গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে এবং অমাবস্যার প্রবল জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত করায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরার উপকূলের চারটি ইউনিয়ন। এর মধ্যে অশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়ন এখন পানিতে ভাসছে। মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও শ্যামনগরের গাবুরা এবং পদ্মপুকর ইউনিয়ন গত বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে প্লাবিত এসব এলাকার মানুষ।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও অমাবস্যার কারনে নদ-নদীতে অস্বাভাবিক ভাবে জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় পানির চাপে গত ২০ আগষ্ট
বৃহস্পতিবার দুপুরে সদ্যনির্মিত রিংবাঁধ ভেঙ্গে ও আগের ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে পানি ঢুকে সাতক্ষীরার আশাশুনির তিনটি ও শ্যামনগর উপজেলার একটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়ে পড়ে। গাছ পালা কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়ার পাশাপাশি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এসব এলাকার অনেক জায়গায় বিদ্যুতের খুটিও হেলে পড়েছে। অনেক স্থানে আবার ছিড়ে পড়েছে বিদ্যুতের তার। ফলে ভয়াবহ এই দুর্যোগের সাথে চারটি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চরম বিপাকে পড়েছে মানুষ।
শ্রীউলা ইউনিয়নের পুঁইজালা গ্রামের তরুণ কান্তি সরকার বলেন, বুধবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয় এবং অমাবস্যার কারণে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আম্পানে ভেঙ্গে যাওয়া পয়েন্টে দেওয়া রিংবাঁধ গুলো ভেঙ্গে পুরো এলাকায় পানি থই থই করছে। ২২টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও একটু দাঁড়াবার জায়গা নেই। অনেকের ঘরের মধ্যে মধ্যে পানি, ফলে অনেক পরিবার না খেয়ে জীবন যাপন করছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে পুরো ইউনিয়নে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
মাড়িয়ালা গ্রামের গোপাল সরকার বলেন, ঘরের মধ্যে পানি, রান্না করার জায়গা নেই। এতদিন রাইস কুকারে রান্না করে খাচ্ছিলাম। গত বৃহস্পিবার থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় তিন দিন ধরে শুকনো খাবার খাচ্ছি। খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন বলেন, মানুষর নিরাপত্তার স্বার্থে গত বৃহস্পতিবার থেকে ইউনিয়নের নাকনা এলাকা ছাড়া ইউনিয়নের বাকি সব এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে। বিদ্যুৎ দেওয়ার সুুযোগ নেই। আম্পানের পর থেকে ডুবে ছিল কিছু এলাকা। কুড়িকাহুনিয়া পয়েন্টের রিংবাধ ভেঙ্গে ও পাশের একাধিক পয়েন্ট ছাপিয়ে ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের মধ্যে ২০টি গ্রাম পাবিত হয়েছে। এখানের ৪০ হাজার মানুষের ৩৬ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি।
সাতক্ষীরা পলী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী সন্তোষ কুমার সাহা বলেন, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় দুই এমপি, জেলা প্রশাসক এবং আরইবির সঙ্গে কথা বলে উপকূলের চারটি ইউনিয়নের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে আশাশুনির প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়ন এবং শ্যামনরের গাবুরা এবং পদ্মপুকুর ইউনিয়ন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে। পানি না সরলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম