চলতি অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন হয়নি এই অজুহাতে গত অক্টোবর মাস থেকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিটের অধিকাংশ সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন
সামেক হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগের রোগিরা।
আগে যেখানে মাত্র ৪০০ টাকা ফি জমা দিয়ে রোগিরা ডায়ালাইসিস করার সুবিধা পেত, এখন সেখানে প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ করে নিতে হচ্ছে জীবনরক্ষাকারী ডায়ালাইসিস সেবা।
এদিকে রোগি ও তার পরিবারের পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। টাকার অভাবে অনেকের বিক্রি করতে হচ্ছে শেষ সম্বল। কেউ টাকার অভাবে করাতে পারছে না কিডনি ডায়ালাইসিস। গত প্রায় এক মাসের ও বেশি সময় ধরে সামেক হাসপাতালে চলছে এই সংকট।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ডায়ালাইসিস এর জন্য প্রয়োজনীয় রিএজেন্ট সহ অন্যান্য মালামাল ফুরিয়ে গেছে। বাজেট বিভাজনের কারণে আগের মতো হাসপাতাল থেকে কিডনি রোগিদের ডায়ালাইসিস সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে, ১৬টি ডায়ালাইসিস মেশিনের ৪টিই অচল পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। নষ্ট মেশিন মেরামতের কোন উদ্যোগই নেই বছরের পর বছর ধরে।
বিগত ২০১১ সালে সাতক্ষীরা শহরের অদূরে বাঁকাল এলাকায় স্থাপিত হয় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার প্রায় ৭ বছর পর ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের গনদাবির মুখে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু করা হয় কিডনি রোগিদের জন্য ডায়ালাইসিস ইউনিট।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, সামেকে কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিটটি চালুর পর থেকে গত ৫ বছরে প্রায় ২১ হাজার কিডনি রোগি ডায়ালাইসিস সেবা নিয়েছে। এরমধ্যে ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৫৪ জন, ২০১৯ সালে ৪ হাজার ২০ জন, ২০২০সালে ৩ হাজার ৯৯৮ জন, ২০২১ সালে ৫ হাজার ৮০২জন এবং ২০২২ সালে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কিডনি রোগি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডায়ালাইসিস সেবা নিয়েছে। রোগিরা আগে কখনো কল্পনা করেনি সাতক্ষীরাতে বসে এ ধরনের চিকিৎসা সেবা পাবে তারা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, একবার ডায়ালাইসিস করতে প্রায় ৫ হাজার টাকার ওষুধসহ অন্যান্য সরঞ্জম লাগে। কিন্তু সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিবার ডায়ালাইসিস করার জন্য মাত্র ৪০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দেয়। ফলে কম খরচে রোগিদের চিকিৎসা সেবা নেয়া অনেক সহজ হয়। কিন্তু চলতি অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন হয়নি এই অজুহাত দেখিয়ে অক্টোবর মাস থেকে কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিটের অধিকাংশ সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছে কিডনি ডায়ালাইসিস রোগিরা। সময় মত ডায়ালাইসিস নিতে না পারায় অনেক রোগি মৃত্যুর মুখে পড়েছে ।
সুন্দরবন সংগগ্ন মুন্সিগঞ্জের আকবর আলী জনান, আমি খুবই গরীব মানুষ। সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ধরে কোন ভাবে জীবন নির্বাহ করে আসছি। আমার স্ত্রীর প্রতি মাসেই কিডনি ডায়ালাইসিস নিতে হয়। আগে ৪০০ টাকা খর হতো। কিন্তু বর্তমানে ওষুধ ,সরঞ্জম বাইরের দোকান থেকে কিনতে হচ্ছে। প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এতো টাকা কোথায় পাবো ? বর্তমানে ডায়ালাইসিস দেয়া বন্ধ রয়েছে। স্ত্রীর প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
তালা উপজেলার ধানদিয়া গ্রামের আখিনূর বেগম (৫৫)ও কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের অজিয়ার রহমান (৫৭) জানান, হাসপাতাল থেকে আমরা আগে সব কিছু বিনামূল্যে পেতাম , কিন্তু এখন তা আর পারছিনা। রোগি নিয়ে ভিষন কষ্টের মধ্যে আছি। বাড়ির জমিজায়গা বিক্রি প্রায় শেষ। তারা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
এদিকে, সাতক্ষীরা মেডিলে কলেজ হাসপাতালে মোট ১৬টি ডায়ালাইিিস মেশিন রয়েছে। এরমধ্যে ১২টি মেশিন চালু থাকলেও বাকী ৪ টি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অচল পড়ে আছে। কয়েক কোটি টাকা মূল্যের এসব মেশিন মেরামতের তেমন কোন উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের ।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ শেখ কুদরত-ই খুদা জানান, চলতি অর্থ বছরের বাজেট বিভাজন এখনো হয়নি। মালামাল ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। মালামাল সংকটের কারণে কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগে আগে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হতো এখন তা বন্ধ রয়েছে। বাজের অনুমোদন হওয়ার পরে সংকট কেটে যাবে। তিনি বলেন, চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
পরিচালক আরো বলেন বলেন, ১৬ টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে ৪টি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলকে বার বার বলার পরও সমাধান হচ্ছে না। তারা মেশিন গুলো মেরারত করে দিচ্ছে না। আমি যোগদানের বেশ আগে থেকেই মেশিন ৪টি নষ্ট পড়ে আছে।