খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি, খুলনায় ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে
  চুয়াডাঙ্গায় হিট স্ট্রোকে প্রাণ গেল ১ জনের
  দাবদহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ল ৫ দিন, খুলবে ২৮ এপ্রিল
কেসিসি নির্বাচন

শেষ প্রচারণায় যা বললেন মেয়রপ্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক 

খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন আগামী ১২ জুন। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন ছিল শনিবার (১০ জুন)। শেষদিনের প্রচারণায় নেমে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। দৌড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। আধুনিক ও বাসযোগ্য নগরী, মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত নগরী, গ্রিন-ক্লিন সিটি, সুন্দর ও পরিকল্পিত নগর গঠনসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা। প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়িতে ভাসাচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও।

কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক, জাতীয় পার্টি মনোনীত মো. শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মো. আব্দুল আউয়াল ও জাকের পার্টি মনোনীত এসএম সাব্বির হোসেন এবং একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, আমি নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছি, ২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী আমাকে ২৪০০ কোটি টাকা দিয়েছেন। এই টাকা দিয়ে করোনাকালে আমরা কাজ করতে পারিনি। পরে ৩১টি ওয়ার্ডে ৪১৮টি রাস্তা করেছি। ২০০-২৫০টি রাস্তা-ড্রেনের কাজ এখন চলমান। এই কাজগুলো করতে গেলে আমাদের সময়ের প্রয়োজন। আমি খুলনাবাসীর কাছে আবেদন জানাই আমাদের চলমান কাজ সমাপ্ত করার জন্য ১২ জুন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য দায়িত্ব দেবেন।

খুলনা মহানগরীকে মাদকমুক্ত করতে সকলের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য ও মাদকমুক্ত মহানগরী গড়ে তোলা হবে। কোনো মাদক বিক্রেতা বা সেবনকারী জনপ্রতিনিধি হতে পারবে না। এদের কোনো রাজনৈতিক দল নেই। এরা সুবিধাবাদী ও জাতির শত্রু। ভোটের মাধ্যমে এদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে হবে।

তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য খুলনা মহানগরীকে স্মার্ট ডিজিটাল নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে না পারলে আমাদের বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, আজ প্রচারণার শেষ দিন। তবে ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবে কিনা আমরা শঙ্কায় আছি। এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আমরা মনে করেছিলাম খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আশা করেছিলাম গাজীপুরের মতো খুলনায়ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারকে বদলি করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। নির্বাচনকালে কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারীকে বদলি করা যায় না। যারা সরকারের পক্ষে কাজ করে তাদের দায়িত্ব রাখে, আর যারা নিরপেক্ষ কাজ করে তাদের বদলি অথবা ওএসডি করে ফেলে। এদেশে গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার নেই।

তিনি বলেন, নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি। প্রার্থীরা কালো টাকা ছড়াচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। প্রশাসন এখনো সরকারের আওতায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সরকারের বাহিরে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। তাদের ইচ্ছা থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না।

মধু বলেন, খুলনায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। ভোট সুষ্ঠু হবে না। ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে না যেতে পারলে ভোটের পার্সেন্টেজ কমে যাবে। আমরা নির্বাচনমুখী একটি দল। সরকার কতোদূর খেলা করতে পারে আমরা সেই পর্যন্ত দেখবো। জনগণ যদি ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে তাহলে লাঙ্গলের বিজয় হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি যে কাজটি করেছে, এটি তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। ভোটার-সমর্থকরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে। এতে বাধা দেওয়া ঠিক নয়।

বিএনপির চিঠির কারণে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমবে না বলে জানিয়েছেন হাতপাখার মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল আউয়াল। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে। আমরা সেই আশ্বাস বিশ্বাস করছি।

তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে এ অবস্থার পরিবর্তন করবো ইনশাআল্লাহ। অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে আগামী ১২ জুন হাতপাখা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আব্দুল আউয়াল বলেন, আমি বিজয়ী হলে শিল্পনগরী খুলনার ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব বাসযোগ্য মহানগর গড়ে তুলবো। সকল শ্রেণিূর মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে নাগরিকদের মাঝে ন্যায্যূসেবার ব্যবস্থা করবো। মানুষের মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার যথাযথ বাস্তবায়ন করব।

তিনি বলেন, নাগরিক সেবার সকল কার্যক্রমকে ওয়ার্ড পর্যায়ে পৌঁছে দিব। ওয়ার্ডভিত্তিক খোলা জায়গা, মাঠ, ঈদগাহ, কমিউনিটি সেন্টার, মশক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, পানি ও গ্যাস সরবরাহ লাইন স্থাপন, প্রয়োজনীয় সেবাকর্মী, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মাতৃসদনসহ জরুরি সকল সেবা প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজ করবো।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো আছে। তবে ভোটকেন্দ্রের ভেতরের চেয়ে বাহিরের পরিবেশ যদি কোনোভাবে খারাপ হয় সেক্ষেত্রে ভোটার উপস্থিতি কমে যাবে। মানুষ একেবারে বয়কট করবে। নির্বাচনের ভেতরের পরিবেশের বিষয়ের যেহেতু সিইসি আন্তরিক, আমি চাই বাহিরের পরিবেশটাও যেন সরকার দলীয় লোকেরা ভালো রাখে। জোর জবরদস্তি, হুমকি-ধমকি দিলে খুলনার জনগণ সেটা মেনে নেবে না। জনগণ রাজপথে নেমে আন্দোলন করবে এবং এটাই হবে সরকার পতনের আন্দোলন।

তিনি ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, আমাকে একটি বারের জন্য সুযোগ দিন, আমি খুলনাকে বদলে দিব। অতীত ঐতিহ্য সব কিছু আবার ফিরিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ। বিজয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত। নির্বাচিত হতে পারলে প্রথম কাজ হবে খুলনাকে বাসযোগ্য নগরী করা।

শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন ১৩৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৩৯ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কেসিসি নির্বাচন হবে ইভিএমে। নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে ২৮৯ ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ৭৩২টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটকেন্দ্র সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য মোট ২ হাজার ৩১০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন ও পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!