খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

একজন বহুমাত্রিক শিক্ষক, বি করিম স্যার

শেখ দিদারুল আলম

প্রায় এক শতাব্দীর ইতিহাস শেষ হলো। চলে গেলেন খুলনা তথা বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনের প্রাণপুরুষ বিএল কলেজের ইতিহাস, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সহ অনেক পুস্তকের রচয়িতা প্রফেসর বজলুল করিম স্যার, যিনি বি. করিম স্যার নামে সমাধিক পরিচিত। আজ শুক্রবার সকাল সাতটায় খুলনার দৌলতপুরের পাবলায় নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। তিনি কয়েক মাস যাবত অসুস্থ ছিলেন।

অত্যন্ত সাদাসিদে এই মানুষটি সবসময় হাসিমুখে থাকতেন এবং অতি সহজে সকলকে আপন করে নিতে পারতেন। দর্শনের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তার পরিধি ছিল ব্যাপক। ১৯৬২ থেকে ১৯৯৬ সাল অবধি বিএল কলেজে শিক্ষকতা করার সুবাদে তার আগে ও পরে সকল ছাত্র ও শিক্ষকের সঙ্গে ছিল তার ছিল মধুর সম্পর্ক। বি. করিম স্যার তার পঠিত বিষয়ের উপর ১৪/১৫ টি পুস্তক লিখেছেন। আর বিএল কলেজের ইতিহাস সহ খুলনা এলাকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইতিহাস নিয়ে দশটির অধিক ইতিহাস সমৃদ্ধ পুস্তক রচনা করে আমাদের খুলনার ইতিহাসকে সমৃদ্ধশালী করেছেন।

ওপার বাংলার নদীয়া জেলার চেচানিয়ার দেওয়ানের পাড়ায় ১৯৩৮ সালে ১১ এপ্রিল পিতা রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা রফিজ উদ্দিন বিশ্বাস ও মাতা বিধুজান নেছার ঘরে জন্ম নেয়া এই ইতিহাসবিদ ও শিক্ষক অমৃত্য খুলনা ও দৌলতপুরের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করে গেছেন।

বি এল কলেজের ইতিহাস লেখার সময় স্যারকে কাছ থেকে দেখেছি ইতিহাস যেন নির্ভূল হয় সেজন্য কত সাবধানতা অবলম্বন করেছেন। আবার তথ্য সংগ্রহের জন্য কতনা ছুটে ছুটে বেড়িয়েছেন। আজ তার কারণে আমাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিএল কলেজের উপর একটা ইতিহাস আছে।

বিএনসিসি’র মেজর বি. করিম স্যার পারিবারিক জীবনেও সফল ছিলেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে আজ নিজ নিজ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। বড় ছেলে রানা এজাজ করিম ও ছোট ছেলে বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল খেলোয়াড় রুমী রিজভী করিম। বি. করিম স্যার একাধারে দার্শনিক সাহিত্যিক ইতিহাসবিদ, অন্যদিকে ক্রিড়া প্রেমিক মানুষ। বি এল কলেজে শিক্ষকতা করার সময় তিনি কলেজের / শিক্ষাবোর্ড/ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল খেলা পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকায় থাকতেন। এমন কি যখনই সময় পেতেন আর একজন দার্শনিক প্রফেসর ভগবতী স্যারকে সাথে নিয়ে খুলনা স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসতেন।

বছরটার কথা আমার মনে নেই, খুলনা স্টেডিয়ামে মুসলিম ক্লাব ও আবাহনী ক্রীড়া চক্রের ফুটবল খেলা। জাতীয় ফুটবল খেলোয়াড় আসলাম ও রুমী (স্যারের ছেলে) আবাহনীর হয়ে মাঠে নেমেছে। আমি স্যারের কাছে খেলা শেষে জানতে চাইলাম কার খেলা পছন্দ হয়েছে। তিনি উত্তর দিলেন আসলাম। এথেকে বোঝা যায় তিনি সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারতেন।

আমি বিএল কলেজে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকাকালীন স্যারের সহযোগিতা ভুলবার নয়। দুই বছর আগে স্যারের বাসায় গেলে তিনি একটা ব্যাগ বের করে দেখালেন তুমি এটা আমাকে দিয়েছিলে, স্মৃতিস্বরূপ রেখে দিয়েছি। স্যারের সঙ্গে দেখা হলেই আমি আগে কখনো সালাম দিতে পারিনি। তিনি আগে সালাম দিতেন।

তিনি প্রায়ই তার প্রিয় ছাত্র রাজনীতিবিদ স ম বাবর আলী ভাইয়ের খবর জানতে চাইতেন। আমাদের সময়কার যারা কলেজে পরিচিত ছিলেন তাদের খবর নেওয়ার চেষ্টা করতেন। রাজনীতিবিদ ও কলেজের সাবেক ভিপি ফিরোজ আহমেদের ইন্তেকালে তিনি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। তিনি মতিয়ার রহমান মতি, আসাদুজ্জামান রিপন, কামাল আহমেদ, মরহুম শেখ বেলালউদদীন, জহির উদদীন স্বপন, অধ্যাপক গোলাম পরোয়ার, শাহ আলম, আহাদ আলী, ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, নজরুল ইসলাম মনজু, মরহুম মেহেদী মোজাম্মেল সহ অনেকের খবর জানার চেষ্টা করতেন। কারো ভালো খবর শুনলে আনন্দ পেতেন, আর খারাপ খবর শুনলে সমবেদনা জানাতেন।

যতদুর জেনেছি সব সময় লেখাপড়া নিয়ে পড়ে থাকতেন।
তাকে হারিয়ে খুলনা হারালো একজন ঐতিহাসিককে, আর আমরা ছাত্ররা হারালাম আমাদের অভিভাবককে। আল্লাহ স্যারকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!