খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  শ্রম আইন লঙ্ঘন : স্থায়ী নয় ২৩ মে পর্যন্ত জামিনে থাকবেন ড. ইউনূস
  ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস-পিকআপ ভ্যান মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৩
  ময়মনসিংহের তারাকান্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

শীতের পিঠায় জীবিকা

তরিকুল ইসলাম

ঘ‌ূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পর থেকে হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে খুলনায়। নগরীর মোড়ে মোড়ে বসছে মৌসুমী পিঠার দোকান। এসব দোকানে মিলছে চিতই, ভাপা, কুলি, তেলে ভাজা পানপিঠাসহ নানা ধরনের পিঠাপুলি। ক্রেতাদের মধ্যে বেশি চাহিদা রয়েছে চালের গুড়োর সাথে গুড় ও নারিকেল মিশিয়ে তৈরি ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠার। ভোজনরসিকদের তৃপ্তি মেটানোর পাশাপাশি বিক্রেতাদের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। তবে পিঠা তৈরীর উপকরণের মূল্য বেড়ে যাওযায় আগের মত লাভ হচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতারা।

সরেজমিন দেখা যায়, খুলনা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় এমনকি অলিতে গলিতে ভাসমান পিঠাপুলির দোকানের পসরা বসেছে। প্রায় প্রতিটি মোড়ে ৩ থেকে ৪টি দোকান রয়েছে। কোন কোন দোকানে শুধু ভাপা পিঠা বিক্রি করতে দেখা গেছে। আবার কোথাও একই দোকানে রয়েছে ৩/৪ রকমের পিঠা। প্রতিটি পিঠার দাম রকম ভেদে নেয়া হচ্ছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। ভোজনরসিকরা কেউ তরল গুড় দিয়ে চিতই পিঠা খাচ্ছে আবার কেউ খাচ্ছে সরিষা, কালোজিরা কিংবা ধনি পাতার মিশ্রণ দিয়ে। তবে বেশ কিছু স্থানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও খোলা পাত্রে পিঠা রেখে বিক্রি করতে দেখা গেছে। খোলা পাত্রে রাখায় পিঠার ওপর ধুলা-বালি লেগে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

কথা হয় নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের ১৫ বছর বয়সী মাছুমের সাথে। তিনি বলেন, কুড়িগ্রামে বাড়ি। এখানে মামার বাসায় থেকে এক সপ্তাহ ধরে বিকেল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করছি। প্রতি পিস ১০ টাকা মূল্যে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৭০ পিস ভাপা পিঠা বিক্রি হচ্ছে।

সেখানে পিঠা খেতে আসা মিলন নামে এক ক্রেতা বলেন, হালকা ঠান্ডার মধ্যে পিঠা খেতে ভারী মজা লাগছে। তবে শীত বেশি হলে গরম পিঠা খেতে আরও বেশি মজা লাগবে। তিনি আরও বলেন, কিছু বিক্রেতা খোলা পরিবেশে পিঠা বিক্রি করছেন। পিঠার ওপর ধুলা-বালি পড়ায় খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। এজন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরী বলে তিনি জানান। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের প্রতি বিক্রেতাদের নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার আহ্বান করেন তিনি।

বানরগাতি বাজার মসজিদ মোড়ে পিঠা বিক্রি করেন আমেনা (৫৫)। তিনি ৫ বছর ধরে একই স্থানে পিঠা বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, শুধু রমজান মাস ছাড়া বাকি ১১ মাস পিঠা বিক্রি করেন। শীত মৌসুম আসায় পিঠা বিক্রি বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে চিতই পিঠা। প্রতিদিন ১৩/১৪ শত টাকার পিঠা বিক্রি হচ্ছে। চিতেই পিঠা খেতে কাঁচা ঝাল, জলপাই, সরিষা ও ধনি পাতা একসাথে বেটে একটা চাটনী তৈরি করি। সেটা অনেক জনপ্রিয়।

তিনি আরও জানান, স্বামী রং মিস্ট্রির কাজ করেন। দুই ছেলে পরিবার নিয়ে মোংলায় থাকেন। এখানে তাদের সাথে অসুস্থ মেয়ে থাকেন। তার মেয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় স্ট্রোক করেন। চিকিৎসায় সঞ্চয় ভেঙে ও অন্যান্যদের সহযোগিতায় প্রায় ৬/৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এখনও পুরো সুস্থ না হলেও অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তবে যা আয় হয় সেটা দিয়ে মোটামুটি সংসার খরচ চলছে।

রূপসা বাস ষ্ট্যান্ড মোড় এলাকার বিক্রেতা আবু বকর (৩২) জানান, ২২ বছর আগে পিতাকে হারান। অভাব অনাটনের মধ্যে তার মা লালন পালন করেছেন। মায়ের সাথে ছোটকাল থেকেই শীত মৌসুমে পিঠা বিক্রি করেন। এ বছর এক সপ্তাহ পূর্বে শুরু করেছেন। প্রতিদিন ১৫/১৬ শত টাকার পিঠা বিক্রি হচ্ছে। তবে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও পিঠার মূল্য না বাড়ায় এ বছর লাভ কম হচ্ছে। পাশের মোড়ে বিক্রি করছিলেন আব্দুর রহমান, জামাল উদ্দিন ও আবুল বাসার নামে আরও তিনজন। প্রত্যেকেই বলেন, বেচাকেনা মোটামুটি ভালো হচ্ছে। তবে বিগত বছরের তুলনায় মুনাফার পরিমাণ কমেছে। পুরো শীত আসলে বেচাকেনা বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস। বিভিন্নস্থানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় নগরীর অন্তত পাঁচশ`পরিবার মৌসুমী পিঠা ব‌্যবসার সাথে জড়িত। এছাড়া শহর ছাড়িয়ে ৯টি উপজেলার গ্রামগঞ্জেও শীক মৌসুমে পিঠা বিক্রি করে বহু পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন।

খুলনা জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালেয়ের উপ-পরিচালক হাসনা হেনা বলেন, জীবিকার তাগিদে বেশ কিছু নারী খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থানে পিঠা বিক্রি করে। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন এটা নিঃসন্দেহে প্রশসংনীয়। বর্তমানে পিঠা তৈরি বিষয়ে আমাদের কোন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নেই। তবে তারা আগ্রহী হলে পিঠা তৈরি ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিক্রি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি সার্জন (খাদ্য নিরাপত্তা এবং জুনোটিক রোগ নিয়ন্ত্রণ) ড. পেরু গোপাল বিশ্বাস বলেন, পিঠার সাথে ধুলা-ময়লা পেটে গেলে ডায়রিয়া, আমাশয় রোগ হতে পারে। এজন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পিঠা তৈরি এবং বিক্রি করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্তে ফুটপথে খাদ্য বিক্রিতাদের জন্য আমাদের ‘নিরাপদ খাদ্য’ নামক একটি প্রকল্প চালু ছিল। তখন ফুটপথে খাদ্য বিক্রেতাদের নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং ৫শ’ ব্যবসায়িকে কাঁচ দিয়ে ঘেরা ভ্যান প্রদান করা হয়েছিল। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। বাজেট পেলে পুনরায় তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি জনগণকেও স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার আহ্বান করেন।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!