খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  চট্টগ্রামে পটিয়ায় বাস-সিএনজি অটো রিকশা সংঘর্ষে নিহত ২
  রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
  জাতীয় পতাকার নকশাকার, জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

ভবদহ অঞ্চলে আবারো জলাবদ্ধতা, ৬ শতাধিক বাড়ির উঠানে থই থই পানি

শাহীন আহমেদ, অভয়নগর

যশোর জেলার দুঃখ বলে খ্যাত ভবদহ অঞ্চলে আবারো জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে অভয়নগর ও পার্শ্ববর্তী মণিরামপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে ৬ শতাধিক বাড়ির উঠানে থই থই পানি। পানির তোড়ে ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের। তলিয়ে যেতে বসেছে যাতায়াতের রাস্তা। তা ছাড়া ঢেউয়ের আঘাতে বিভিন্ন জায়গায় সড়ক ধসে পড়ছে এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। এবার স্মরণকালের ভয়াবহ ও স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে, বিগত ২০১৬ সালের মতো এবারো এলাকাবাসীকে বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নিতে হতে পারে। রবিবার ভবদহ অধ্যুষিত অভয়নগরের আন্ধা, বেদভিটা, ডুমুরতলা, ধোপাদী, সরখোলা, ডহর মশিয়াহাটি, সুন্দলী এবং মণিরামপুর উপজেলার হাটগাছা, মশিয়াহাটি, সুজাতপুর, পাঁচাকড়ি, লখাইডাঙ্গা, বালিধাসহ বেশকিছু গ্রামে ঘুরে জলাবদ্ধতার এ চিত্র দেখা গেছে। এসব গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। থমকে যেতে বসেছে মানুষের স্বাভাবিক কর্মকান্ড। পানিতে টইটুম্বুর আমডাঙ্গা খালের ডহর মশিয়াহাটি অংশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খাম খেয়ালিপনার কারণে অপরিকল্পিতভাবে এ খালের একাংশ খনন করায় এবং অপর অংশে খনন সম্পন্ন না করায় পানি বের হতে পারছে না। আমডাঙ্গা খালটি পরিকল্পিতভাবে খনন করে ভৈরব নদীর সাথে সংযোগ ঘটাতে পারলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে বৃহৎ এ অঞ্চলের মানুষ রক্ষা পেতে পারে বলে স্থানীয়দের দাবি। তা ছাড়া এলাকার খালগুলো থেকে নেট-পাটা অপসারণ না হওয়ায় এবং ঘের মালিকরা যথেচ্ছভাবে ঘেরের বাঁধ দেয়ায় জলাবদ্ধতা আরো স্থায়ী রূপ নিচ্ছে বলে আক্ষেপ করেন তারা।

সর্বশেষ রবিবার ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির বৈঠকে টিআরএম বাস্তবায়ন ও আমডাঙ্গা খাল পুনঃখননের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ দিন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল খাল খননের নামে কোটি কোটি টাকা পানিতে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী সমাধান হিসেবে টিআরএম প্রকল্প চালু করা, আমডাঙ্গা খাল প্রস্তকরণ ও খননের দাবিতে অভয়নগরে মানববন্ধন ও যশোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন পালন হয়েছে ইতি মধ্যে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পাউবোর উদাসীনতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্বার্থান্বেষী মনোভাবের কারণে ভবদহ অঞ্চলে টিআরএম বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমডাঙ্গা খাল যথাযথ পরিকল্পনা মাফিক খনন হচ্ছে না। ফলে তাদের এবারো ডুবে মরতে হবে। যদিও গত তিন বছর বেশ ভালোই ছিল ভবদহ অঞ্চলের মানুষ। আমডাঙ্গা খাল সচল থাকা, নেট-পাটা ও কচুরিপনা অপসারণ, ভবদহ স্লুইস গেট থেকে পলি অপসারণসহ কার্যকর কিছু ব্যবস্থা যথাসময়ে গ্রহণ করায় জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পেয়েছিল ভবদহবাসী। তারা গত তিন বছর ইরি, বোরো ও আমন মৌসুমে সোনালি ধান ঘরে তুলেছে। ঘেরে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। কিন্তু এ বছর আমডাঙ্গা খাল থেকে পানি না সরায়, খালের নেট-পাটা অপসারণ না করায় ও ভবদহ স্লুইস গেটের শ্রী ও হরি নদীর পলি যথাযথভাবে অপসারণ না করায় সর্বোপরি ভবদহবাসীর প্রাণের দাবি টিআরএম বাস্তবায়ন না হওয়ায় আবারো জলাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ভবদহ অধ্যুষিত লাখ লাখ মানুষকে।

সর্বশেষ ২০১৬ সালে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছিল ভবদহবাসী। এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় অনেকে। রাস্তায় তাঁবু গেড়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় মাসের পর মাস। চলতি মৌসুমে ২০১৬ সালের চেয়েও ভয়াবহ জলাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

এ ব্যাপারে পাউবো কর্মকর্তারা জানান, ভবদহের হরিনদী ও টেকানদীর পলি অপসারণের জন্য সরকার প্রতি বছরই বরাদ্দ দিয়ে আসছে এবং ভবদহবাসীর স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে সরকার কাজ করছে।

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ভবদহ এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে, যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে এবং ভবদহবাসীর জীবনমান উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!