খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত
  সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেন মারা গেছেন
  নওগাঁয় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত
  যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

সাতক্ষীরায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট, ছোট-মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

আর মাত্র কয়েকদিন পরেই মুসলিম স¤প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। ধর্মীয় ঐতিহ্য ও ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে আগামী ১০ জুলাই ঈদুল আযহা উপলক্ষে পশু কোরবানি করবেন মুসলিম স¤প্রদায়ের ধর্মপ্রান মানুষ। আর এই কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে সাতক্ষীরায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট।

সাতক্ষীরায় সব চেয়ে বড় পশুর হাট বসে দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ায় বাজারে। দ্বিতীয় বৃহত্তম হাট বসে সদর উপজেলার অবোদের হাটে। সপ্তাহে একদিন রোববার পারুলিয়ার হাট বসলেও সপ্তাহে দু’দিন শনিবার ও মঙ্গলবার আবাদেরহাটে পশু কেনা-বেচা হয়। এছাড়া শ্যামনগর, ধুলিহর, কলারোয়া ও তালা সহ বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয়ভাবে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে পশুর হাট বসে। এই সব হাটে দেশীয় প্রজাতির বহু সংখ্যাক গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল ওঠে। কিন্তু এবার কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি সেভাবে হচ্ছে নব বলে জানিয়েছেন গরুর খামারী ও ব্যবসায়িরা।

গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের পশুর দাম বেশি হওয়ায় হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যাক পশু থাকলেও বিক্রি তুলনামূলকভাবে বেশ কম। দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা এবার ঝুঁকছেন ছোট বা মাঝারি সাইজের পশু ক্রয়ের দিকে। যেকারণে এবারের কোরবানি ঈদে লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে গরুর চাহিদা একটু কম। তবে পশু হাট গুলোতে মাঝারি সাইজের গুরু ও ছাগলের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে সাধ্যের মধ্যে না থাকায় সাধারণ ক্রেতারা এবার বড় গরু কিনতে বেশী আগ্রহী নয়।

খামারীরা বলেন, গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও বছর জুড়ে গরু পালন এবং পরিচর্চায় খরচ বেশি হওয়া সত্তে¡ও কাঙ্খিত দামের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। ফলে গরু বিক্রি করে খামারিদের তেমন লাভ হচ্ছে না। কারণ কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে অন্য জেলার ক্রেতারা এখনো হাটে আসেনি। অন্য জেলার ক্রেতারা আসা শুরু করলে হয়তো আরো একটু বেশি দাম পাওয়া যাবে বলে খামারিরা আশা করছেন। তবে ঈদের আগমুহূর্তে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে গরু না আসায় কম দামে হলেও গরু বিক্রি করতে পেরে কিছুটা স্বস্তিতে ফিরেছেন বলে অভিমত খামারীদের।
খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, রোববার (৩ জুলাই) দেবহাটার পারুলিয়া পশুহাটে অন্যান্য বারের মতো চমকপ্রদ ও বিশালাকৃতির সারি সারি গরুর দেখা মেলেনি। হাতে গোনা ৮ থেকে ১০টি বড় সাইজের গরু হাটে তুললেও, ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদ-বৃষ্টিতে দাড়িয়ে থেকে ক্রেতা না মেলায় তা ফিরিয়ে নিয়ে যান ব্যবসায়ী ও খামারীরা। এদিন পারুলিয়া পশুহাটে সবচেয়ে বড় আকৃতির দুটি গরু বিক্রির জন্য তুলেছিলেন দেবহাটা উপজেলার উত্তর সখিপুরের খামারী নুররুজ্জামান।

তিনি বলেন, অনেক আশা নিয়ে দুটি বড় সাইজের গরু হাটে তুলেছিলাম। একটির ওজন ১৩ মন, অপরটির ওজন ১০ মন। লালন পালনে যেহারে খরচ হয়েছে, তাতে আশা ছিল বড় গরুটি ন্যূনতম সাড়ে তিন লাখ টাকায়, এবং অপরটি আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি হবে। কিন্তু ক্রেতার উপস্থিতি কম থাকায় বড় গরুটি তিন লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হয়েছে। সেজন্য বিক্রি না করে গরু নিয়ে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে বসে দিন কাটিয়ে দিয়েছি। একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি।

দক্ষিণ সখিপুরের গরু খামারী বিমল চন্দ্র বলেন, নিজের খামারের একটি গরু হাটে নিয়েছিলাম। গরুটির ওজন ১০মন। দুই লাখ আশি হাজার টাকা দাম চেয়েছিলাম, কিন্তু ক্রেতা জুটেনি বলে দিনশেষে গরু নিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছি।

এদিকে মাঝারি সাইজের খাসি ছাগল ১২থেকে ১৫হাজার এবং চল্লিশ কেজি ওজনের বড় সাইজের খাসি ছাগল ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে পারুলিয়া পশুহাটে।

পারুলিয়া পশু হাটের ইজারা গ্রহীতা সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদাউস আলফা খুলনা গেজেট কে বলেন, কোরবানির ঈদ ঘিরে এবছর পশুহাটের বেঁচাকেনা অনেকটাই কমেছে। একে তো কোরবানির পশুর চাহিদা ও দাম দুটোই কম। তার ওপর বেশিরভাগ মধ্যবিত্তরাই হাটে না এসে এলাকা থেকে কোরবানির পশুর বেঁচাকেনা সেরে ফেলছেন। সরকারের থেকে কোটি টাকায় পশু হাটের ইজারা নিয়ে এখন লোকসানের আশংকায় বেশ দুঃচিন্তায় আছি। তাই ঈদের আগে আরও দু’একটি হাট বসানোর জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি চেয়েছিলাম। সেঅনুযায়ি কোরবানির পশু বেঁচাকেনার জন্য আগামী ৭ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পশুহাট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

অপরদিকে আবাদেরহাটে আসা ক্রেতারা বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম একটু বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে গুরু না আসায় খামারী ও ব্যবসায়িরা দেশি গুরুর দাম একটু বেশি হাকাচ্ছেন। যে কারণে বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি বেশি থাকলেও সেতুলনায় বিক্রি কম। তবে বড় সাইজের গরুর চেয়ে মাঝারী ও ছোট সাইজের গরুর এবার চাহিদা বেশি।

আবাদেরহাটের ইজারাদার আগরদাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান হবি বলেন, কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যাক গরু উঠছে। ক্রেতাদেররও উপচে পড়া ভীড় দেখা যাচ্ছে। তবে কেনাবেচাও খুব ভালো না হলেও একেবারে মন্দ নয়। ঈদেও আগ মূহুর্ত্বে বেচা কেনা আরো ভাল হবে বলে আশা করেন তিনি।

সাতক্ষীরা জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৯০৭টি। আর কোরবানির জন্য মোট পশু মজুত রয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৫টি। যা চাহিদার চেয়ে ৪৭ হাজার ৯৮টি পশু বেশি। জেলার সাত উপজেলার ৯ হাজার ৯৩০টি খামারসহ পারিবারিকভাবে এসব পশু লালন পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ২৮ হাজার ৮০৩টি, ছাগল ৭৪ হাজার ৪৯৯টি, ভেড়া ৩৭০৭টি ও মহিষ রয়েছে ৯৯৬টি। কুরবানির জন ্যস্বাস্থ্য সম্মতভাবে এস পশু প্রস্তুত করেছেন খামারীরা।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!