খুলনা, বাংলাদেশ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৩ জনের করোনা পজিটিভ
  খুলনায় যুবদল নেতাকে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা

আজই লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হবেন খালেদা জিয়া, শতবর্ষী এই হাসপাতালের বিশেষত্ব কী

গেজেট ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের প্রায় শতবর্ষী বিখ্যাত ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ চিকিৎসা নেবেন দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সেন্ট্রাল লন্ডনের ডেভনশায়ার প্লেস ও মেরিলিবন সড়কে অবস্থিত এই হাসপাতাল ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত। এখানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি চিকিৎসা নেন দেশ-বিদেশের অনেক রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিক, অভিনেতা ও ধনী পরিবারের সদস্যরা। লন্ডন ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে এই হাসপাতাল সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৩২ সালে হাসপাতালটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। সে হিসেবে এই হাসপাতালের বয়স ৯৬ বছর।

হাসপাতালের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এই হাসপাতালে ব্রেস্ট, ইউরোলজি, গাইনোকলজিক্যাল রোবোটিক সার্জারি, অর্থোপেডিক, স্পাইনাল ও চর্মরোগের চিকিৎসায় বিশেষ সুনাম রয়েছে। এমনকি স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ও সেলুলার থেরাপির মান নিয়েও আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থার স্বীকৃতি রয়েছে হাসপাতালটির। ডাচেস অব ডেভনশায়ার উইংকে ‘চমৎকার’ ক্যানসার সেন্টার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ম্যাকমিলান কোয়ালিটি এনভায়রনমেন্ট মার্ক (এমকিউইএম)। এ ছাড়া রোগীদের দ্রুত সময়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষার সেবা দিয়ে থাকে হাসপাতালটি।

এই হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টায় কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশ ছেড়েছেন খালেদা জিয়া। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি খালেদা জিয়াকে নিয়ে আজ সকালে তার যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর কথা। সেখানে থেকে তিনি সরাসরি লন্ডন ক্লিনিকে যাবেন। সেখানেই চিকিৎসা নেবেন তিনি।

নানা রোগে ভুগছেন খালেদা জিয়া :

বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।

সর্বশেষ গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, লন্ডনের একটি পুরনো ঐতিহ্যবাহী হাসপাতাল ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ খালেদা জিয়াকে ভর্তি করা হবে। লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ওই হাসপাতালে নেওয়া হবে তাকে।

ওই সংবাদ সম্মেলনে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ওনার (খালেদা জিয়া) লিভারের জটিলতা, অর্থাৎ লিভার সিরোসিস; পরবর্তী সময়ে কম্পেনসেন্টারি লিভার ডিজিজ বলে গ্রেড-টু আছে। সেটার জন্য টিপস (চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি টিআইপিস-টিপস) করা হয়েছে। টিপসের কিছু টেকনিক্যাল অ্যাসপেক্ট আছে ও অ্যাডজাস্টমেন্টের বিষয় আছে। হার্টে স্টেন্টিং করার পর চেক করে আবার সেটার জন্য রি-স্টেন্টিং করে অথবা চেক করে দেখতে হয় যে স্টেন্টিংটা ভালোভাবে কাজ করছে কি না… এই জিনিসগুলো আমরা করতে পারিনি।’

এ সময় ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন আরও জানান, খালেদা জিয়ার হার্টে আরও ব্লক ও ক্রনিক কিডনি ডিজিজ আছে। করোনা-পরবর্তী কিছু জটিলতা হয়েছে। এগুলোর চিকিৎসা দরকার।

এর আগে গত অক্টোবরে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এফএম সিদ্দিক বলেন, ‘এখনো সময় আছে যদি লিভার ডিজিজের “টিপস” করা হয় এবং বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে নিয়ে “টিপস”-পরবর্তী লিভার প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে আমরা হয়তো ওনার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারব।’

পরে অক্টোবরেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় এসে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করেন। তারা সে সময় লিভারে ‘ট্র্যান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপেটিক পোরটোসিসটেমিক শান্ট (টিপস)’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই রক্তনালির মধ্যে একটি নতুন সংযোগ তৈরি করে দেন।

লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়লে খালেদা জিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

এ ব্যাপারে তিনি গত সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যদি ওখান (লন্ডন ক্লিনিক) থেকে সুপারিশ করে যে খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন এবং সে ব্যবস্থা তাদের হাসপাতালে নেই, তাহলে তাকে হয়তো সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হসপিটাল নিয়ে যেতে হবে।’

সবশেষ বিদেশে চিকিৎসা ২০১৭ সালে

সাড়ে ৭ বছর আগে যুক্তরাজ্যেই চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেবার চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নিয়েছিলেন। মাঝে কারাবন্দি জীবনের পর শর্তসাপেক্ষে মুক্তি মিললেও বিদেশে তার চিকিৎসার অনুমতি দেয়নি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সে কারণে ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডনযাত্রার পর আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি।

 

লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন যারা

হাসপাতালের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এখানে ক্যানসারের চিকিৎসা নেন ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়ামের স্ত্রী প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিন। রাজা তৃতীয় চার্লস, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, তার স্বামী ফিলিপ অব এডিনবরা একাধিকবার এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। অ্যান্টনি ইডেন ও ক্লিমেন্ট অ্যাটলিসহ অনেক ব্রিটিশ সরকারপ্রধানের চিকিৎসাও হয়েছে যুক্তরাজ্যের এই হাসপাতালে।

লন্ডন ক্লিনিকের রোগীর তালিকায় নাম রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ও ব্রিটিশ-আমেরিকান অভিনেত্রী লিজ টেইলরেরও। এ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।

ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১৯৩২ সালে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাজপরিবারের ডিউক ও ডাচেস অব ইয়র্ক। ১৯৯১ সালে এর এমআরআই ইউনিট উদ্বোধন করেন প্রিন্সেস মার্গারেট। ২০১০ সালে ক্যানসার ইউনিট উদ্বোধন করেন প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

হাসপাতালের ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়েছে, লন্ডন ক্লিনিকের বহির্বিভাগে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ চিকিৎসা নেয়। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয় ২৩ হাজার রোগী। এই হাসপাতালে প্রোস্টেট ক্যানসারের রোগীদের জন্য রয়েছে রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা। এন্ডোস্কপির জন্য রয়েছে ‘স্পাইগ্লাস’ প্রযুক্তি। ক্যানসার রোগীদের জন্য আছে ‘সিএআর-টি’ ইমিউনোথেরাপি। ২০১৯ সালে লন্ডন ক্লিনিকে রোবোটিক সার্জারি ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়। ডেভনশায়ার প্লেস এলাকার মূল হাসপাতালে সাতটি প্রধান ও তিনটি অতিরিক্ত অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। আছে ছয় রোগের চিকিৎসায় বিশেষ ওয়ার্ড।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!