খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫
  গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২

বিল ডাকাতিয়ায় ৬৪ একর ঘেরে অর্গানিক উপায়ে মাছ চাষ

একরামুল হোসেন লিপু

মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী এবং আড়ংঘাটা থানা এলাকার একজন সফল রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী। রড সিমেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি তিনি অর্গানিক উপায়ে মাছ এবং মাংশ উৎপাদন করে থাকেন।

২৩ বছর ঘের ব্যবসার সাথে জড়িত। দীর্ঘ প্রায় দুই দশক লাভ জোটেনি তার এ ব্যবসা থেকে। তারপরও থেমে থাকেননি। সাহস এবং মনোবল নিয়ে সাফল্যের আশায় অর্থ, সময়, শ্রম এবং মেধা ব্যয় করেছেন। অবশেষে তিনি সাফল্যও পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি এ ব্যবসা থেকে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন এবং আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। রড, সিমেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ঘের ব্যবসায়ও সময় দিচ্ছেন সমানতালে। ঘেরে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন ১২ জন শ্রমিকের।

খুলনার ডুমুড়িয়া মৌজার বিল ডাকাতিয়ায় ৬৪ একর ঘেরে সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায়ে মাছ চাষ করছেন মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক। দীর্ঘ প্রায় আড়াই যুগ ধরে মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সরকারি সহযোগিতা কিংবা পৃষ্ঠপোষকতা জোটেনি। প্রতিবছর তাঁর ঘের থেকে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার মণ সাদা মাছ উৎপাদিত হয়ে থাকে। যা এ অঞ্চলের মাছের চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।

বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সময়ে মাছ বিক্রি করতে না পেরে তিনি প্রায় এক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এছাড়া চলতি বছরে বৈশাখের অতিরিক্ত তাপদাহের কারণে ঘেরের প্রায় সাড়ে ১২’শ মণ মাছ মারা যায়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৯৬ লক্ষ টাকা। তিন বছরের ব্যবধানে প্রায় দুই কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও হতাশ হননি তিনি। দীর্ঘদিনের মাছ চাষের অভিজ্ঞতা, মনোবল, অদম্য সাহস এবং উৎসাহ নিয়েই অদম্য গতিতে পূর্ণাঙ্গ সাফল্যের প্রত্যাশায় তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন।

বর্তমানে মুস্তাফিজুর রহমানের ঘেরে সর্বনিম্ন ২ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১৪ কেজি ওজনের প্রায় ২ হাজার মণ রুই, কাতলা, মৃগেলসহ অন্যান্য সাদা মাছ রয়েছে। এসব মাছ তিনি সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায় চাষ করছেন। মাছগুলোকে খাওয়াচ্ছেন ন্যাচারাল ফিড যেমন ভুট্টার গুড়ো, গমের ভূষি, সরিষার তেলের খৈল, পালিশ কূড়াসহ অন্যান্য ন্যাচারাল ফিড। প্রতিদিন ৬৪ একর ঘেরে প্রায় দুই টন খাবার প্রদান করতে হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫৬ হাজার টাকা।

অর্গানিক উপায়ে মাছ উৎপাদনকারী সফল মৎস্য চাষী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক আক্ষেপ করে খুলনা গেজেটকে বলেন, বিশাল বিল ডাকাতিয়ার অন্যতম একজন মৎস্য চাষী। এ অঞ্চলের চাহিদার ১০ শতাংশ মাছের চাহিদা পূরণ করছি। অথচ মৎস্য অধিদপ্তরের কোন সহযোগিতা, পরামর্শ কিংবা তাদের কোন পৃষ্ঠপোষকতা কখনো পেলাম না। করোনাকালীন সময় এত বড় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পরও সরকারি কোন প্রণোদনা কিংবা ভর্তুকি পায়নি। চলতি বছর অতিরিক্ত তাপদাহের কারণে আমার মত বিল ডাকাতিয়ার অনেক মাছ চাষীর ঘেরে মাছের মড়ক ধরলেও মৎস্য অধিদপ্তরের কোন সাড়াশব্দ পায়নি। আমার নামে একটা কৃষি কার্ড নেই। তিনি বলেন, ঘের পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এতদিন মাছ চাষে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছিল। কারণ ঘেরের পানি শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বে বিকল্প উপায় ডিজেল চালিত ইঞ্জিন দিয়ে ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি তুলে ঘেরে দেওয়া হতো। সম্প্রতিকালে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দিবা-রাত্রি ২৪ ঘন্টা ইঞ্জিনচালিত পাম্পদিয়ে ৬৪ একরের বিশাল ঘেরে পানি সরবরাহ রেখে এ ব্যবসায় টিকে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। বিকল্প উপায় হিসেবে সম্প্রতি নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুৎ বিভাগের সহযোগীতায় সিটি আউটার বাইপাস থেকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগের উদ্যোগ নিয়েছি, যেটির কাজ চলমান। কাজটি সম্পন্ন হলে ঘেরে পানির সমস্যা দূরীভূত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

খুলনা গেজেট/ বিএমএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!