খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫
  গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২
আন্তর্জাতিক বন দিবস আজ

স্বাস্থ্যকর বন, স্বাস্থ্যকর মানুষ : আমাদের জীবনে বনের গুরুত্ব

অধ্যাপক ডঃ মোঃ ওয়াসিউল ইসলাম

মানুষ এবং আমাদের এই গ্রহের স্বাস্থ্য ও মঙ্গলের জন্য বন অত্যাবশ্যক। তারা বিশুদ্ধ বাতাস, পানি, খাদ্য এবং ঔষুধ সরবরাহ করে এবং বিভিন্ন বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদ প্রজাতির আবাসস্থল এই বন। তথাপি, বন উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই ভূমি ব্যবহার অনুশীলনের অভাবের কারণে বনগুলো অভূতপূর্ব হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১২ সালে ২১ মার্চকে আন্তর্জাতিক বন দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। বনের গুরুত্ব এবং মানুষের পাশাপাশি তারা অন্যান্য যে সুবিধাগুলো প্রদান করে থাকে সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালিত হচ্ছে।

এবারের আন্তর্জাতিক বন দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘সুস্থ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর বন’। এই প্রতিপাদ্যটি মানুষের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বৃদ্ধিতে বনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে। একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এবং মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যকে সমর্থন করার জন্য বন অপরিহার্য। বন বিনোদন, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগও প্রদান করে, যা একটি সম্প্রদায়ের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণের জন্য অবদান রাখে।

বন অগণিত প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল এবং এদের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা কার্বন আধার হিসাবে কাজ করে, বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং গাছ, মাটি এবং অন্যান্য জীবজন্তুকে সংরক্ষণ করে। স্বাস্থ্যকর বন পানি চক্র নিয়ন্ত্রণ করতে, ভূমিক্ষয় কমাতে এবং ভূমিধস রোধ করতেও সাহায্য করতে পারে, যা জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত এলাকায় ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে উঠছে।

বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবিকার উৎসও এই বনভূমি। বন কাঠ, গৌন বনজ সম্পদ এবং অন্যান্য সম্পদসমূহ প্রদান করে যা স্থানীয় সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণের জন্য অপরিহার্য। টেকসই বন ব্যবস্থাপনা অনুশীলন নিশ্চিতকরণেরমাধ্যমে এই সম্পদগুলো এমনভাবে ব্যবহার করা হয় যাতে মানুষ এবং পরিবেশ উভয়েরই উপকার হয়।
বন মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, বনসহ অন্যান্য প্রকৃতির সংস্পর্শে আসায় মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা কমাতে পারে এবং সামগ্রিক সুস্থতা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এছাড়াও, বনে সময় কাটানোর মাধ্যমে সৃজনশীলতা এবং জ্ঞানের পরিধি ও কার্যকারিতা উন্নত হতে দেখা গেছে। দারিদ্র্য বিমোচনে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বন উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখছে।

তদুপরি, আমাদের বনগুলো বিভিন্ন ধরণের হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে যা তাদের স্বাস্থ্য এবং তাদের উপর নির্ভরশীল লোকদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। বন উজাড়, অবৈধ কাঠ আহরণ, কৃষি, শিল্পায়ন এবং অন্যান্য ভূমি ব্যবহারের জন্য বন রূপান্তরের মাধ্যমে বনের আচ্ছাদন এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির সাধিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনও দাবানল, ঘন ঘন বন্যা এবং খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন ধ্বংসের এই হুমকিগুলোকেক্রমশঃ প্রভাবিত করে চলেছে।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য, টেকসই বন ব্যবস্থাপনা অনুশীলনের মাধ্যমে বন রক্ষা ও পুনরুদ্ধার করা অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে বন ব্যবস্থাপনার প্রচার ও প্রসার, বন পুনরুদ্ধারের উদ্যোগকে সমর্থন করা এবং বন শাসন ও আইন প্রয়োগকে আরও শক্তিশালী করা। এতে সরকার, সুশীল সমাজ,সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি খাতসহ সকল অংশীদের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় যাতে বনগুলো এমনভাবে পরিচালিত হয় যাতে মানুষ এবং পরিবেশের উপকার সাধিত হয়।

বাংলাদেশের বর্তমান বনের অবস্থা একটি উদ্বেগের কারণ হিসাবে দেখা হয়। বনসহ দেশের সমস্ত প্রাকৃতিকসম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বিদ্যমান বনাঞ্চল এখনো বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে যার মধ্যে অবৈধ গাছ কাটা, দখল, চোরাচালান এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অবশিষ্ট বন রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন সংরক্ষিত এলাকা প্রতিষ্ঠা এবং অবৈধ কাঠ কাটা ও বন উজাড়ের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ অন্যতম। যাইহোক, বন এবং তাদের নির্ভরশীল মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বিভিন্ন অংশীদেরমধ্যে আরও প্রচেষ্টা এবং সমন্বয় প্রয়োজন।

উপসংহারে, সুস্থ মানুষ এবং একটি সুস্থ পৃথিবীর জন্য সুস্থ বন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই আন্তর্জাতিক বন দিবসে, আসুন, আমরা সকলের কল্যাণের জন্য বন রক্ষা ও পুনরুদ্ধার করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হই। আসুন, আমরা একসাথে কাজ করি যাতে বনগুলো পরিষ্কার বাতাস, পানি, খাদ্য এবং ঔষুধ সরবরাহ করতে পারে এবং সারা বিশ্বের মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।

লেখকঃ ডঃ মোঃ ওয়াসিউল ইসলাম, অধ্যাপক, ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনলোজি ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডেপুটি চিফ অব পার্টি, ইউএসআইডি ইকোট্যুরিজম অ্যাক্টিভিটি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!