খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র

সখী, ভালবাসা কারে কয়….

রুমা ব্যানার্জী

সবে চোখটা লেগে এসেছে, এমন সময় টিং করে বেজে উঠলো ফোন। কিছুটা বিরক্ত আদ্রিজা মনে মনে বলল —- উফফফ্ আবার কে এখন মেসেজ করল?

“কিছুতেই দেখবো না ” ভাব নিয়ে ফোনটা উল্টে বালিশের পাশে রেখে ঘুরে শুলো। এমনিতেই আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। এখন একটু না ঘুমালেই নয়। নটায় লগ-ইন করতে হবে, অনেক গুলো মিটিং আছে আজ।
আবার টিং করে মেসেজ ঢুকলো।

দেখবো না দেখবো না করেও ফোনটা খুলেই ফেলল অদ্রিজা।
সবুজের মেসেজ…. কি রে ঘুমিয়ে পড়লি?
…….ইসস, ঘুমিয়েই গেলি, দূর বাবা, ওঠ না

টাইপ করল অদ্রিজা, ঘুমাতে যাচ্ছিলাম, বল
……ঘুমাস না
…একটু না ঘুমালে হবে বল? আজ পর পর মিট আছে
…….তোকে দেখবো, কত দিন দেখি না

…..মানে টা কি, রোজ অন্তত চারবার ভিডিও কল আর অসংখ্য ছবি তোকে পাঠাই। তবুও বলবি….
…….ধুস অমনি না, ওটায় তোর গায়ের গন্ধটাই তো পাই না। জানিস, তোর সঙ্গে কথা সেরে বারান্দায় দাঁড়িয়েছি অমনি এক ঝলক হওয়া, তাতে তোর গায়ের গন্ধ!!! সে তুই আমাকে পাগল ভাবলে ভাব কিন্তু আজ শহর জুড়ে শুধুই তুই, আর তোর গন্ধ। মনে হলো তোর গায়ের সেই চাঁদের আলো মাখা গন্ধটা যেটা সকালের আলোয় মিশে বসন্তের গন্ধ হয়ে যায় সেটা চাই। এক্ষুনি চাই। ঠিক তিন মিনিট সময় দিচ্ছি, নিচে নেমে আয়। তোকে ভীষণ দরকারি একটা কথা জানাবার আছে।
……. মানে
…… মানে হলো আমি তোর বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছি। এক্ষুণি নেমে আয়।
…….উফফ্। তুই না। দাঁড়া। আসছি।

সবুজটা চিরকাল এমন পাগলাটে। একবার মেট্রোতে ফিরছিল বিকেল ৫ তখন। দুটো কামরার মাঝের সংযোগে দাঁড়িয়ে প্রতিদিনের মতো। হঠাৎ বৃষ্টি, ঝিরঝির। পাগলাটে দু’জন নেমে পড়ল ময়দানে। তারপর, সবটা যেন কবিতা।
ভেজা ট্রামলাইনে হাত ধরে খুব হেঁটেছিল দু’জনে। সেদিন কোনও কথাই হয়নি। শুধু দুটো মন ভরে ছিল অনুভবে। দু’জনে দু’জনের সত্তার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল নিমিষেই, লেখা হয়েছিল অক্ষরহীন কবিতা।

অদ্রিজা নেমে এসে দেখল আলুথালু চুল, গায়ে একটা কোঁচকানো টি শার্ট আর একটা জগার পড়ে বাইকে বসে আছে সবুজ।
অদ্রিজাকে দেখেই এগিয়ে এসে হাত দুটো ধরে, হাতের তালুতে আবেগে ঠোঁট ছোঁয়াল সবুজ।
—- এই কি করছিস
—- আদর করলাম
—- সেতো বুঝলাম কিন্তু তাই বলে রাস্তায়? মাথাটা গেছে। চল।

সবুজকে জাপটে ধরে বাইকে উঠে বসল অদ্রিজা। ছুটল দুচাকা যান। সোজা রাস্তা ধরে সদ্য গজিয়ে ওঠা শহরের দিকে। শহরটা তখনো আধ ঘুমে। পাখিরা সবে আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠেছে। পালকে সবে ছুঁয়েছে নরম রোদেলা আলো। এমন সময় এক পশলা ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি।
একটা চায়ের দোকানে তখন লোকটা আগের দিনের ছাই ঝাড়ছে উনান থেকে।
সবুজ থামলো।
দোকানী বলল—-দেরি আছে দাদা।
—-সমস্যা নেই, একটু বেঞ্চিটায় বসি
—- বসেন

সবুজ অদ্রিজার হাত টেনে বলল—– একপশলা বৃষ্টি ভেজা সকাল সঙ্গে তুই, উফফ আমি পাগল পাগল হয়ে আছি। আর এখনই সেই কথাটা তোকে বলতে চাই।
— বল
— শোন পাগলী, তুই এবার থেকে আমার ভালোবাসার জন নোস
আকাশ থেকে পড়ল অদ্রিজা— মানে
—– মানে টা বোঝার চেষ্টা কর। ভালোবেসে ভালো থাকা খুব কঠিন। ভালবাসা চিরকাল আপস করেছে ভালো থাকার সঙ্গে। দুটো একসঙ্গে আমি পারবোনা।

