খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন সভাপতি মিশা, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল

রেড নোটিস নিয়েও সক্রিয় আরাভ, জানালেন কারাগারে থাকার কথা

গেজেট ডেস্ক

ইন্টারপোলের রেড নোটিস মাথায় নিয়েও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন পুলিশ হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। বৃহস্পতিবার (৪ মে) দুবাইয়ের নিউ গোল্ডসুক এলাকায় আবারও চালু হয়েছে তার বহুল আলোচিত আরাভ জুয়েলারি শপ। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা এ তথ্য জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের আরাভ খানও একথা নিশ্চিত করেছেন।

নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বৃহস্পতিবার রাতে লাইভে এসে এক মাস সাত দিন ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার আসামি দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাব খান। সেখানে তার সঙ্গে ‘বড় বড়’ আসামিরাও জেল খাটেন বলে দাবি এই পলাতক আসামির।

আরাব বলেন, ‘যারা ফোন করেছেন এবং জানতে চেয়েছেন আমি এতদিন কোথায় ছিলাম, তাদের জন্য আমার এই লাইভে আসা। অনেক সাংবাদিক ভাইরা আমাকে ফোন করেছে। আমি নিজের মুখেই বলতে চাই আমি কোথায় ছিলাম।

‘মিডিয়া বলেছে, আমি দুবাই ছেড়ে চলে গিয়েছি, পালিয়েছি। আসলে আমি পালানোর মতো লোক না। কারণ হলো, আমি তো চুরি করি নাই। আমি কেন পালাব। আমাকে যখন ইন্টারপোল রেড অ্যালার্ট জারি করে, আমাকে উনারা ফোন করেন। আমাকে বলে, আপনার নামে একটা ফাইল এসেছে আপনি আসুন। আপনাকে অ্যারেস্ট করব। তো অ্যারেস্ট করার থেকে আপনি আসা সর্বোত্তম। আমি দেখলাম আমি যদি পালিয়ে বেড়াই তাহলে আমাকে তো অ্যারেস্ট করবে। আর পালিয়ে বেড়ানোর কোনো ছেলেই না আমি।’

আলোচিত আরাব বলেন, ‘আমাকে ইন্টারপোলে নিয়ে গেল। ইন্টারপোলে রাখলো, এক মাস সাত দিন। আমার জীবন থেকে এক মাস সাত দিন চলে গেছে ইন্টারপোলের জেলে। ইন্টারপোলে আমি বড় বড় আসামিদের সাথে জেল খেটেছি।’

তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা রটিয়েছেন, আমি পালিয়েছি। সবাই ভেবেছে, ইন্টারপোল ধরেছে মানে ও শেষ। বাংলাদেশের মানুষ বোকা না। আমার জন্য দোয়া করেছে। ৯৫ ভাগ সাংবাদিক ভাইদের বলতে চাই, আপনারা যতই আমার পা ধরে টানেন। ২০ কোটি মানুষ আমার হাত ধরে উপরে টেনেছে। সাংবাদিকরা যেভাবে মার্কেটিং করছেন। আপনারা আমারে বিনা পয়সায় পরিচিত দিছেন।’

পুলিশ হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাভ খানের অন্ধকার অজানা জীবনের নানা অধ্যায় উন্মোচিত হওয়ার পর দুবাইয়ে তার আলোচিত আরাভ জুয়েলারি শপ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিল। ইন্টারপোল রেড নোটিস জারির পর ঘটা করে উদ্বোধন করা স্বর্ণের এ দোকান বন্ধ করে দিয়ে গা ঢাকা দেন বহুল আলোচিত আরাভ খান।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কয়েকজন জানান, দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুক এলাকায় আলোচিত আরাভ জুয়েলারি শপ বৃহস্পতিবার চালু করা হয়। অল্প পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে এর ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তবে এর আশপাশের দোকানগুলো এখনও প্রায় বন্ধ। বিকালে আরাভ জুলেয়ারি শপে ছিলেন দুজন সেলসম্যান। এ সময় আরাভ খানকেও দোকানের ভেতরে ও বাইরে পায়চারি করতে দেখা গেছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও বুধবার থেকে প্রকাশ্যে আসেন বহুল আলোচিত আরাভ খান। বৃহস্পতিবার একাধিক ব্যক্তি তাকে দুবাইয়ের দেরা বাংলা চ্যানেলে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন।

ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির পরও একজন পলাতক আসামির এভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর ঘটনায় সবাই বিস্মিত। গত ২৪ মার্চ ইন্টারপোলের রেড নোটিস তালিকায় নাম ওঠে রবিউলের। এর দুই দিন আগে ২১ মার্চ তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন।

