খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি, খুলনায় ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে
  চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় হিট স্ট্রোকে ২ জনের মৃত্যু
  দাবদহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ল ৫ দিন, খুলবে ২৮ এপ্রিল
খরচের ভয়ে ধান না কেটে খেতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে গরু -ছাগল

সাতক্ষীরায় অনাবৃষ্টিতে আমন চাষে ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার অনেক স্থানে আমন ধানের ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। বেঁশো পোকা ও মাজরা পোকার আক্রমণে ব্যহত হয়েছে ধানের ফলন। ফলে এবার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কিনা না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

এদিকে চাহিদা মত ফসল না হওয়ায় উৎপাদন খরচসহ শ্যালো মেশিনের পানির বিল, সার ও কীটনাশকের দোকানের বকেয়া পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। এমতাবস্থায় সরকারি প্রণোদনা না পেলে আগামি বছরে কৃষকরা আমন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

সাতক্ষীরা খামারবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, চলদি আমন মৌসুমে জেলায় ৮৯ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৮৮ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে হাইব্রীড ধান তিন মেট্রিক টন, উফসি ২.৭০ মেট্রিক টন ও স্থানীয় এক দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ি, সাতক্ষীরা সদরের কাশেমপুর, শিবপুর, জগন্নাথপুর, নেবাখালি, পায়রাডাঙা, যোগরাজপুর, দেবনগর, ছাতিয়ানতলা, মুকুন্দপুর, মাঠপাড়া, শাল্যে, মাছখোলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আষাড় মাসের সময় মত বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা অধিকাংশ বিলে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন। পরবর্তীতে দেরিতে স্বল্প মাত্রার বৃষ্টি হলেও তা ধান চাষের জন্য উপযোগী ছিল না। ফলে অনেকেই শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে বেশি বয়সের ধানের চারা লাগিয়েছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় বা কম বৃষ্টির কারণে ধান গাছ বাড়েনি। কোথাও কোথাও ধান গাছের উচ্চতা এক ফুটেরও কম। শীষে ধান নেই। আবার যেসব ধান গাছ বড় হয়েছে সে সব ধানের শিষ চিটায় ভর্তি। আবার চিটাতে বা ধানে কালো রং এর মাজরা বা বেঁশো পোকার আক্রমণের দাগ।

ধান না হওয়ায় ও গাছের বৃদ্ধি না হওয়ায় অনেক স্থানে কাটা খরচ বাঁচাতে খেতে গরু ও ছাগল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই ধান গাছ কেটে বস্তায় ভরে বাড়িতে গরু ছাগলের খাওয়ানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে ধান গাছ তড়িঘড়ি করে কেটে সরিষা চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। গত বছর যে সব জায়গায় জলাবদ্ধতা ছিল না সে সব জায়গায় বিঘা প্রতি ১৪ থেকে ১৫ বস্তা ধান হয়েছে। এবার সেইসব জায়গায় ধান হবে দুই থেকে তিন বস্তা করে। ফলে শ্যালো মেশিনের পানির বিল, সার ও কীটনাশকের দোকানের বকেয়া পরিশোধ করতে পারবে না কৃষকরা। এমনকি সরকারি প্রণোদনা না পেলে আগামি বছরে কৃষকরা আমন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

শিবপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের রাখালতলা বিলের কৃষক মুহসিন আলী জানান, তিনি ছয় বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। গাছ এক ফুটের উপরে বাড়েনি। ধানের শীষ যথেষ্ট ছোট। শীষে মাজরা বা বেঁশো পোকা লাগায় কালো রং এর চিটে হয়ে গেছে। খড় কাটতে হলে যে মুজুরি লাগবে তাতে তিনি আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফলে জমিতে গরু ও ছাগল লাগিয়ে দিয়েছেন। ক্ষতি পোষাতে ওই জমিতে দুই এক দিনের মধ্যে চাষ দিয়ে সরিষা চাষ করবেন।

