খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি, খুলনায় ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে
  চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় হিট স্ট্রোকে ২ জনের মৃত্যু
  দাবদহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ল ৫ দিন, খুলবে ২৮ এপ্রিল

শ্রম ও একাগ্রতায় সফল নারী মমতাজ শিরিন ময়না

একরামুল হোসেন লিপু

তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, যুব সংগঠনের নেতা, সংস্কৃতিকর্মী, উচ্চশিক্ষিত, খুলনা বেতারের নিয়মিত সংবাদ পাঠক, নাট্যশিল্পী, উপস্থাপক, আবৃত্তিকার।এমন বহুগুনে গুনান্বিত মানুষটি জাতীয় পর্যায়েও স্বীকৃতি পেয়েছেন, অর্জন করেছেন স্বর্ণপদক। সফল এ মানুষটি দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মমতাজ শিরিন ময়না। তিন সন্তানের গর্বিত জননী, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। কঠোর শ্রম আর একাগ্রতায় নানা বাধাবিপত্তি অতিক্রম করেছেন স্পর্শ করেছেন সফলতার স্বর্ণ কাঠি।

মমতাজের জন্ম ও বেড়ে উঠা নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বিল বাউস গ্রামে। একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন কালিয়া শহীদ আব্দুস সালাম ডিগ্রী কলেজে। বৈবাহিক সূত্রে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামে আসার পর সরকারি বি এল কলেজ থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড কোর্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। এ কলেজের প্রথম মহিলা নির্বাচিত জিএস ছিলেন। এলএলবি সম্পন্ন করেছেন খুলনা ‘ল কলেজ থেকে। সারাদিন সংসার সামলিয়ে,  অদম্য ইচ্ছায় রাত ১০টার পর পড়াশোনা করে প্রতিটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে খুলনা গেজেটের বিশেষ আয়োজন সফল নারীর গল্পে শেখ মমতাজ শিরীন ময়না তাঁর সফলতার পিছনের গল্প বলতে গিয়ে বলেন, আমি আজ এ পর্যায়ে এসেছি বিপদসংকুল অনেক পথ, অনেক ধৈর্য্য অতিক্রম করে। পুরুষশাসিত সমাজে একটা মেয়ের এই পর্যায়ে পৌঁছাতে গেলে সহজ একটি কাজ নয়।

তিনি বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই সংস্কৃতির সাথে জড়িত ছিলাম। ছোটবেলায় কবিতা আবৃত্তি, একক অভিনয়, গল্প বলা, রচনা, উপস্থিত বক্তৃতা এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। ১৯৯০ জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় উপস্থিত অভিনয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক পায় শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে। এছাড়া উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেছি; সব সময় প্রথম হয়েছি।

নব্বই দশক থেকে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন মমতাজ। তিনি বলেন, বিয়ের পর পরপর তিনটা বাচ্চা হওয়ার পর আমার ভেতরে ইচ্ছা হলো কিছু একটা করা দরকার। কিন্তু এই দরকার যে শুধু রান্নাবান্না সেটা নয়। এই যে বাচ্চা মানুষ করছি, তারাও একসময় বড় হয়ে যাবে। আসলে আমার তো কিছু হলো না। কিছু একটা করা দরকার। ভীতর থেকে এমন একটা তাগিদ অনুভব করার পর থেকেই সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত হতে থাকি। তারই ধারাবাহিকতার একপর্যায়ে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাাচিত হই। এ ক্ষেত্রে আমার স্বামী শেখ আল মামুন ও শ্বশুরবাড়ির অনেক সমর্থন পেয়েছি।

তিনি বলেন, আমি চেয়েছি আমার মধ্যে যা আছে, আমার ছেলে মেয়েদের মধ্যেও সেটা থাকা দরকার আছে। আমার শিশুদেরও শ্রেষ্ঠ শিশু হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছি। এজন্য ছোটবেলা থেকেই তাদেরকে সেভাবে গড়ে তুলেছি। ওদেরকে আবৃতি শিখিয়েছি। প্রতিটা বিষয়ের উপর স্ক্রিপ্ট লিখে ওদেরকে শিখিয়েছি। এক্ষেত্রে স্বামীর কাছ থেকে অনেক সাপোর্ট পেয়েছি। ২০১৪ এবং ১৫ সালে পরপর ২ বার আমার দুটি সন্তান জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে স্বর্ণপদক নিয়েছেন।

নারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সমাজে নারীরা পিছিয়ে আছে, আসতে পারে না এটা নয়। যোগ্যতাসম্পন্ন, সুশিক্ষিত, উদ্যোগী, কর্মতৎপর কর্মঠ নারীগুলো ভিতরে চুপসে না থেকে সামনে এগিয়ে আসুন। জনপ্রতিনিধি, উদ্যোক্তা রাজনীতি, চাকুরীর ক্ষেত্রে, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে আজ নারীর সরব উপস্থিতি বিরজমান। নারীদের জন্য অনেক অবারিত সুযোগ আছে। নারী বলে সে ভালো জায়গায় আসতে পারে না। এটা আমি বিশ্বাস করিনা। একজন নারী যদি যোগ্য হয়, সেই যোগ্যতাই তার সামনে এগিয়ে আসার বড় প্রমাণ। নারীরা পিছিয়ে আছে কে বলেছে? সব জায়গায় যোগ্য নারীর বিচরণ। নারীদের পিছিয়ে থাকার কোন প্রশ্ন আসে না, চুপসে থাকার কোন প্রশ্ন আসে না। আপনারা এগিয়ে আসুন৷ নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলুন। নিজেকে সুশিক্ষিত করুন। দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টান।

তিনি বলেন, আমার নারীরা সুশিক্ষিত হবে। সুন্দর একটা মানসিকতা পোষণ করবে। তাদের মাঝে উন্নত চিন্তা ধারণা জাগবে। দেশপ্রেমে তাদের চেতনাটা থাকবে। জীব বৈচিত্রের ভীতরে তার সেই জ্ঞানটা রাখতে হবে, তার কোন কাজটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, সমাজের জন্য ক্ষতিকর, সর্বোপরি পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!