আরাভ খানের ফেসবুক টাইমলাইনে দেখা যায়, সাময়িক বিরতির পর গত ২১ এপ্রিল তিনি ফেসবুকে সক্রিয় হন। এরপর কয়েক দিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও গত দুই দিন ধরে তিনি ফেসবুকে সক্রিয় রয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি স্ট্যাটাস দেন। প্রথম স্ট্যাটাসে শেয়ার করা একটি ছবিতে দুবাইয়ে নিজের নামে করা আরাভ জুয়েলারি শপের সামনে তাকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা যায়। ওই স্ট্যাটাসে তিনি মন্তব্য করেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আজ থেকে আরাভ জুয়েলারি ওপেন করলাম। আপনারা সকলে আমন্ত্রিত। আপনারা যে ভালোবাসা দিয়েছেন, দোয়া করেছেন। আপনাদের জন্য সর্বদা নামাজ পড়ে আমার অন্তর থেকে দোয়া করব। আমিন।’

এর এক ঘণ্টা পর দেওয়া অপর এক স্ট্যাটাসে আরাভ লিখেছেন, প্রতিদিনের প্রতিমুহূর্তর গোল্ড রেট জানতে ডাউনলোড করুন আরাভ জুয়েলার্সের ব্রোকার হাউস অ্যাপ। আরাভ জুয়েলারির লোগো শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘এই লোগোর ওপর টাচ করলে অ্যাপটি পাবেন।’

গত ২১ এপ্রিল ফেসবুকে সক্রিয় হয়ে আরাভ খান লেখেন, ‘সবাইকে ঈদ মোবারক! আপনাদের সকলের ঈদ সুখী ও শান্তিপূর্ণ হোক। নামাজ পড়ি এবং সবার জন্য দোয়া করি।’ গত মঙ্গলবার আবারও ফেসবুকে সক্রিয় পাওয়া যায় আরাভকে। ওইদিন এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে, আলহামদুলিল্লাহ।’ গত বুধবার অপর এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘৯৫% সাংবাদিক দুঃখিত সাংঘাতিক, যতই তুমি মানুষের পা ধরে নিচে নামাতে চাইবে ততই সে উপরে উঠবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ মহান।’ ওই স্ট্যাটাসে তিনি একটি নীল রঙের প্রাইভেট কারের পাশে সুটেট-বুটেট হয়ে সানগ্লাস পরিহিত ছবি পোস্ট করেন। ক্যাপশনে লেখেন, ‘বুগাটি উইথ আরাভ খান।’

এর আগে গত ২১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৪৭ মিনিটে ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়। এতে লেখা হয়, ‘আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় দেশবাসী আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন সহায় হন।’ এরপর থেকে তাকে মাসখানেক ফেসবুকে নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো অনুষ্ঠানেও তার উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে তিনি মাঝেমধ্যেই সক্রিয় থেকেছেন। যদিও কোনো স্ট্যাটাস দেননি।’

প্রসঙ্গত,  ১৫ মার্চ আরাভ খানকে নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে পুলিশ হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন কীভাবে আরাভ খান হলেন, কীভাবে ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে বিয়ে, পাসপোর্ট এবং দুবাইয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তা ওই প্রতিবেদনে সবিস্তারে প্রকাশ করা হয়। আরাভ খানের দুবাইয়ে জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে যান ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানসহ কিছু তারকা। পুলিশের নজরে আসে বিষয়টি। দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরাভ খান তখন আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। এর মধ্যে তার দুবাই ত্যাগ ও গ্রেপ্তারের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। গত দুই দিন ফেসবুকে তার সক্রিয়তা প্রমাণ করে তিনি দুবাই ত্যাগ করেননি এবং গ্রেপ্তারও হননি।

এ প্রসঙ্গে দুবাই থেকে ফোনে আরাভ খান বলেন, ‘আমি অপরাধী নই। আমি পুলিশ হত্যা মামলার আসামিও না। তারপরও আমার বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি হয়েছে। জীবন থেকে চল্লিশ দিন হারিয়ে গেছে। ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। সেসব সমস্যার সমাধান করেই আমি নতুন করে ব্যবসা শুরু করেছি।’

পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. মনজুর রহমান  জানান, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির পর আরাভ খানের বিষয়ে নতুন করে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। যারা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন তারা বলতে পারবেন। এর বাইরে তাদের কোনো কিছু জানানোর নেই।’

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!