মোংলা উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের মালগাজী গ্রামে স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শাহীনুর নামের এক সন্তানের জননী।
সোমবার (১ মে) সকালে ব্যাপক মারধর করে সন্তানসহ ঘর থেকে বের করে দেন পাষন্ড স্বামী। ঘটনার পর থেকে সন্তানের ভবিষ্যত জীবনের নিশ্চয়তা নিয়ে হতাশায় রয়েছেন শাহীনুর আক্তার নামে (২৩) ওই গৃহবধু।
শাহীনুর ৪নং ওয়ার্ডের উত্তর মালগাজী এলাকার মোঃ কামরুল হাসানের স্ত্রী এবং পৌর ৭নং ওয়ার্ডের জয়বাংলা এলাকার আঃ করিমের মেয়ে। শাহিনুর আক্তারের দেড় বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। এ নিয়ে মোংলা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতনের শিকার শাহীনুর আক্তার।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, শাহীনুরের সাথে কামরুলের ২০১৯ সালে বিবাহ হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে একটা কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে স্বামীর বিভিন্ন মহিলাদের সাথে পরকীয়ার বিষয়টি টেরপেয়ে শাহীনুর প্রতিবাদ করলে একাধিকবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্বামীর হাতে। সংসারে নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অন্যায় অযৌক্তিক দাবিতে শারীরিক ও মানুষিক ভাবে নির্যাতন করত কামরুল হাসান (২৮)। তাছাড়া সে পরকিয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে স্ত্রী ও সন্তানের ঠিক মতন ভরন পোষন না দিয়ে উল্টো স্ত্রীকে বেধরক মারধর করত। কামরুল হাসান প্রতিনিয়ত মোংলা ইপিজেডের মেয়েদের সাথে পরকিয়া প্রেম করে অবৈধ ভাবে মেলামেশা করে। এমতাবস্থায় প্রায় ৩ মাস পূর্বে বাড়ীতে বসে মেয়েদের সাথে অবৈধ মেলামেশা করার জন্য স্ত্রীকে মারধর করে মেয়েসহ এক কাপড়ে বাসা থেকে তারিয়ে দেয়। সেই থেকে স্ত্রী ও সন্তানের কোন খোঁজ খবর না নিয়ে ও ভরণ পোষণ না দিয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন মেয়ে বাড়ীতে এনে মদ, গাঁজা, ইয়াবা সেবনসহ অবৈধ কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকে।
শাহিনুর আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, তার স্বামী পেশায় একজন জাহাজের শ্রমিক। বিয়ের পর থেকে তার স্বামী বিভিন্ন সময় অন্যান্য মহিলাদের সাথে পরকিয়ায় আসক্ত ছিলো। এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে স্ত্রী শাহিনুরের উপর চলতো নির্যাতন।
সোমবার (১লা মে) আমি জানতে পারি আমার স্বামী একটি মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। খবর শুনেই আমি আর আমার মা কামরুলের বাড়িতে গিয়ে ঘরে ঢুকেই দেখি অন্য একজন মেয়েসহ কামরুল এক বিছানায় শুয়ে আছে। আমি কিছু জিঙ্গাসা করতে যাওয়ার আগেই আমাকে ও আমার মাকে কামরুল মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী আরো বলেন কামরুলের ব্যাপারে আমার শশুরকে জানালেও আমার শশুর তা আমলে না নিয়ে উল্টো তার ছেলের পক্ষে কথাবলেন। আমার শাশুড়ি প্রবাসে থাকায় আমার শশুর কবির আকনও আমাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করতো। নির্যাতনের শিকার শাহীনুর আক্তার এখন তার বাবার বাড়িতে রয়েছে। এবং প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান শাহিনুর আক্তার।
স্থানীয়রা জানান, কবির আকনের ছেলে কামরুল বহুদিন ধরে অন্য মহিলাদের সাথে পরকিয়ায় আসক্ত। সে বিভিন্ন সময় মেয়েদের তার বাড়িতে আসতো। লোকজন কিছু বললেই লাঞ্চিত অপমানিত হতে হয়। ভয়ে কেউ ভালোমন্দ বলার সাহস রাখে না। আজ শাহিনুরের উপর যে অমানবিক নির্যাতন করেছে তা খুবই দুঃখ জনক।
অভিযুক্ত কামরুল হাসান নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে জানান, আমার চাচাতো বোন আমার বাড়িতে আজকে বেড়াতে এসেছে। সেখানে আমার শশুর বাড়ির লোকজন এসে আমাকে ও আমার চাচাতো বোনকে মারধর করে। তাদের ধারনা আমার চাচাতো বোনের সাথে নাকি আমার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে।
কামরুল হাসানের পিতা কবির আকন বলেন, আমার ধর্ম মেয়ে তুলি আজকে আমার বাড়িতে বেড়াতে আসলে করিমের মেয়ে-ছেলে মিলে ঘরে ডুকে মারধর করে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন ওই সময় বাড়িতে কেউ ছিলোনা শুধু আমার ছোট ছেলের বৌ ছিলো।
এ বিষয়ে মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, আমরা শাহিনুর আক্তারের একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/কেডি