যতবার তোর ওই এলোমেলো চুলগুলো মুখে এসে পড়ে, আমি সরিয়ে দি, তখন হাতে তোর গন্ধটা মেখে নি। তোর দুচোখে চোখ রাখলে আমি প্রেমের সাগর ভেসে যাই, তোর হাতে হাত রাখলে আমার তোর অনুভূতি মিলে মিশে এক হয়ে যায়। তোর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলে আমার সব অনুচ্চারিত কথা গুলো ভাষা পায়। ভালোবাসি কথাটা হাল্কা নয় মটেইকিছুদিন চোখে চোখ রেখে, হাত ধরে, স্বপ্ন দেখেই বলে ফেলা যায়না- ভালোবাসি।

এমনও হয়, কখনো খুব চেষ্টা করেও মুখ ফুটে বলা যায় না ভালোবাসার কথা, অথচ ভেতরে একটা পাখি প্রচন্ড অস্থিরতায় ছটফট করে।
এই পাখিটা কোন পাখি? এই পাখিটা মনপাখি। কখনো অস্থিরতা কমাতে বলা যায় ভালোবাসি।

কিন্তু যেই তোকে ভালবাসি বলে ফেলব ওমনি কেমন একটা অধিকার বোধ ঘিরে ধরে। ভালবাসা যখন সম্পত্তি হয়ে যায় তখন ভালবাসার নটে গাছটি মুড়িয়ে যায়। তখন থাকে শুধু দখল রাখার লড়াই। দখলের লড়াই, ভালো থাকার লড়াই, এত লড়াই আমি পারবো না। তার থেকে প্রেম ভালো।
তোর আমার প্রেমে থাকবেনা ছেড়ে যাওয়ার অজুহাত। থাকবে না হারাবার ভয় বা তৃতীয় পক্ষের হাত। থাকবে শুধু একে ওপরের জন্য ভালোবাসা, ভালোবাসা আর ভালোবাসা আর শুধু ভালোবাসার বিশ্বাস।

তোর হাত ধরে সেই অনিন্দ্য সুন্দর প্রেমের দিকে হেঁটে যাব। যাবি?
—- বেশ যাব। তাহলে আমাকে কি করতে হবে?
— বিশেষ কিছু না। শুধু লিপ্সটিকহীন ঠোঁটের কোণে আধ ইঞ্চির কম, যে সরল হাসিটা মেখে থাকিস সেটা সব সময় পরে থাকবি আর চোখে পরবি ভালোবাসার কাজল। তাতে হয়তো এক ফোঁটা কলঙ্ক থাকবে। তা থাকুক। আর মাঝ রাতে একটা অনর্থক নাম যদি ওই মনটায় মিট মিট করে জ্বলে নেভে, একটু টনটন করে ওঠে তাহলেই বুঝে নিবি তুই আমার প্রেমিকা হয়ে গেছিস। বুঝলি?
—বুঝলাম। প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে– এই স্টাইলে প্রেম চাই তোর।

কিন্তু মশাই, প্রেম একটা অনুভূতি বা আবেগ, আর বিয়ে একটা পাশে থাকার অঙ্গিকারের সামাজিক বা আনুষ্ঠানিক রূপ। সমাজে থাকতে হলে নিয়ম মানতে হয় বুঝলি? দেশে জন্মেই নাগরিক হলেও নাগরিকত্বের প্রমাণ পত্র যেমন জরুরি, ঠিক তেমন বিয়ে হচ্ছে ভালবাসার অঙ্গিকারের নাগরিকত্ব প্রমাণের আনুষ্ঠানিক রূপান্তর। বিয়ে আর প্রতিশ্রুতি কিন্তু সমতুল্য। বিয়ে করলে রোজ ভালোবাসি বলার দরকার হবে না, সেটা কাজের প্রতিফলিত হবে। ভালবাসাটা অভ্যাসে পরিণত হবে। প্রেমিক সর্বদাই প্রেমে মশগুল থাকে তোর মত, বিয়ে সেখানে জরুরি নয়। কিন্তু বিয়েটা টিকিয়ে রাখতে ভালবাসার বিকল্প নেই।

— ধুসসস্ বিয়ে করলেই ভালবাসা জানালা গলে ধা। তারপর সারা জীবন বিড়ি ফোঁকো আর বিরহের কবিতা লেখ। আর সেই সুযোগে টুক করে আর একজন ঢুকে পড়বে জীবনে। তোকে আমি ভাগ করতে পারব না, এই বলে দিলাম।
—- থাক। একটাকে সামলাতেই প্রাণ যাচ্ছে আবার একজন?
—- তার থেকে চল আমরা পালিয়ে যাই। যাবি? নীল পাহাড়ের চূড়া ছুঁয়ে আসি। যাবি?
—- পাহাড়ের চূড়া ছুঁয়ে দেখতে হলে পাহাড় ডিঙাতে হবে মশাই। তার থেকে বরং সুনীল বাবুর মত একটা পাহাড় কিনে নে।
—দারুণ আইডিয়া। এই জন্যই তোকে এত ভালবাসি রে। এক্ষুণি একটা বিজ্ঞাপন দিতে হবে। দে কাগজ দে। পেন দে। তার আগে একটা চুমু দেয়ে দে চট করে
—–বয়েই গেছে
—–বর হলে ঠিক দিতিস, নেহাত প্রেমিক তাই…
—–উফ্.. তোকে নিয়ে আর পারিনা। এবার চল আমার কবি প্রেমিক। মা উঠে পড়লে কুরুক্ষেত্র করবে।
—–চল

সবুজ গুনগুনিয়ে উঠল…
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী
‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’-
সখী, ভালোবাসার কারে কয়!

 

 

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!