খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন সভাপতি মিশা, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল

মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করায় যুবককে প্রকাশ্যে হত্যা

আন্তর্জা‌তিক ডেস্ক

মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করায় হিন্দু এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে। ‘পরিবারের অমতে’ বিয়ে করার অপরাধে তাকে প্রকাশ্যেই পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। তারা উভয়েই একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন এবং নিজের স্বামীকে হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টাও করেছিলেন মুসলিম ওই তরুণী।

গত বুধবার (৪ মে) রাতে মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর হায়দ্রাবাদে। এদিকে হিন্দু যুবককে প্রকাশ্যেই পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্লাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার (৬ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ছোট বেলা থেকেই একে-অপরকে ভালোবাসতো বি নাগারাজু ও সৈয়দ আশরিন সুলতানা। পরিবারের অমতে গিয়ে তিন মাস আগে তারা বিয়ে করেন। পুলিশ বলছে, ২৫ বছর বয়সী পেশায় গাড়ি বিক্রয়কর্মী বি নাগারাজুকে তার মুসলিম স্ত্রীর ভাই এবং আত্মীয়রা মারধর ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা মেয়ের আত্মীয়। পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে খুন করা হয় হিন্দু যুবককে।

সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মাত্র তিন মাস আগে বিয়ে করেন ওই যুগল। দলিত ঘরের হিন্দু ছেলে নাগারাজুর সঙ্গে স্কুল থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সুলতানার। দুই পরিবারই এই সম্পর্কের কথা জানলেও ভিনধর্মের এই সম্পর্কের ঘোরতর বিরোধী ছিল তারা। তা সত্ত্বেও গত ৩১ জানুয়ারি হায়দরাবাদের আর্য সমাজ মন্দিরে সুলতানাকে বিয়ে করেন নাগারাজু। বিয়ের পর নাম পরিবর্তন করে সুলতানা হন পল্লবী। কিন্তু এই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি মেয়ের পরিবার।

গত বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে বাইকে করে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন নাগারাজু। তখনই হায়দ্রাবাদের সরুরনগর তহশিলদারের কার্যালয়ের সামনে তার ওপর হামলা করে একদল যুবক। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, লোহার রড দিয়ে নাগারাজুকে পিটিয়ে মারছে হামলাকারীরা। স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে যান সুলতানা।

হামলাকারীদের আটকানোরও চেষ্টা করেন তিনি। এমনকি পথচলতি মানুষের কাছে সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। বরং তাদের কেউ কেউ ঘটনাটি মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত ছিলেন। সুলতানা হামলাকারীদের আটকাতে গেলে তখন ভিড়ের মধ্যে থেকে কয়েকজন এগিয়ে যান বাঁচাতে। কিন্তু ততক্ষণে মারা যান নাগারাজু। হামলাকারীরাও পালিয়ে যায়।

এই ঘটনায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসে নাগারাজুর পরিবার। তারা রাস্তায় বিক্ষোভ দেখায়। নাগারাজুর মৃত্যুর জন্য সুলতানার পরিবারকেও দায়ী করে তারা।

তবে স্বামীর মৃত্যুর শোকে আহাজারি করছেন সৈয়দ আশরিন সুলতানা ওরফে পল্লবী। ২৫ বছরের যুবক নাগারাজুর বলা কথাগুলোই এখন পাগলের মতো বলছেন যাচ্ছেন সদ্য স্বামীহারা এই তরুণী।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাগারাজুর স্ত্রী সৈয়দ আশরিন সুলতানা বলছেন, ‘আমাদের বিয়ের আগে থেকেই আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম অন্য কাউকে বিয়ে করে নিতে। কারণ আমি চাইনি, আমার জন্য ওর কোনো বিপদ হোক। বাড়িতে আমাদের ব্যাপারটা জানাজানি হতেই ওকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে কথা শোনেনি। বলেছিল, বাঁচলে তোমার সঙ্গেই বাঁচব। আর মরতে হলেও তোমার পাশেই। তোমার জন্য মরতে পারি।’

সুলতানার প্রশ্ন, কেন একজনও এগিয়ে এলেন না নাগারাজুকে বাঁচাতে? সাহায্যের আকুতি সত্ত্বেও এগিয়ে আসেননি কেউ। স্বামীকে হারিয়ে সুলতানার আক্ষেপ, ‘পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে কেউ এ রকম সাহায্য চাইলে মানুষের এগিয়ে আসা উচিত। এই জন্যই তো আমরা মানুষ।’

স্বামী হারানোর শোকে কাতর এই স্ত্রী বলছেন, ‘১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে হামলা চালানো হলো। কিন্তু কেউ বাঁচাতে এগিয়ে এলো না!’




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!