকটি মাথায় রাখা উচিৎ। প্রতিটি কক্ষ পরিষ্কারের সময় বাথরুম পরিষ্কারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বাথরুমে পানির কল চেক করে দেখার সময়েই এক সঙ্গে পরিচ্ছন্নতার দিকটাতেও নজর দেওয়া যেতে পারে।

ময়লার বাক্স ঘরের বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা
রান্নাঘরসহ প্রতিটি ঘরের ট্র্যাশ বক্সের সব ময়লা একটি পলিথিনে নিয়ে বাড়ির বাইরে যথাস্থানে ফেলে আসতে হবে। সারা ঘর পরিষ্কার থাকলেও শুধু ময়লায় ভর্তি ট্র্যাশবক্স ঘিরেও কীটপতঙ্গ ও ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। আর এভাবে বেশ কিছু দিন বদ্ধ অবস্থায় থাকলে সারা বাড়ি জুড়ে অস্বস্তিকর পরিবেশে সৃষ্টি হয়। তাই আগেই ট্র্যাশ বক্সগুলো খালি করে ফেলতে হবে।

ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পূর্বে এই বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া মানেই শহরের বাড়িটির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনের ত্রুটি সারানো এবং সেগুলোর সংযোগ বন্ধ রাখা বাড়িকে বিপদমুক্ত রাখার জন্য জরুরি। তদুপরি, আসবাবপত্রসহ প্রতিটি ঘর পরিষ্কার করে গেলে ফিরে এসে ফাঁকা বাড়ির জঞ্জালের ধকল সামলাতে হবে না। সব মিলিয়ে ভ্রমণের ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফেরার পর প্রশান্তিদায়ক পরিবেশ পেতে এই করণীয়গুলো অপরিহার্য।

খুলনা গেজেট/এএজে




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!