খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
  রাঙামাটির সাজেকে শ্রমিকবাহী মিনি ট্রাক পাহাড়ের খাদে পড়ে ৯ জন নিহত
চার দিনেও ইয়াছিন হত্যার তদন্তে অগ্রগতি নেই

সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কে ঘাসের বন দুষ্কৃতিকারীদের অভয়ারণ্য!

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা শহরের বাইপাস সড়কের বকচরা এলাকাসহ কিছু অংশ জুড়ে নেপিয়ার ঘাসের বন, তালগাছের চারা ও আগাছা জাতীয় বিভিন্ন গাছ পথচারি ও বেড়াতে আসা মানুষজনের পক্ষে আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে। গত বুধবার ভোরে শহরের সুলতানপুরের চা বিক্রেতা ইয়াছিন আলীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তার মাথা খুঁজে না পাওয়া ও চার দিনেও কোন ক্লু উদ্ধার না হওয়ায় বাইপাস সড়কের দু’ধারের বাগান পরিষ্কার করা নিয়ে সাধারণ মানুষ দাবি তুলেছেন।

সাতক্ষীরা শহরতলীর বকচরা এলাকার সিরাজুল ইসলাম ও আবুল কালাম জানান, ২০১৮ সালে বাইপাস সড়ক সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়। এরপর এ সড়কে বন্দুকযুদ্ধে মুনজিতপুরের দ্বীপ ও কালিগঞ্জের উজিরপুরের সাইফুল ইসলাম মারা যায়। এ ছাড়া বাকাল ইসলামপুরের মুকুল চোরকে শুকুর আলীর ভাটার সামনে হত্যা করা হয়। কুচপুকুরের কবীরের লাশ মাছ বাজারের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া কাশেমপুরের ব্যবসায়ি আব্দুল জলিলকে ভ্যান থেকে নামিয়ে ৪০ হাজার টাকা ছিনতাই, পারুলিয়া পশুর হাট থেকে বাড়ি ফেরার সময় কাশেমপুরের গুমার কাছ থেকে ছাগল বিক্রির দেড় লাখ টাকা, কাটিয়া লস্করপাড়ার বায়রন লস্করের টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বইপাসে বেড়াতে আসা যুবক যুবতীদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করে নেওয়ার ঘটনা নেহাৎ কম নয়।

তারা আরও জানান, সম্প্রতি বাইপাস সড়কের মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে বকচরা মোড় পর্যন্ত সড়কের দক্ষিণ পাশে তালগাছ, নেপিয়ার ঘাসসহ বিভিন্ন ধরণের ঘাসের বন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এইভাবে সড়কের বকচরার দিকে নেপিয়ার ঘাসের ঘন বন শোভা পাচ্ছে। এ বাগানকে ঘিরে ছিনতাইকারি ও দুর্বৃত্তদের অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। সড়কে রাতে পুলিশের টহল থাকার পরও ছিনতাই হচ্ছে না একথা বলা যাবে না। অধিকাংশ ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছায় না। এমতাবস্থায় গত বুধবার ভোরে বাইপাস সড়কের বকচরা গ্রামের নুরুজ্জামানের মাছের ঘেরের পাশে সুলতানপুরের চা বিক্রেতা ইয়াছিনের মাথা কাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত চার দিনেও পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি। উদ্ধার করতে পারেনি ইয়াছিলেন কাটা মাথা ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র।

তবে পুরাতন সাতক্ষীরার শহর আলী কবিরাজের বাড়ির এলাকার ভ্যান চালক ইয়াছিন আলী, সদর উপজেলার মাছখোলার রানা ও মাছখোল ক্লাব মোড়ের মাহাফুজ হোসেন ও বুধোরডাঙি এলাকার নুর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। একইভাবে বৃহষ্পতিবার রাতে র‌্যাব এক ভ্যানচালককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। তবে হত্যাকারিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলেছে। ইতিমধ্যে শুক্রবার সাতক্ষীরা নির্বাচন অফিসের সামনে থেকে দীঘির ধার পর্যন্ত সিসি টিভির ফুটেজ দেখে নিহতের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে হত্যাকারি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করো হচ্ছে। নিহত ব্যক্তিকে মঙ্গলবার রাতে বাইপাস সড়কে কাজের জন্য তার চার বছর আগেকার যে পরিচিত ব্যক্তিটি মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করেছিল তার গ্রাম, না ও ঠিকানা নিহতের পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তদন্ত কাজের অগ্রগতি হয়নি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বকচরা এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, ১৯৯৬ সালের এক রাতে কাশেমপুরের মনতেজ সরদারের ছেলে আবুল হাসানকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যার আনারুল ইসলামের বাড়ি থেকে তুলে এনে কুচপুকুর জামতলার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত নজরুল ও তার ছেলে কবীরের বাড়ির পাশের বাগানে কাঠের উপর দুহাত রেখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে নেওয়া হয়। পরে তাকে রাতেই ভ্যানযোগে আনারুল ইসলামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আনারুল ইসলামের প্রতিপক্ষ আব্দুল মান্নান, আব্দুল হান্নান, আব্দুল খালেক ও রবিউল ইসলামসহ কয়েকজনের নামে মামলাও হয়।

এদিকে বুধবার ভোরে বাইপাস সড়কের বকচরা এলাকায় নেপিয়ার ঘাসের পাশে যেভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আবুল হাসানের দু’হাত কেটে নেওয়া হয় সুলতানপুরের চা বিক্রেতা ইয়াছিন মোল্লা হত্য সেই সহিংসতার কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই স্থানীয়দের দাবি বাইপাস সড়কে চুরি , ছিনতাই ও সহিংসতা কমাতে সড়কের দুইপাশের বাগান পরিষ্কারের কোন বিকল্প নেই। তবে সড়কের একাংশের উত্তর দিকে রয়েছে সাতক্ষীরা পৌরসভার জমি অপর পাশে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা। তাই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন উভয়কেই এ বাগান পরিষ্কারের জন্য আন্তরিক হতে হবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!