মানুষ ভুল করে। কখনো শয়তানের ধোকায়, কখনো নফসের তাড়নায়, কখনো বন্ধুর পাল্লায় পড়ে, কখনো বা পরিবেশ পারিপাশির্^কতার কারণে। তবে সুস্থ বিবেক তাকে তাড়া করে, দংশন করে, অনুশোচনার আগুনে সে পুড়তে থাকে। ভিতরটা কুড়ে কুড়ে খায়। সেই অপরাধ আবারও ঘটে যায় ইচ্ছায়, কখনো অনিচ্ছায়। একসময় অপরাধের ঝুলি এত ভারী হয়ে উঠে যে, নিচে চাপা পড়ে এক কূলহীন হতাশায় ডুবে যায় মানুষ।
আল-কুরআন তোমাকে বাঁচাতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে…
মানুষ তুমি হাল ছেড় না। দয়ামায় মালিকের দরবার থেকে দূরে যেও না। মালিককে পর মনে করোনা। যদি দূরে যাও, ‘আমি মুক্তি পাবনা’ মনে করে আরেক ধোকায় পড়; তাহলে তুমি আবার পথভ্রষ্ট হবে وَمَنْ يَقْنَطُ مِنْ رَحْمَةِ رَبِّهِ إِلَّا الضَّالُّونَ যে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় সে পথভ্রষ্ট হয়। সুরা হিজর ৫৬।
তোমার অন্যায়-অপরাধ চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে ? হতাশায় ভুগছো ? ভাবছো আমার মুক্তির হয়তো কোন উপায় নেই ? কুরআন তোমাকে সান্তনা দিচ্ছে, এসো! তোমার উপায় বলে দিচ্ছি لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। হতাশ হয়ো না।
আল্লাহর নাফারমানী করে করে তুমি ক্লান্ত ? নফসের বিষাক্ত ছোবলে তুমি ক্লিষ্ট ? এক চাপা ব্যাথা নিয়ে বিবেকের দংশনে তুমি পিষ্ঠ ? পুরো জীবনটাকে গুনাহে ডুবিয়ে রেখেছ ? সব দুয়ারে আজ তুমি অবহেলিত ? ভাবছো! সব শেষ হয়ে গেছে ? হয়তো আর মুক্তি নেই ? কুরআন তোমাকে মায়াবী পরশ বুলিয়ে কাছে ডাকছে; এসো বান্দা! দুনিয়ার সবাই তোমাকে ফিরিয়ে দিলেও আমি তোমাকে ফিরাবো না। ডাক দিয়ে বলেন يَاعِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ হে আমার বান্দারা, যারা সঠিক পথে না চলে নিজেদের উপর জুলুম করেছ, আল্লাহর দয়া থেকে তোমারা নিরাশ হয়োনা। إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তোমার সব গুনাহ/অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন, তিনি ক্ষমাকারী এবং দয়ালু। (সুরা ঝুমার ৫৩)
এই দরদী বাণী শোনার পরও বান্দার সংশয় দূর হয় না। এখন তো তওবা করলাম। অনুশুচনা হলো। অবাধ্যতা থেকে ফিরে এলাম কিন্তু আমার থেকে আবারও তো নাফারমানী হতে পারে। শয়তানের জালে আবার আটকে যেতে পারি। পাপের আকর্ষণ আর নেশা আমাকে আবারও সেদিকে টানতে পারে, তার প্রতিরোধের ব্যবস্থা কি ? কুরআন তোমরাকে হাত ধরে পথ দেখিয়ে দিচ্ছে وَأَنِيبُوا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ এসো! তোমার রবের দেখানো পথে ফিরে এসো এবং তার কাছে আত্মসমর্পণ করো। (সুরা ঝুমার ৫৪)
দুনিয়ার মানুষ যদি তার মলিকের/বসের অবাধ্য হয়, মালিক তাকে শাস্তি দিয়ে বা না দিয়ে, মাফ করে দিল বা শুধরে নিল। তারপরও মালিকের সামনে যেতে এই মানুষটা লজ্জা পায়। মালিকও মাঝে মাঝে তাকে খোটা দেয়, বাকা চোখে তাকায়। মানের সংকোচ যেন সহজে দূর হয় না।
আমাদের রব একদম ব্যতিক্রম। মালিক আমাদেরকে ডেকে বলেন-বান্দা! বোধহয় তুমি এখনো আমাকে চিনতে পারোনি! উলঝান ঝেড়ে ফেল। সংকোচ দূর কর। মনকে পরিস্কার করে ফেল। আমার ব্যাপারে তোমার ধারণা সঠিক কর। ইতিবাচক মানষিকতা তৈরি কর। সন্তান ভুল করে পিতা-মাতার কাছে ফিরে এলে তাঁরা যেমন খুশি হয়, বান্দা ভুল করে ফিরে এলে আমি তার থেকে অনেক বেশি খুশি হই إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে/ভুলের অনুুশোচনাকারীকে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালবাসেন। সুরা বাকারা ২২২।
আসুন! নিজেকে বদলে ফেলি। রবকে চিনতে শিখি। রবের কালামকে বুকে লাগাতে শিখি।