বন্ধ করে দেয়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের অর্থ প্রদান শুরু হচ্ছে আজ, মঙ্গলবার। প্রাথমিকভাবে করিম জুট মিলের ১ হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের চেক প্রদানের মাধ্যমে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ শুরু করবে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। করিম জুট মিলে এ কার্যক্রম শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে খুলনাসহ সারাদেশের পাটকল শ্রমিকদের পাওনা দ্রুতই পরিশোধ করবে সংস্থাটি।
বিজেএমসির খুলনার আঞ্চলিক সমন্বয়ক মোঃ গোলাম রব্বানী বলেন, মঙ্গলবার করিম জুট মিলের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের মধ্যদিয়ে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের চেক প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তিনটি পাটকলে এ অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। যার মধ্যে খুলনা জোনের একটি মিল রয়েছে। আর চলতি মাসে খুলনার ৭টি পাটকলের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করার চেষ্টা চলছে।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কারখানা প্রাঙ্গণে সরাসরি নির্বাচিত শ্রমিকদের এ চেক প্রদান করবেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত ৬১২ জন শ্রমিক ও বদলি শ্রমিকের ২ হাজার ৬২৫ জনকে তাদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। পর্যায়ক্রমে সব কারখানার এ ধরনের শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করা হবে। চলতি মাস কিংবা আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে, এমনটাই বলছেন বিজেএমসির কর্মকর্তারা।
বিজেএমসি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ বলেন, শ্রমিকদের সব ধরনের বকেয়া আমরা সময়মতো পরিশোধে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছি। বিজেএমসির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার করিম জুট মিলের ৩০ জন শ্রমিককে সরাসরি চেক প্রদানের মাধ্যমে অবসায়ন কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। অন্য পাটকলগুলোতেও দ্রুত কার্যক্রম শুরু করতে পারব বলে আশা রাখছি। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গেই আলোচনা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন প্রতিদিনই প্রতিটি মিল ধরে ধরে কার্যক্রম শেষ করে শ্রমিকদের পাওনা তাদের ব্যাংক হিসাবে পরিশোধ করা হবে।
জানা গেছে, অবসায়নের পর মিলগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে পিপিপি, যৌথ উদ্যোগ, জি টু জি বা লিজ মডেলে পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হবে। নতুন মডেলে পুনঃচালুকৃত মিলে অবসায়নকৃত বর্তমান শ্রমিকরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবেন। এরই মধ্যে কারখানাগুলো চালুর বিষয়ে বেসরকারি উদ্যোক্তারা আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাদের আগ্রহ ও বিজেএমসির নীতি কাঠামোর মধ্যে সমন্বয় করে এগুলো দ্রুত চালুর বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। নোটিশ মেয়াদের, অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের ৬০ দিনের মজুরি এরই মধ্যে পেয়েছেন শ্রমিকরা। প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ), গ্র্যাচুইটি, গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধাসহ সমুদয় পাওনার ৫০ শতাংশ নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে এবং বাকি ৫০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করা হবে। এরই মধ্যে শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর বিজেএমসির হাতে পৌঁছেছে।
লোকসান থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর ২৪ হাজার ৮৮৬ স্থায়ী শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের (স্বেচ্ছা অবসরে) মাধ্যমে অবসরে পাঠানো হচ্ছে বলে গত ২৮ জুন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী। ১ জুলাই থেকে বিজেএমসির ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ এবং শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে সভার পর গত ২ জুলাই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বন্ধ ঘোষণা করা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রতি শ্রমিক গড়ে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন। সরকার তাদের পাওনার অর্ধেক নগদে পরিশোধ ও বাকি অর্ধেক টাকার সঞ্চয়পত্র দেবে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, পাটপণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও পুনর্বিন্যাস করে বিজেএমসির বন্ধ মিলগুলো জরুরি ভিত্তিতে ফের চালু করা হবে। এজন্য মিলগুলোকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি), যৌথ উদ্যোগ জিটুজি বা লিজ মডেলে পরিচালনার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব আবার উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
খুলনা গেজেট / এমএম