খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় এসবির রিপোর্টার নিহত
  চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে

সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৩ দফা প্রস্তাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসনে জেলা নাগরিক কমিটির ১৩ দফা প্রস্তাবনা বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা সোমবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির এর উপস্থিতিতে লিখিত প্রস্তাবনা পেশের সময় উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিম, সদস্য সচিব এড. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ, এড আজাদ হোসেন বেলাল, অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, শেখ হারুন-অর রশীদ, ওবাদুস সুলতান বাবলু, এম কামরুজ্জামান, এড আল মাহমুদ পলাশ, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, জি এম মনিরুজ্জামান, এড মনির উদ্দীন, আবেদুর রহমান, আলীনুর খান বাবুল প্রমুখ।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, দুই দিনের বৃষ্টিতে পুরো শহর জলাবদ্ধ হয়ে যায়, ঘরে ঘরে পানি উঠে যায়, এটা কি করে হতে? একটা জেলা শহর, একটা পৌরসভার নাগরিক সেবার মান এমন পর্যায়ে হতে পারে না।

সাতক্ষীরার চলমান জলাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে নবাগত জেলা প্রশাসক বলেন, সাতক্ষীরায় কোন ড্রেনেজ সিস্টেমই নেই। ড্রেন নেই। পানিটা যাবে কোথা দিয়ে। আমার বাসার ভিতরে যে পানি সেটা বের হওয়ার কোন পথ নেই। এটা সব জায়গার চিত্র। যে যখন বাড়িটা তৈরী করেছে, সে তার মত করে তৈরী করেছে।

তিনি বলেন জলাবদ্ধতা সমস্যা দীর্ঘদিনের সমস্যা। প্রতিবছরই যেটা হয়, বৃষ্টি হয়-পানি জমে, আমরা কিছু বাঁধ কাটি, তাৎক্ষণিক পানি সরানোর ব্যবস্থা করি। কিন্তু এভাবে হবে না। সমন্বিত প্লান করে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার, দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান দরকার। এজন্য সবার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে হবে।

জেলার করোনা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক আরো বলেন, গত দুই মাস সাতক্ষীরা জেলায় লকডাউন চলছে। মানুষকে জোর করে ঘরে আটকে রাখা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি মাস্ক পরার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্ঠিতে সকলকে ভূমিকা রাখার আহবান জানান।

সাতক্ষীরা শহর ও পাশ্ববর্তী এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১, ২, ৬-৮, ৬-৮ (এক্সটেনশন)-এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পের সুফল পেতে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির ১৩দফা প্রস্তাবনা প্রদানকালে জেলা প্রশাসক এসব কথা বলেন।

মতবিনিময় সভায় জেলা নাগরিক কমিটির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী গত ২০২০ সালের ২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ একনেকের বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাতক্ষীরা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৪ কি. মি. ড্রেজিং ও পুনঃখননের মাধ্যমে বেতনা নদী এবং ৩৭ কি.মি. ড্রেজিং ও পুনঃখননের মাধ্যমে মরিচ্চাপ নদীর পলি অপসারণ করা হবে। পোল্ডার অভ্যন্তরে বেতনা-মরিচ্চাপ নদীর সাথে সংযুক্ত ৩৪৪.২২ কি.মি. বিভিন্ন খাল সংস্কার ও পুনঃখনন করা হবে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা রক্ষার্থে বিভিন্ন পোল্ডারে বিভিন্ন লোকেশনে ৬টি রেগুলেটর/স্লুইসগেট পুণর্গঠন করা। বিদ্যমান রেগুলেটর/স্লুইস গেটের মেরামত/পুনরাকৃতিকরণ ২১টি। বন্যার ঝুঁকি থেকে এলাকাকে রক্ষার জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারের পরিকল্পনা ১১৩.১২ কি.মি.। বেতনা নদীর ডান তীরের ২ নং পোল্ডারে ঢাল প্রতিরক্ষামূলক কাজ ১.৭০ কি.মি.। আরসিসি ঘাটলা নির্মাণ করা হবে ৪টি।

জেলা নাগরিক কমিটির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, উক্ত প্রকল্পভুক্ত বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী, সাপমারা, লাবন্যবতী, কোলকাতার খাল, প্রাণ সায়র খালসহ ৮২টি খালের প্রায় সবকটিই গত ১০ বছরের মধ্যে খনন করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, কর্মসৃজন প্রকল্প, ব্লু-গোল্ডসহ বিভিন্ন এনজিও এগুলো বাস্তবায়ন করে। বেড়িবাঁধও নির্মাণ করে। কিন্তু সেগুলো কোন উপকারে আসেনি। বরং বেতনা-মরিচ্চাপ নদীর ভিতরে অবস্থিত ৩০০-৪০০ ফুট চওড়া জলাধারের মাঝ বরাবর ৫০-৬০ ফুট খনন করে বাকী অংশ ভরাট করা হয়েছে। খালগুলোরও একই অবস্থা। একারণে বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী খননের পর থেকেই সাতক্ষীরা শহরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

এ কারণে সাতক্ষীরা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমান প্রকল্পটি অর্থবহ করা এবং উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে গত ২৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে তৎকালীন মাননীয় জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করে একটি প্রস্তাবনা পেশ করে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ উক্ত প্রস্তাবনার বিষয়ে কোন রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যে কারণ সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পুনরায় ১৩ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!