খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর নিয়োগ নিয়ে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

সাতক্ষীরায় ২৬ হাজার টন বাগদা চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

দেশের সাদা সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ির চাষের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে সাতক্ষীরা জেলায় চিংড়ির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৬ হাজার মোট্রক টন। যার বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার ওপরে। ইতিমধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর।

দেশে মোট রফতানিজাত বাগদা চিংড়ির সিংহভাগ উৎপাদন হয় উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায়। গত মৌসুমে জেলায় বাগদা চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার মেট্রিক টন থাকলেও অর্জিত হয়েছিল ২৪ হাজার ৬০০ টনের মতো। এ হিসাবে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে এক হাজার টন। তবে এখন পর্যন্ত জেলার লবণ পানির ঘেরগুলোয় যে পরিমাণ বাগদা চিংড়ি দেখা যাচ্ছে, তাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে মৎস্য বিভাগ।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে জেলার ছয়টি উপজেলায় ৬০ হাজার লবণ পানির ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে সরকারিভাবে রফতানিজাত বাগদা চিংড়ির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৬ হাজার মেট্রিক টন। কেজি প্রতি ৯০০ টাকা হিসাবে যার মূল্য দাড়ায় ২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার অন্তত ৮০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত লবণ পানির চিংড়ি ঘেরগুলোয় যে পরিমাণ বাগদা চিংড়ি রয়েছে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত মৌসুমে জেলায় বাগদা চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু অর্জিত হয়েছিল ২৪ হাজার ৬০০ টনের মতো। এ হিসাবে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ১ হাজার টন।’

তবে জেলার অধিকাংশ চিংড়িচাষীর অভিযোগ, স্থানীয় বাজারে চিংড়ি রেণুর মান নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় নিম্মমানের রেনু পোনা কিনে প্রতারিত হচ্ছেন তারা। মানহীন ও জীবাণু বহন করা রেণু পোনা ঘেরে ছেড়ে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষীরা।

আশাশুনি উপজেলার সরাপপুর গ্রামের চিংড়িচাষী রাজ্যেশ্বর দাশ জানান, একটানা প্রায় আড়াই দশক ধরে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন করছেন তিনি। চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমেও অন্তত দুই হাজার বিঘা লবণ পানির ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। তবে চলতি মৌসুমে শুরু থেকে তার ঘেরে ভাইরাস বা অন্যান্য সংক্রামনে প্রচুর সংখ্যাক চিংড়ি মারা গেছে। মৌসুমের মাঝামাঝি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন বেশ ভালো।

রাজ্যেশ্বর দাশ আরো জানান, মানহীন চিংড়ি রেণু ঘেরে অবমুক্ত করার ফলে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব পোনা ঘেরে ছাড়ার পর বয়স ৩৫-৪০ দিন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মারা যাচ্ছে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘেরে চিংড়ি মরার কারণে দিশেহারা চাষীরা। পরবর্তী সময়ে এর কোনো প্রতিকারও পাওয়া যায় না। এভাবেই একেকটি চিংড়ি ঘেরে মোট রেণুর অন্তত ৬৫-৭০ শতাংশ মারা যায়। তার পরও চাষীরা টিকে থাকার লড়াইয়ে উৎপাদন করে চলেছেন। তবে চিংড়ির সঙ্গে সাদা মাছ চাষ করার ফলে কিছুটা লাভবান হচ্ছেন তারা।

চিংড়ির মানহীন রেণুর বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, সরকারিভাবে সাতক্ষীরায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তিগতভাবে আরো কিছুদিন সময় লাগবে এটি চালু করার জন্য। তখন চাষীরা চাইলেই চিংড়ির রেণু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারবেন।

আশাশুনির চিংড়ি চাষী স.ম নুরুল আলম জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রতাপনগর এলাকায় ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করেন তিনি। চলতি মৌসুমেও প্রায় ২৫০বিঘার একটি ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। গত মৌসুমে একই পরিমাণ ঘেরে চিংড়ি চাষ করে উৎপাদন ও অন্যান্য খরচ তুলেও প্রায় ৬-৭ লাখ টাকা লাভ হয় তার। চলতি মৌসুমেও এ পর্যন্ত ৮০ শতাংশ চিংড়ি বিক্রি করেছেন। বাজারে প্রতি কেজি বাগদা চিংড়ির দাম পাওয়া যাচ্ছে ৯০০-৯২০ টাকা পর্যন্ত। তবে সাইজ অনুায়ি মাছের দাম কম বেশি হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, চিংড়ির রেনু নিয়ে তারা সমস্যায় রয়েছেন। কক্সবাজার থেকে যেসব রেণু সাতক্ষীরায় আসে, তার মান যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে উচ্চমূল্যে রেণু কিনে ঘেরে ছাড়ার কিছু দিন যেতে না যেতেই চিংড়ি মরতে শুরু করে। এ জেলায় হাজার হাজার চাষী বাগদা চিংড়ি উৎপাদন করেন। অথচ এখানে রেণুর মান পরীক্ষা করার জন্য সরকারিভাবে কোনো পিসিআর ল্যাব নেই।

সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব জানান, রফতানির পাশাপাশি দেশীয় বাজারেও বাগদা চিংড়ির চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। বর্তমানে ২৫-৩০ গ্রেডের বাগদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৯০০-৯৫০ টাকা কেজি দরে। তবে মাঝেমধ্যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সাতক্ষীরার চিংড়ির সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তিনি রফতানিজাত চিংড়ির আন্তজাতিক বাজার ধরে রাখতে সংশ্লিষ্টদের আরো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!