খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  ঢাকা শিশু হাসপাতালে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট
  রাজধানীর খিলগাঁওয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
  জাতীয় পতাকার নকশাকার, জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

খুলনায় বায়ান্ন’র একুশ

কাজী মোতাহার রহমান

বায়ান্ন সাল। ভৈরব নদের তীরে খুলনা তখন ছোট্ট শহর। মাত্র দু’টো রাস্তা। পুরনো যশোর রোড ও খানজাহান আলী রোড। বসতি এক লাখ মানুষের। সড়ক ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা দুরূহ। রাজনীতি বলতে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ আর বিরোধী শিবিরে আওয়ামী মুসলিম লীগ, নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টি ও নেজামী ইসলামের। জামায়াতে ইসলামীর যাত্রা সবে শুরু।

এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে দৌলতপুর বিএল একাডেমী আর মহিলাদের আর কে কলেজ। মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল, সেন্ট যোসেফস্, মডেল, বি কে, করোনেশন, পল্লী মঙ্গল, সুলতানা হামিদ আলী ও মহসীন স্কুল।

বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে কেন্দ্রের আহবানে একুশ ফেব্রুয়ারি খুলনায় ধর্মঘট পালিত হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দেলনের সাথে সম্পৃক্তরা যশোর রোড ও সারদা বাবু রোড (আজকের আহসান আহমেদ রোড) এর সংযোগ স্থলে সাইদুর রহমান সাইদ-এর প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড ক্লাবে বসে একশ’ পোষ্টার লেখেন। সন্ধায় শহরের কেডি ঘোষ রোড, যশোর রোড ও স্কুলগুলোর দেয়ালে আন্দোলনরত ছাত্ররা পোস্টারিং করে। মুসলিম লীগ সরকার বিরোধী শহরে এই প্রথম পোস্টার। চারিদিকে সাড়া পড়ে। ভাষা আন্দোলনের পক্ষে শহরে জনমত গড়ে ওঠে। পোষ্টারিং করার অপরাধে মির্জাপুরের যুবক এ কে সামসুদ্দিন সুনু মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারী মামলা হয়। খুলনা বারের খ্যাতিমান আইনজীবী এ এফ এম আব্দুল জলিল, আব্দুল জব্বার মোক্তারদের মধ্যে আব্দুল ওহাব, গোলাম সাইদ, মুনসুর আহমেদ, প্রমুখ আসামির পক্ষে আদালতে জামিনের শুনানী করেন। আসামির জামিন হয়।

কেন্দ্রের অনুকরণে একুশ ফেব্রুয়ারি শহরের সর্বত্র ধর্মঘট পালিত হয়। সরকারি হওয়ার কারণে জিলা স্কুলে ধর্মঘট পালিত হয়নি। ভাষা আন্দোলন মূলত: দৌলতপুর বিএল একাডেমী কেন্দ্রিক। এখানে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, ছাত্র কংগ্রেস ও ছাত্র ফেডারেশন যৌথভাবে আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠন করে।

একুশের দুপুরে সরকারি কর্তৃপক্ষ ঢাকায় ছাত্রের মৃত্যুজনিত পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার জন্য ওয়ারলেস বার্তা পাঠায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ছাত্র-শ্রমিকের মৃত্যুজনিত পরিস্থিতি উল্লেখ করে জেলা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে পুলিশ লাইনে ওয়্যারলেসে বার্তা পাঠায়। তেরখাদার সন্তান ওয়্যারলেস অপারেটর আব্দুস সাত্তার সংবাদটি শহরে ছড়িয়ে দেয় (এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আব্দুল হালিম রচিত খুলনায় ভাষা আন্দোলন-১৯৫২)। খবর পেয়ে যুবনেতা আবু মুহম্মদ ফেরদৌস, এম নূরুল ইসলাম, এস এম এ জলিল নয়া সাংস্কৃতিক সংসদ ও ভাষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক এম এ গফুরের বাসভবনে যান। তিনি লোয়ার যশোর রোড ও আহসান আহমেদ রোডের সংযোগস্থল একতলা পরিত্যক্ত বাড়ির কামরায় বসবাস করতেন। আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দের বৈঠক সেখানে অনুষ্ঠিত হয়। সিদ্ধান্ত হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ সভা, মিছিল ও হরতাল আহবায়ক করা হবে। ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে একুশের দুপুরে দৌলতপুর মহসীন স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলের নেতৃত্ব দেন শিরোমণি’র গাজী শহিদুল্লাহ (পরবর্তীতে পৌরসভার চেয়ারম্যান) ও কাশিপুরের মোল্লা বজলুর রহমান (পরবর্তীতে বিএল একাডেমী ছাত্র সংসদের জিএস)।

২২ ফেব্রুয়ারি শহরের ছাত্র নেতৃবৃন্দ সভা, সমাবেশের খরচের জন্য চাঁদা তুলতে নামে। রাস্তায় ও দোকানে এক পয়সা, দু’পয়সা থেকে এক আনা, দু’আনা চাঁদা দিয়ে আন্দোলনে সমর্থন জানায় বাঙালি চেতনায় উদ্বুদ্ধ শহরবাসী। হেলাতলা মোড়ের ঝালাইকারের কাছ থেকে কেরোসিন টিনের চারটি চোঙ্গা কিনে আনা হয়। চোঙ্গা দিয়ে জনসভার প্রচার শুরু হয়।

২৩ ফেব্রুয়ারি সে দিনের গান্ধী পার্কে (আজকের শহীদ হাদিস পার্ক) উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। নয়া সাংস্কৃতিক সংসদের আহবায়ক এম এ গফুর সভায় সভাপতিত্ব করেন। আবু মুহম্মদ ফেরদৌস ও আলতাফ খান বক্তