খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৪৫
  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

ইভটিজিং : মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে, ছেলেরা শিষ বাজাচ্ছে

ডা. সাদিয়া মনোয়ারা উষা

আমাদের দৃশ্যপটে ইভটিজিং বলে এই দৃশ্যটি সবার আগে মনে পড়ে।
কিন্তু ইফটিজিং কি শুধুমাত্র এর মধ্যে সীমাবদ্ধ??
আমাদের অনেকেরই এই ব্যাপারে ভুল হয়ে যায়।

অফিসে কোনো নারী সহকর্মীকে দায়িত্ব দেওয়ার সময় বললেন,”অফিসার হক যাই হোক মেয়ে মানুষ , মেয়ে মানুষের আবার বুদ্ধি !” -এটি ইভটিজিং।

পরিবারে বাবা ঠাট্টাচ্ছলে বাচ্চাদের বোঝালেন “তোমার মা মাথামোটা ,সবকিছু কম বুঝে “-এটা ইভটিজিং

মুদির দোকানে মহিলা টাকা-পয়সার হিসাবে করেছেন পাশ থেকে আপনি বলে উঠলেন “মাইয়া মানুষ এসব ব্যবসা না কইরা….!!”-ইভটিজিং

মহিলা সিট খালি না থাকায় মহিলা থেকে উঠতে দিলেন না তার কাজের জায়গায় দ্রুত তাকে পৌঁছে দিলেন না -ইভটিজিং

রাতে অকারণে হোয়াটসঅ্যাপে অপিরিচিত নাম্বার থেকে বারবার কল আসছে ,অশালীন মন্তব্য আসছে, অশালীন ছবি পাঠানো হচ্ছে, হয়তো অস্বস্তিতে মেয়েটির সারা রাত ঘুমই হচ্ছে না -ইভটিজিং

শহরের কর্পোরেট অফিসে মেয়েদের যোগ্যতার দিকে ছুড়ে দেওয়া মন্তব্য থেকে শুরু করে বস্তিতে মেয়েদের জন্য ‘ম’ বর্গীয় অসৌজন্যমূলক গালি – ইভটিজিং

♀️বাংলাদেশের আইন অনুসারে যে সকল কাজ ইভ টিজিং এর পর্যায়ে পড়বে, সেগুলো হচ্ছে-

১.প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করা,
২. অশ্লীল গান গাওয়া,
৩. কারো নারীর শ্লীলতা হানীর উদ্দেশ্যে কোন কথা, কাজ বা অঙ্গ ভঙ্গী করা ,
৪. অশ্লীল ভাবে কোন নারীর সামনে নিজের শরীর উপস্থাপন করা ,
৫. কোন নারীর পথ আটকে দাঁড়ান ,
৬. অশ্লীল কোন আওয়াজ করে কোন নারীকে বিরক্ত করা
৭.রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ধাক্কা দেওয়া
৮.উচ্চস্বরে নাম ধরে ডাকা বা বিকৃত ভাবে নাম ধরে ডাকা
৯.ব্যক্তিত্ব হানি হয় এমন মন্তব্য করা
১০.কিছু ছুঁড়ে দেওয়া
১১.ইংগীত পূর্ণ ইশারা করা
১২.সিগারেটের ধোঁয়া গায়ে ছাড়া
১৩.উদ্দেশ্যমূলকভাবে পিছু নেওয়া
১৪.প্রেমে সাড়া না দিলে হুমকি প্রদান।
১৫.যোগ্যতা নিয়ে টিটকারি করা
১৬.মুঠোফোনে whaus app, Facebook এ Comment ,imo, messager,ইমেইলএর মাধ্যমে অশ্লীল বার্তা পাঠানো।

উপরের কাজগুলো ঘরে বা বাইরে যেখানেই করুক না কেন তা ইভটিজিং এর আওতায় পড়বে এবং এর জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

♀️আইনে শাস্তি সমূহ
এখন দেখে নেই প্রচলিত আইনে ইভ টিজিং এর শাস্তিগুলো কি?-

১. “দণ্ডবিধির আইনের ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি অন্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করে, কোনও প্রকাশ্য স্থানের কাছাকাছি কোনও অশ্লীল কাজ করে অথবা কোনও প্রকাশ্য স্থানে কোনও অশ্লীল গান, গাথা সংগীত বা পদাবলি গায়, আবৃত্তি করে বা উচ্চারণ করে; সেই ব্যক্তি #তিনমাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।“

২.”দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় এ বিষয়ে স্পষ্ট বিধান আছে। এ ধারায় বলা আছে, যদি কেউ কোনও নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কথা, অঙ্গভঙ্গি বা কোনও কাজ করে, তাহলে দায়ী ব্যক্তিকে #এক_বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সাজা বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।”

৩.প্রকাশ্যে বা বাসায় যে কোন স্থানে অশ্লীল অঙ্গ-ভঙ্গী করলে #১বছর_পরিমাণ_কারাদণ্ড_বা_২_হাজার_টাকা পরিমাণ অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে-

৪. যে কোন ধরনের অশ্লীল আচরণ এ হতে পারে #তিনমাস_কারাদণ্ড_বা_৫০০টাকা_অর্থদণ্ড

৫. ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন অনুযায়ী, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে কোনও অপরাধ হয়ে থাকলে তখনই অপরাধ আমলে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি দিতে পারবেন। এই আইনে শাস্তি হবে #সর্বোচ্চ_দুই_বছর।

♀️ইভটিজিং হলে কি করবেন?

১. আপনার সাথে যদি এমন কোন ঘটনা ঘটে তবে প্রথমেই মানসিকভাবে শক্তি রাখবেন। পরিস্থিতি অনুকূলে হলে নিজ থেকে তাৎক্ষণিক বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।পরিবারকে জানান। কোন মা-বাবাই মেয়ের অসম্মান মেনে নেন না। মনের দোটানা ,লোকে কি বলবে ,পরিবারের অন্যরা কি ভাববে এই জন্য সারারাত বালিশে চোখ ভেজাবেন না।

২. দ্রুত নিকটস্থ থানায় জানান বা লিখিত অভিযোগ করুন। যতদূর জানি এখানে সাক্ষীর ব্যাপারটি এতটা মুখ্য নয়। পরিস্থিতি এমন হতে পারে আপনার সাথে যা ঘটেছে তার সাক্ষী কেবলমাত্র আপনিই,সেক্ষেত্রেও মনোবল হারাবেন না।

পুলিশও ইচ্ছা করলে বাদী হয়ে মামলা করতে পারবেন। যে জায়গায় যাবেন সেখানকার পুলিশ অফিসারের ফোন নম্বর সংগ্রহে রাখুন। নিচের ওয়েবসাইটের লিংকে বিভিন্ন জায়গার পুলিশ অফিসারদের ফোন নম্বর পাবেন-
http://www.dhaka.gov.bd/node/1124329

#পুলিশ_যদি_অভিযোগ_না_নেয় তবে সরাসরি আদালতে মামলা করা যাবে।

আশে পাশে যদি #ভ্রাম্যমান_আদালতের কার্যক্রম থাকে তবে তা ভ্রাম্যমান আদালতকে জানান। দ্রুত প্রতিকার পাবেন।

ঘটনা ঘটার সময় অপরাধী ও ঘটনাস্থল সম্পর্কে যতটা সম্ভব তথ্য মনে রাখার চেষ্টা করুন। যদি অপরাধির নাম ঠিকানা জানা থাকে তবে পুলিশকে তা সঠিক ভাবে জানান। আর অপরাধী যদি অপরিচিত কেও হয় তবে তার চেহারা ও পোশাক এর যথাসম্ভব সঠিক বর্ণনা দিন।

৩. ঝুঁকি পূর্ণ জায়গা ও ঝুঁকি পূর্ণ মানুষ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। তবে আমার মনে হয় আপেক্ষিক শব্দ।কর্মক্ষেত্র বা পারিবারিক জীবন যেকোনো জায়গায় আপনি টিজিংয়ের শিকার হতে পারেন।

৪. আপনি কোথায় আছেন তা সবসময় পরিবারকে জানিয়ে রাখুন। মোবাইল ফোনে অনেক এলার্ট অ্যাপস রয়েছে। সমস্যায় পড়লে দ্রুত অ্যাপস গুলোর মাধ্যমে পরিবারকে আপনার ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত করতে পারেন।