একই এলাকার কৃষক মুনসুর আলী ও আজগার আলী জানান, সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় তারা কৃষি বিভাগের শরনাপন্ন হয়েছেন। কোন সদুত্তরন মেলেনি। বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে চাষ করেছেন। বেশি টাকা দিয়ে সার ও কীটনাশক কিনতে হয়েছে। এরপরও তাদের ১৪ বিঘা জমির মধ্যে আট বিঘা জমিতে একেবারেই ধান নেই। প্রায় শুকনা ধান গাছ কেটে বস্তায় ভরে গরু ছাগলের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। শ্যালো মেশিনের বকেয়া পানির বিল, সার ও কীটনাশকের বকেয়া বিল পরিশোধ করবেন কি করে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

কাশেমপুর গ্রামের শহীদুল ইসলাম বলেন, উপর থেকে বৃষ্টি নেমে আসেনি। ফলে সেচ, সার, কীটনাশক ব্যবহার করেও ধান ভাল হয়নি। তাতে আবার বেঁশো পোকার উৎপাত। গতবছর জলাবদ্ধতায় ধান হয়নি, এবার খরায় ধান হয়নি। উভয়সঙ্কটে পড়েছেন তিনি। ইচ্ছা করলে কৃষি বিভাগ যথাসময়ে উদ্যোগ নিয়ে সম্পুরক সেচ ব্যবস্থায় উদ্যোগ নিলে তাদের এত বড় ক্ষতি হত না। ধান না হওয়ায় যেমন মানুষের খাদ্য সঙ্কট বাড়বে, তেমনি খড় বিচালীর অভাবে গবাদি পশু বাঁচানো মুশকিল হয়ে যাবে।

একইভাবে যোগরাজপুরের সাবান আলী জানান, অনাবৃষ্টি, সার ও কীটনাশকের অধিক মূল্যের ফলে বিঘা প্রতি আট হাজার টাকা খরচ করেও খেতে কাচি লাগাতে হয়নি। এবার তাদের মাথায় হাত। এ অবস্থা শুধু সাতক্ষীরা সদরের নয়, কালিগঞ্জ, দেবহাটা, তালা, কলারোয়া ও দেবহাটাতেও। আমন ধানের চাহিদা অনুযায়ি উৎপাদন না হওয়ায় আগামিতে ধান চাষ না করার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছেন দেবনগরের পরান দাস, ছাতিয়ানতলার কার্তিক দাস, শালে¬্য গ্রামের মহব্বত আলী, মাছখোলার শাহাদাৎ হোসেনসহ কয়েকজন কৃষক।

জগন্নাথপুর গ্রামের শ্যালো মেশিনের মালিক আজগার আলী জানান, কোন বছর আমন ধানে সেচ লাগেনি। বৃষ্টি না হওয়ায় তার মেশিনে যথেষ্ট চাপ ছিল। তাতে তার লাভ হয়নি, বরং লোকসান হয়েছে। কারণ কৃষকদের ধান না হলে তারা বকেয়া সেচের টাকা দিতে হালখাতায় উঠবে না।

শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, চলতি মৌসুমে তার ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার একর আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ও লবণাক্ততার কারণে ৫ থেকে ৬’শত বিঘা জমিতে ধান হয়নি বললেই চলে। কৃষি বিভাগ চাষীদের পাশে না দাঁড়ালে আগামি বার তারা ধান চাষে বিরত থাকতে পারে।

সাতক্ষীরা খামারবাড়ির উপপরিচালক মোঃ জামাল উদ্দিন জানান, আমন ধান পুরোপুরি বৃষ্টি নির্ভরশীল। পরিমানের তুলনায় দেরীতে বৃষ্টি হলেও তা অপ্রতুল। সদর উপজেলার জগন্নাথপুর, শিবপুর, কাশেমপুর, নেবাখালিসহ কিছু স্থানে সামান্য কিছু জমিতে ধানের ফসল ভালো হয়নি। বৃষ্টি দেরীতে হওয়ায় ও লবণাক্ততা এর মূল কারণ। কৃষি বিভাগ সম্পুরক সেচের ব্যবস্থা করায় অনেককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা গেছে। দ্রুত ধান কেটে আগাম সরিষার চাষের প্রণোদনার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে কৃষকদের। তা ছাড়া ওইসব জমিতে ইরি ও সবজি চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!