খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

সন্তান হত্যার অভিযোগে গর্ভধারিণী মা যখন কাঠগড়ায়

নিপা মোনালিসা

পৃথিবীতে সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আর বিশ্বাসযোগ্য আশ্রয়স্থল হচ্ছে মায়ের কোল। মায়ের চেয়ে আপন এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই (সৃষ্টিকর্তা ছাড়া)। যে মা তার মমতা দিয়ে সন্তানকে সকল বিপদ-আপদ থেকে আগলে রাখেন সেই মায়ের বিরুদ্ধে যদি সন্তান হত্যার অভিযোগ ওঠে, তবে আর ভরসা কোথায় থাকবে!

একের পর এক সন্তান হত্যার অভিযোগ উঠেছে গর্ভধারিণী মায়ের বিরুদ্ধে। সাথে রয়েছেন জন্মদাতা বাবাও। বৃহত্তর খুলনায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিন শিশু সন্তান হত্যার ঘটনায় মা-বাবারা কাঠগড়ায়। মূলত: সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ এবং সুশাসনের অভাব, ভবিষ্যৎ জীবনের অনিশ্চয়তা, খোদাভীতি ও ধর্মীয় জীবন থেকে বিমুখতা, পরকীয়া, দারিদ্রতাসহ নানা কারণে এ ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে বলে দাবি করছেন অনেকেই।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে জানা যায়, খুলনার বটিয়াঘাটার ফুলতলা গ্রামে পুলিশ কর্মকর্তা অমিত কুমার মন্ডলের ছেলে অনুভব মন্ডল যশ (৪) হত্যার ঘটনা ঘটে। গত ২৯ নভেম্বর রাসপূজায় মায়ের সাথে বেড়াতে এসে পরদিন সকালে মায়ের ঘর থেকেই তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।



এ বিষয়ে পুলিশ নিহত শিশু যশের মা তনুশ্রী মন্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদে তার আচরণে সন্দেহজনক ও রহস্যময় মনে হওয়ায় মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায়। এর আগে মঙ্গলবার সকালে এএসআই অমিত কুমার মন্ডল বাদী হয়ে তার ভাই অনুপ মন্ডলকে আসামী করে বটিয়াঘাটা থানায় মামলা (নং-১) দায়ের করেন।

এ ঘটনায় সর্বশেষ রবিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে পুলিশের সাতদিনের আবেদনের বিপরীতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক নয়ন বিশ্বাস তনুশ্রী মন্ডলের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে মামলার প্রধান আসামী নিহত যশের কাকা অনুপ মন্ডলের ৫ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে গত ১৫ নভেম্বর ১৭ দিনের নবজাতক চুরি ও হত্যার নানা জল্পনা কল্পনা শেষে গত ২৭ নভেম্বর আদালতে হত্যার বর্ণনা ও দায় স্বীকার করেন নবজাতক সোহানার মা শান্তা আক্তার পিংকি। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই পূর্বের বিয়েসহ বিভিন্ন পারিবারিক ঝামেলায় নিজেই নিজের সন্তানকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেন তিনি।



এদিকে গত ২৮ নভেম্বর (শনিবার) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাওয়ালখালীতে দিনদুপুরে চুরি হওয়ার ৩৬ ঘন্টা পর নবজাতক শিশু সোহানের মৃতদেহ বাড়ির বাথরুমের সেফটিক ট্যাংকি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শিশু’র বাবা সোহাগ হোসেন ও মা ফতেমা খাতুনের দেয়া তথ্য মতে ওইদিন ভোর রাত ১টার দিকে পুলিশ ওই মৃতদেহ উদ্ধার করে। এতে পুলিশ সন্দেহভাজন শিশুর বাবা সোহাগকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নিজের শিশু সন্তানকে স্বামী স্ত্রী মিলে হত্যার কথা স্বীকার করে। জন্মের পর থেকেই শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তারা শিশুটিকে হত্যা করে বলে জানায় সোহাগ।

এ ব্যাপারে নারীনেত্রী এড. শামীমা সুলতানা শীলু বলেন, বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে পারিবারিক বন্ধনের অবক্ষয়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকা, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীল না হওয়া, অবৈধ সম্পর্ক, নৈতিকতার অভাব, ধর্মীয় অনুশাসন ও পারিবারিক শিক্ষার অভাবে এ ধরনের অপরাধ ঘটছে। এ বিষয়ে প্রশাসন আর আইনের যথাযথ প্রয়োগ দরকার। এছাড়া আমরা প্রত্যেকে যদি প্রত্যেকের স্থান থেকে সহনশীল হই তাহলে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমবে বলে তিনি আশা করেন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এড. মোমিনুল ইসলাম বলেন, মূলত: নৈতিকতার অভাব, পারিবারিক যৌথ প্রথা ভেঙে যাওয়ায় উপযুক্ত অভিভাবকের অভাব, দারিদ্রতা, অপ সংস্কৃতিই এসব ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়া বিচার কার্যের বিলম্বতার জন্যও মানুষ অপরাধ করতে ভয় পায় না। যদি দ্রুত বিচার কার্য পরিচালনা করা যেত তাহলে এ ধরনের অপরাধও কমে যেত। আর নিজ সন্তানকে হত্যা করার মত সামাজিক বিপর্যয়ও ঘটতো না।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!