খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত
  সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেন মারা গেছেন
  নওগাঁয় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত
  যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

সালাম সুন্দর, আরও সুন্দর সালামের জবাব

মুফতি সাআদ আহমাদ

সাধারণত সম্ভাষণ বা শুভেচ্ছা পর্বের সুচনা হয় দুই ব্যক্তির মাঝে যে অবস্থানগতভাবে দুর্বল তার থেকেই। কেননা আগে বেড়ে কাউকে অভিবাদন জানানো খানেকটা ব্যক্তি সম্মান ক্ষুণ্ণ করে বলেই আমাদের ধারণা। সুতরাং প্রথম ব্যক্তি সুচনাতেই বেশ বিবৃতকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই প্রথম অংশের অবতারণা ঘটান। এখন দেখার বিষয় দ্বীতিয় ব্যক্তি এর প্রতি কতটুকু আন্তরিক। আর তা প্রকাশ পাবে প্রথম ব্যক্তির শুভেচ্ছা বাক্যের প্রতিউত্তরের মধ্য দিয়ে।

একে তো প্রথম ব্যক্তি নিজের অবস্থানগত দুর্বলতার কারনে ভগ্নমনা থাকাই স্বাভাবিক। তারপর সামনের লোকটির কাছে যদি তার উপস্থাপিত শুভেচ্ছা বাক্যের এতটুকু মুল্যায়নও না হয় তবে তার জন্য এটি বিরাট কষ্টের ব্যাপার। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, হাই, হ্যালো বা গুড মর্নিং, গুড নাইট ইত্যাদী শব্দের প্রতিউত্তরে কখন বা কেবল মাথা নেড়ে `ইটস্ ওকে’ বলেই প্রসঙ্গের ইতি টানা হয়। কখনোবা সামনের লোকটিকে তার অভিবাদনের জবাব দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করা হয় না।

বিপরিতে ইসলামের শ্বাশত বিধান এক্ষেত্রে বড়ই মনমুগ্ধকর। এক্ষেত্রে সালামের উদার দৃষ্টিভঙ্গি হলো অবস্থানগত বিবেচনায় যে এগিয়ে আছে সেই আগে সালাম দিবে। যাতে সামনের লোকটি ঘুণাক্ষরেও নিজের দুর্বলতার বিষয়টি অনুভব করতে না পারে। উপরুন্ত যদি সে আগে সালাম দিয়েই বসে তবে এক্ষেত্রে কুরআনের শিক্ষা হল, “যখন তোমাদেরকে অভিবাদন জ্ঞাপক বাক্যের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হয় তখন প্রতিত্তরে তার চেয়ে সুন্দর বাক্যে তোমরা তাকে শুভেচ্ছা জানাও। অন্ততপক্ষে সে যা বলেছে তাই বলে হলেও তার প্রতিত্তর দাও। (সুরা নিসা-৮৪)

নিজেকে একবার একজন উচ্চুপদস্থ সরকারী অফিসার বা রাজনৈতিক বড় দায়িত্বশীল ব্যক্তির সামনে কল্পনা করে দেখুন তো। কোন প্রয়োজন হয়তো আপনাকে তার দারস্থ হতে বাধ্য করেছে। দুরু দুরু মনে তার সাক্ষাতে উপস্থিত হলেন। কি বলবেন, কিভাবে শুরু করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। ঠিক এমন সময় তার পিয়ন আপনাকে ডেকে পাঠালেন।

ভিতরে প্রবেশ করতেই এমন কিছু ঘটলো যা আপনার আশার চেয়ে বেশী। ঠিক বুঝতে পারছেন না যে, আপনি তার সাক্ষাতে এসেছেন নাকি সেই আপনার দর্শনপ্রাথী। উচ্ছাসভারা কন্ঠে সালামের এক রাশ শুভেচ্ছা ছুড়ে দিলো আপনার দিকে। “আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ” অথবা সালাম আপনি দিয়েছিলেন ঠিকেই। ভয়ে কাতর জবানে অর্ধেক বাহির হলো আর অর্ধেক থেকে গেলো মুখের ভিতরেই। কিন্তু সামনের লোকটি মুহুর্তেই পরিস্থিতি সামলে নিল। আপনার অসম্পূর্ণ সালাম খানি সাদরে গ্রহণ করে তার পক্ষ থেকে পূরোন করে দিলো সবটাই। “ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ”।

পক্ষান্তরে এর বিপরিত চিত্রটি হতো আপনার জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তার নিরবতা আপনাকে পেরেশান করে ছাড়ত। মনের অজান্তে হতাশায় তলিয়ে যেতে হতো নিজের তুচ্ছতার কথা ভেবে। সে এক অন্যরকম বিড়ম্বনা।

একজন মুসলমানকে এ জাতিয় পরিস্থিতির সম্মুখিন করা বড় গুনাহ। এতে তার মর্যাদাহানী হয়। তাই এ ব্যাপারে ইসলাম খুবই সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাধ্যতামূলক ভাবে যে কারো সালামের মুল্যায়ন করা আবশ্যক করা হয়েছে ইসলামে।

সুতরাং সালামের মৌলিক নীতির অন্যতম হলো, যদি কাউকে সালাম করা হয় তবে বিশেষ অপরাগতা না থাকলে অবশ্যই তাকে সালামের জবাব দিতেই হবে। এটা আবশ্যক। প্রিয় নবীজি সা. বলেন- এক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের প্রতি কিছু আবশ্যকীয় কর্তব্য রয়েছে। আর তার অন্যতম হলো, একজন সালাম দিলে অপরজন অবশ্যই তার জবাব দিবে। (বুখারী-১২৪০)

লেখক : শিক্ষক, ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়িগেট, খুলনা।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!