খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  রাঙ্গামাটির সাজেকের উদয়পুর সড়কে ট্রাক খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত
  চাঁদপুরের হবিগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে মা ও শিশুর মৃত্যু
  নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সম্পাদককে দল থেকে অব্যাহতি
দুদক কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত দায় স্বীকার

যশোর শিক্ষাবোর্ডের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত হিসাব সহকারী সালাম বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেক জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতকারী হিসেবে অভিযুক্ত হিসাব সহকারী আব্দুস সালামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার (১১ অক্টোবর) বোর্ড কমিটির সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলী আর রেজা। এ ঘটনায় সালাম দুদক যশোর সমন্বিত কার্যালয়ে গিয়ে মঙ্গলবার দায় স্বীকার করে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন।

সচিব জানান, অর্থ আত্মসাতের গোটা ঘটনার সব দোষ আব্দুস সালাম নিজে স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই সাথে তিনি ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। রবিবার (১০ অক্টোবর) বিকালে সালাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত দিয়ে সব দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা ফেরত দেন। সালামের পক্ষ থেকে তার স্ত্রী লিখিত আবেদন ও টাকা জমা দেন। এরপর সোমবার বোর্ড কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সালামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এদিকে, দুদক যশোর সমন্বিত কার্যালয় থেকে তাকে খোঁজ করা ও বাড়িতে গিয়ে অফিসে দেখা করার কথা বলা হলে মঙ্গলবার এ অফিসে যান আব্দুল সালাম। তিনি সেখানে গিয়ে কর্মকর্তাদের সামনে লিখিত মুচলেকা দিয়ে আড়াই কোটি টাকা জালিয়াতির গোটা ঘটনার দায় স্বীকার করেন। এরপর কর্মকর্তারা তাকে যোগাযোগ রাখার শর্তে বাড়িতে যাবার অনুমতি দেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেক জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় দুদকে (দুর্নীতি দমন কমিশন) অভিযোগ দাখিল করেছেন বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা। রোববার সকাল ১০টায় দুদক যশোর কার্যালয়ে গিয়ে তিনি এ অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর এদিনই দুপুর ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা বোর্ডে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। দুদকের যশোর অঞ্চলের উপ-পরিচালক নাজমুস ছায়াদাতের নেতৃত্বে তদন্ত করেন সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ও সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল। তারা অভিযুক্ত ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম বাবু ও শাহী লাল স্টোরের মালিক আশরাফুল আলমের সাথে কথা বলেন। তবে এ অপকর্মের মূলহোতা হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম অনুপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর বৃহস্পতিবার থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন। এরপর দুদক কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে আড়াই কোটি টাকা লেনদেনের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন।

এদিকে, চলতি অর্থবছরে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড সরকারি কোষাগারে জমার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করে। এই ৯টি চেক জালিয়াতি করে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে ১ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ১০ টাকা এবং শাহী লাল স্টোরের নামে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
চেক জালিয়াতির ঘটনায় আব্দুস সালাম চেয়ারম্যান বরাবরে পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, এ ঘটনার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তিনি দায়ী। শিক্ষাবোর্ডের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারি, ভেনাস প্রিন্টিং অন্ড প্যাকেজিং ও শাহী লাল স্টোরের কেউ জড়িত নয়। পূর্ব পরিচিতির সূত্র ধরে দুই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে তিনি এ টাকা উত্তোলন করেছেন। নিজ প্রয়োজনে খরচও করে ফেলেছেন। ওই টাকা এখন তিনি ফেরত দিতে ইচ্ছুক। তাই ১৫ লাখ ৪২ টাকা ফেরত দিচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে সব টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।

আব্দুস সালাম যশোর শিক্ষা বোর্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য। এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম এর আগেও অনেক দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ১২ লাখ টাকার একটি দুর্নীতিতে জড়িয়ে ধরা পড়ার পর তদবিরে তিনি রক্ষা পান। যা বোর্ডের সবার জানা ঘটনা। এরপর তিনি বুকে সাহস বেধে আড়াই কোটি টাকা দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। আব্দুস সালাম দুর্নীতির মাধ্যমে উপশহরে দুটি আলীশান বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি এলাকায় ১০ বিঘা জমি, যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক হয়েছেন।

এ ব্যাপারে যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, বোর্ড কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক হিসাব সহকারী আব্দুস সালামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে দুদকে অভিযোগ করা হয়েছে। আইনের মাধ্যমে পুরো ঘটনার নিষ্পত্তি হবে। জালিয়াতির ঘটনায় দোষীরা কোনোভাবেই রেহাই পাবে না বলে তিনি জানান।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!