মোবাইল ফোন গ্রাহকদের সবচেয়ে জনপ্রিয় তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজের যে দাম ছিল, সাত দিন মেয়াদি প্যাকেজেও সেই একই দাম নিতে অপারেটরদের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রাত ১২টার মধ্যে বিটিআরসির এ নির্দেশ কার্যকর হওয়ার কথা।
মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএম রেজাউর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অপারেটরদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
চিঠিতে বলা হয়, নতুনভাবে প্রচলন করা বিভিন্ন মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ, হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তাই তিন দিনের প্যাকেজের যে দাম ছিল, সেই দামেই সাত দিনের মেয়াদ দিতে হবে। দাম বাড়ানো যাবে না। সিদ্ধান্তটি ১০ নভেম্বর রাত ১২টার মধ্যে কার্যকর করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।
অপারেটরদের অসন্তুষ্টির মধ্যেই বিটিআরসির নির্দেশে ১৫ অক্টোবর থেকে তাদের ইন্টারনেট গ্রাহকদের জন্য তিন দিন ও ১৫ দিনের ডেটা প্যাকেজ বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে তিন দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করত প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি জানিয়েছিল, তিন দিন মেয়াদে গ্রাহকরা যে পরিমাণ ডেটা পেত, সেই পরিমাণ ডেটা একই দামে কিনে সাত দিন ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু তা হয়নি। মোবাইল অপারেটরা এর দাম দেড়গুণ বাড়িয়ে দেয়।
গ্রামীণফোনের তিন মেয়াদের এক জিবি ডেটার সর্বশেষ দাম ছিল ৪৬ টাকা। নতুন সাত দিন মেয়দে এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯ টাকা। মোবাইল অপারেটর রবি ও বাংলালিংক একই হারে দাম বাড়িয়েছে।
মোবাইলের ডেটা প্যাকেজ নিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর নতুন একটি নির্দেশিকা চূড়ান্ত করে বিটিআরসি। এতে ডেটার ৩ ও ১৫ দিন মেয়াদি প্যাকেজ বন্ধ, প্যাকেজের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪০টি নির্ধারণ করে তা ১৫ অক্টোবর থেকে মোবাইল অপারেটরদের কার্যকর করতে বলা হয়।
এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত এক সভায় মোবাইল ফোন অপারেটরদের ডেটা ও ডেটাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্যাকেজের নতুন এ নির্দেশিকার উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
কিন্তু এ ব্যবস্থার ফলে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকদের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ৫ নভেম্বর বিটিআরসির কার্যালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, ওই সময় মন্ত্রী মোবাইল ইন্টারনেটের দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইন্টারনেটের দাম বাড়ুক, সেটা তিনি চান না।
এরপর বিটিআরসি থেকে মোবাইল অপারেটরদের চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, তিন দিন মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম ও পরিমাণ (ভলিউম) অপরিবর্তিত রেখে শুধু মেয়াদ বাড়িয়ে সাত দিন করার কথা বলা হয়। অর্থাৎ মেয়াদ বাড়ানো হলেও প্যাকেজের দাম বাড়ানো যাবে না। ৩০ দিন ও অনির্দিষ্ট মেয়াদের প্যাকেজের দামও বাড়ানো যাবে না।
বিষয়টি নিয়ে গ্রাহকদের পক্ষে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বৃহস্পতিবার ঢাকার ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শুধু নির্বাচন উপলক্ষে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ। সংগঠনটি তিন দিনের স্বল্পমেয়াদি সব প্যাকেজ বহাল এবং গত এক মাসে গ্রাহকদের বাড়তি ব্যয় সমন্বয়সহ ছয় দফা দাবি জানায়।
খুলনা গেজেট/কেডি