খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  রাঙ্গামাটির সাজেকের উদয়পুর সড়কে ট্রাক খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত
  চাঁদপুরের হবিগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে মা ও শিশুর মৃত্যু
  নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সম্পাদককে দল থেকে অব্যাহতি

ভোমরা স্থলবন্দরে আড়াই বছরে ৮২৬ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসাবে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে চলেছে এই বন্দর। কিন্তু নানা সংকটের কারণে গত কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আদায় ঘটতি দেখা দিচ্ছে এখানে। গত আড়াই বছরে ৮২৬ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ঘাটতি পড়েছে ভোমরা স্থলবন্দরে।

করোনা সংকট, এলসি জটিলতা, ডলার সংকট, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতিসহ নানা সমস্যার কারণে এ ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে দাবি বন্দরসংশ্লিষ্টদের।

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব শাখা থেকে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ১২১ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জুলাই-জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয় ৭৬০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬০ কোটি ২২ লাখ টাকা। অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভোমরা বন্দর দিয়ে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯৫৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৪১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সে হিসেবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২১২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত ভোমরা স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৫৩১ কোটি ১ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্থ বছরের ছয় মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৭৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ২ হাজার ৬০৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৭৮০ কোটি ৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮২৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান বলেন, ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের সঙ্গে সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের দূরত্ব বাংলাদেশের যে কোনো বন্দর অপেক্ষা কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সুবিধাবোধ করেন। বর্তমানে বন্দরটিতে আমদানি ও রপ্তানি কাজে জড়িত রয়েছেন পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী। বছর দুইয়েক আগে প্রতিদিন এ বন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা। বছর শেষে রাজস্ব আদায় দাঁড়ায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকায়।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। ফলে বন্দরের ব্যবসা বানিজ্যের গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়বে রাজস্ব আদায়ও, এমনটি ধারনা ছিল সবার। কিন্তু নানা সংকটের কারণে প্রায় দুই বছরে বন্দরে আমদানী- রপ্তানী আগের তুলনায় কমেছে। সেই সাথে কমেছে রাজস্ব আদায়। তবে এলসি জটিলতা ও ডলার সংকট সহ অন্যান্য সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে এই বন্দরে ব্যবসা বানিজ্যে ফের গতি ফিরে আসবে। বাড়বে রাজস্ব আদায়।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজি দিলওয়ার নওশাদ রাজু বলেন, বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ নিম্নমুখী আমদানি। বর্তমান সময়ে ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। পূর্ণাঙ্গ বন্দর হওয়া সত্ত্বেও এখানে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের পণ্য আমদানি করতে দেয়া হয় না। ব্যবসায়ীরা যদি তাদের চাহিদামাফিক পণ্য আমদানি করতে পারতেন তাহলে রাজস্ব ঘাটতি হতো না। তাছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরের পর থেকে করোনা মহামারীর পাশাপাশি ডলার সংকটের প্রভাবে এলসি জটিলতাসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায় রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমসের ডেপুটি সহকারী কমিশনার নেয়ামুল হাসান জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরের পর থেকে নানা সংকটে বন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা দেখা দেয়। বাড়তে শুরু করে রাজস্ব ঘাটতি। তাছাড়া সম্প্রতি ব্যাংকে এলসি জটিলতা ও ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের এই বন্দরে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে জানান এই কাস্টমস কর্মকর্তা।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!