খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
  ঢাকা শিশু হাসপাতালে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট
  রাজধানীর খিলগাঁওয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
  জাতীয় পতাকার নকশাকার, জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

সফর চলাকালীন অবস্থায় আদবসমূহ (পর্বঃ ২৯)

হাফেজ মাওলানা মুফতি জুবায়ের হাসান

১. প্রত্যেক উঁচু জায়গায় (উঠার সময়) ‘তাকবীর’ বলা; আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: এক ব্যক্তি আরজ করলেন: হে আল্লাহর রাসূল ﷺ! আমি সফর করার পরিকল্পনা করেছি, কাজেই আমাকে উপদেশ দিন; তখন তিনি বললেন: তুমি অবশ্যই তাকওয়া তথা আল্লাহকে ভয় করার নীতি অবলম্বন করবে এবং প্রত্যেক উঁচু জায়গায় (উঠার সময়) ‘তাকবীর’ বলবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪৪৫

২. যখন কোনো মানুষকে ভয় করবে, তখন বলবে: হে আল্লাহ! আমরা তাদেরকে তোমার মুখোমুখি করছি এবং তাদের অনিষ্টকারিতা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি; কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দুআ পাঠ করতেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৩৭

৩. সফরে থাকাকালীন আল্লাহ তা‘আলার নিকট বেশি বেশি দুআ করা এবং তাঁর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ চাওয়া; কেননা, সফর অবস্থায় বিশেষভাবে দুআ কবুল করা হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন:
ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ
অর্থাৎ তিনটি দুআ কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই: মাযলুমের দুআ, মুসাফিরের দুআ এবং পিতামাতা কর্তৃক তার সন্তানের জন্য করা দুআ। -জামে তিরিমিযী, হাদীস ৩৪৪৮

৪. যখন মুসাফির কোন স্থানে অবস্থান করার জন্য অবতরণ করে, তখন বলবে: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাগুলো দ্বারা সে বস্তুর অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই, যা তিনি সৃষ্টি করেছেন।
রসূলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেনঃ
عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ نَزَلَ مَنْزِلاً ثُمَّ قَالَ أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ لَمْ يَضُرَّهُ شَيْءٌ حَتَّى يَرْتَحِلَ مِنْ مَنْزِلِهِ ذَلِكَ
অর্থঃ কোন লোক যদি কোন জায়গায় অবতরন করে বলে, আমি আল্লাহ তা’আলার সম্পূর্ণ বাক্যর দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করি তাঁর সকল সৃষ্টির ক্ষতি হতে, সে উক্ত জায়গা ত্যাগ করা পর্যন্ত কোন কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪৩৭
আর যখন সফর অবস্থায় রাতের আগমন ঘটবে, তখন এই দুআ পাঠ করবে:
يَا أَرْضُ رَبِّي وَرَبُّكِ اللَّهُ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شَرِّكِ وَشَرِّ مَا فِيكِ وَشَرِّ مَا خُلِقَ فِيكِ وَمِنْ شَرِّ مَا يَدِبُّ عَلَيْكِ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ أَسَدٍ وَأَسْوَدَ وَمِنَ الْحَيَّةِ وَالْعَقْرَبِ وَمِنْ سَاكِنِ الْبَلَدِ وَمِنْ وَالِدٍ وَمَا وَلَدَ
হে যমীন! আমার ও তোমার রব্ব আল্লাহ। আমি আল্লাহর নিকট তোমার অনিষ্ট হতে, তোমার ভেতরের খারবী হতে, তোমার মধ্যে সৃষ্ট অনিষ্ট হতে এবং তোমার বুকে যেসব অনিষ্ট চলাফেরা করে তা হতে আশ্রয় চাইছি। আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই সিংহ, বিষধর কালো সাপ, বিচ্ছু, তোমার শহরে অনিষ্ট জন্মদানকারী অধিবাসী ও এদের বংশধরের অনিষ্ট হতে -সুনানে আবু দাউদ, ২৬০৩

৫. যখন কোনো শহরের প্রতি দৃষ্টি পড়বে, তখন বলবে: হে আল্লাহ! আমাদের জন্য তাতে স্থিতি ও প্রশান্তি দান কর এবং সেখানে আমাদের জন্য হালাল রিযিকের ব্যবস্থা কর। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এ শহরের কল্যাণ ও তার মধ্যকার কল্যাণ প্রার্থনা করছি; আর তোমার কাছে তার অকল্যাণ ও তার মধ্যকার অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চাই। কেননা, নবী করীম ﷺ এ দুআ পাঠ করতেন।

৬. যখন তার সফরের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে, তখন দ্রুত নিজ শহর ও পরিবার-পরিজনের নিকট প্রত্যাবর্তন করা; রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: সফর আযাবের একটি অংশ। যা তোমাদেরকে নিদ্রা, আহার ও পান থেকে বিরত রাখে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন নিজের কাজ সেরে তাঁর পরিজনের নিকট দ্রুত চলে আসে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩০০১

৭. যখন (সফর থেকে) ফিরে আসবে, তখন তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর দিবে এবং বলবে:
آيِبُونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ سَاجِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ، صَدَقَ اللَّهُ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ
আমরা প্রত্যাবর্তনকারী ও তাওবাহ্‌কারী, ‘ইবাদতকারী, আমাদের প্রভুর উদ্দেশ্যে সাজদাহ্‌কারী ও প্রশংসাকারী। আল্লাহ্‌ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, স্বীয় বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সকল শত্রুদলকে পরাজিত করেছেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৯৭
এই দুআ বারবার পাঠ করবে; কেননা, নবী করীম ﷺ এ কাজটি করতেন।

৮. সফর থেকে রাতের বেলায় পরিবারবর্গের নিকট ফিরে না আসা; বরং তার পূর্বে কাউকে পাঠিয়ে তাদেরকে সংবাদ দেয়া, যাতে তার আগমন হঠাৎ করে তাদেরকে হতভম্ব করে না দেয়; এটা ছিল নবী ﷺ এর সুন্নাত। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮০১

৯. নারী তার স্বীয় মাহরাম পুরুষ সাথী ছাড়া তিনদিন ও তিন রাতের দূরত্বের পথ (৭৮ কি.মি.) সফর করবে না; কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ تُسَافِرَ سَفَرًا يَكُونُ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ فَصَاعِدًا إِلاَّ وَمَعَهَا أَبُوهَا أَوْ أَخُوهَا أَوْ زَوْجُهَا أَوِ ابْنُهَا أَوْ ذُو مَحْرَمٍ مِنْهَا
আল্লাহ ও আখিরাতের উপর যে সকল মহিলা ঈমান রাখে, তার সাথে তার পিতা অথবা তার ভাই অথবা তার স্বামী অথবা তার ছেলে অথবা তার কোন মাহরাম আত্মীয় না থাকলে সে সকল মহিলার জন্য তিন দিন বা তার বেশি সময় (একাকী) সফর করা বৈধ নয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪০; জামে তিরমিযী, হাদীস ১১৬৯

আল্লাহ তায়ালা আমল করার তাওফিক দান করুন, আমীন।

 

ইমাম ও খতিব
কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সদস্য, আল মাহমুদ ফাউন্ডেশন, খুলনা।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!