৫. আপনার আশে পাশে যদি অন্য কারো সাথে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেন তবে সাহায্য করতে এগিয়ে যান। আইনি সহায়তা পেতে ভুক্তভোগী কে সহায়তা করুন। শুধু ফোনে ভিডিও করতে ব্যস্ত থাকবেন না। আপনার পাশে কেউ এগিয়ে যেতে গেলে তার হাত ধরে টান দিয়ে বলবেন না এসব ঝামেলায় কেন যাব? আপনার ও আপনার পরিবারের সাথেও হতে পারে কিন্তু।

৬. তবে কাওকে হয়রানী করার জন্য বা প্রতিশোধ নেবার জন্য এমন কোন মামলা করবেন না। তাহলে কিন্ত উলটো ফেঁসে যাবেন।

৭. আপনি যেই হোন না কেন দুর্বল কোন নারীকে উত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এসব থেকেই যদি আত্মহত্যা, খুন, ধর্ষণ এর ঘটনা ঘটে তবে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় শাস্তি কিন্তু অনেক বেশি।

এবার ভেবে দেখুন আমরা মেয়েরা প্রতিদিন হাজার হাজার ইভটিজিং এমনিই সয়ে যাই।

স্ত্রী যদি তার স্বামীর ইভটিজিং মূলক কথা গুলো ধরে তাকে দণ্ডবিধির আওতায় আনতে তাহলে কত স্বামীর শাস্তি হতো কে জানে? এতে স্ত্রী নমনীয় নয় ,সংসার ধরে রাখতে পারেনা, সংসারী নয় , অতঃপর নিশ্চয়ই অন্য কোন পর পুরুষের সাথে সম্বন্ধে শুরু হয়েছে এরকম আর কি কি বলা যেত বলুন তো?

অফিসের মহিলা কর্মকর্তা যদি তার বিরুদ্ধে ইভটিজিং মূলক কথা গুলোকে নিয়ে মাঠে নামতো তাহলে এসব নিয়ে আরো কত মুখরোচক গল্প বানানো যেতো বলুন? একজন মহিলা অফিসার কে রোজ যে পরিমাণ চারিত্রিক সততার পরিচয় দিতে হয় একটা পুরুষ সহকর্মী কি এরকম অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে থাকেন?

যে মেয়েটি ভয়ে কাউকে বলতে পারেনা তাকে হোয়াটসঅ্যাপে কি সব নোংরা ছবি অশ্লীল ইঙ্গিত করা হয়েছে সে যদি তার এইসব কমেন্ট নিয়ে সাইবার ক্রাইমে আইনি সহায়তা নিতো তাহলে আপনার রাতের ফুর্তি গুলো কোথায় যেতো??

সর্বশেষ বান্ধবীর কাছ থেকে শোনা গল্প,ছেলে দেখতে এসেছে, বললেন আপনি তো কর্মজীবী মহিলা ,এসব মেয়েরা সংসার ধরে রাখতে পারে না আপনার কি তাই হবে?? যোগ্যতা নিয়ে ধিক্কার! ইভটিজিং এর সংজ্ঞায় আপনি কত সুন্দর করে প্রথম দিনেই দেখতে যাওয়া মেয়েটিকে ইভটিজিং করে আসলেন।

যুগের সাথে ইভটিজিং তার গতি প্রকৃতি ধারণা বদলেছে। বদলায়নি আমাদের মানসিকতা গুলো ।

আসুন, একটু বদলাই আমরা সবাই।
আমাদের কোন ছেলে যখন কোনো মেয়ের যোগ্যতা ফিগার গাণিতিক হিসাবের আওতায় ফেলে বিচার বিবেচনা করে, তখন ওই ছেলের এই কাজগুলোর ব্যাপারে আইনের ধারাগুলোর গাণিতিক হিসাব ও যেন আমাদের মেয়েদের মনে থাকে।

 

লেখকঃ ডা. সা‌দিয়া ম‌নোয়ারা উষা

ইনডোর মে‌ডি‌কেল অ‌ফিসার (গাই‌নি এন্ড অবস‌),

খুলনা মে‌ডি‌কেল ক‌লেজ হাসপাতাল।

খুলনা গেজেট/টি আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!