খুলনায় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বড় অংশেরই নেই নিবন্ধন। বারবার সময় দিলেও এখনও নিবন্ধনের জন্য আবেদনই করেনি ৩৪ টি প্রতিষ্ঠান। আর যারা আবেদন করেছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে জনবল নিয়োগ নিয়ে তথ্য গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব কাজে তাদের সহযোগিতা করছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। ফলে লাইসেন্স নিয়ে সরকারের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ হচ্ছে প্রতারিত।
গত ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নবায়নের কাগজপত্র জমা সর্বশেষ তারিখ নির্ধারণ করা থাকলেও এখন অবদি জমা দেয়নি অন্তত ৩৪টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন না দিলে জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের অভিযানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বন্ধের হুমকি দেয়া হলেও কার্যত তার কোন প্রভাব পড়েনি।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, খুলনা জেলায় ১৯ টি বেসরকারি হাসপাতালসহ ৩৪ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষ নবায়নের জন্য কোন আবেদন করেননি। এছাড়া খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন খুলনা মহানগরীতে ২৩২টি ক্লিনিকের মধ্যে নবায়ন রয়েছে ৭০টি। লাইসেন্স নেই ৩৯টি ক্লিনিকের। লাইসেন্স আছে কিন্তু নবায়নের জন্য আবেদন করেনি অনলাইনে এমন সংখ্যা রয়েছে ১৪টি। এছাড়া ৪৫টি ক্লিনিক আবদনের প্রেক্ষিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছে। খুলনা সিভিল সার্জন ও খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। যারা আবেদন করেছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ হাসপাতাল ক্লিনিকের প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল না থাকলেও তা অনলাইনে কাল্পনিক নাম ও আবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এসব কাজে তাদের সহযোগীতা করেছে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের কয়েকজন কর্মচারী। পরিদর্শনের সময় বিষয়টি এড়িয়ে যাওযার শর্তে অর্থ লেনদেন হয় তাদের মধ্যে।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, খুলনার ৯ উপজেলায় অবস্থিত ১৯টি ক্লিনিক নবায়নের জন্য পুনরায় কাগজ-পত্র জমা দেননি সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকগুলোর মালিকরা। এর মধ্যে রয়েছে দিঘলিয়া উপজেলার মধ্যে ফুলবাড়ীগেট অবস্থিত মৈত্রি নার্সিং হোম, পেসেন্ট নার্সিং হোম, তেরখাদা উপজেলার মধ্যে ইন্দুরহাটী এলাকার পাতলা কমিউনিটি হাসপাতাল, সাচিয়াদাহে কমিউনিটি হাসপাতাল, কাটেঙ্গা বাজার এলাকায় স্বপ্ন সিঁড়ি প্রাইভেট হাসপাতাল লি: এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, রূপসা উপজেলার তিলক এলাকায় রেভা: আব্দুল ওয়াদুদ মেমোরিয়াল হাসপাতাল (১০০ শয্যা), জাবুসা চৌরাস্তায় নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ডুমুরিয়া উপজেলার মিকশিল রোডে জনসেবা ক্লিনিক, চুকনগর বাজার এলাকায় চুকনগর সার্জিক্যাল ক্লিনিক এ- ডায়াগনস্টিক, বটিয়াঘাটা উপজেলার জিরো পয়েন্টে সুন্দরবন ক্লিনিক এ- নার্সিং হোম, এম আর সেন্ট্রাল হাসপাতাল, হাটবাঢী এলাকায় সোনালী ক্লিনিক এ- ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পাইকগাছা উপজেলার সরল এলাকায় (নতুন) পলক ক্লিনিক এ- ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাকা বাজার এলাকায় আশালতা ক্লিনিক এ- তুলি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এম মনোয়ারা হাসাপাতাল, মনোয়ারা ক্লিনিক, কয়রা উপজেলার আমাদী এলাকায় পাইলট সার্জিক্যাল হাসপাতাল, মদিনাবাদ ১নং কয়রা এলাকায় সাগর নার্সিং হোম ও রায় ক্লিনিক। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ওই সব ক্লিনিকগুলো অধিকাংশই নবায়ন শেষ হয়েছে ৩ বছর, কারো ২ বছর আবার কারোর নবায়নের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তারা কেউ পুনরায় লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেননি।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা এ প্রতিবেদককে জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নবায়নের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো। এরপরও যে সকল প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছে অথবা আবেদন করেননি, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। অনিবন্ধিত কোন প্রতিষ্ঠান খুলনায় চলতে পারবে না।
খুলনা সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনা জেলায় অবস্থিত যেসব ক্লিনিক বা ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোর নবায়ন নেই বা পুনরায় নবায়নের জন্য কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য তাদেরকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো। এর মধ্যে সেব প্রতিষ্ঠান আবেদন করেনি। সেসব স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি চিঠির মাধ্যমে বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
খুলনা গেজেট / এমবিএইচ /এমএম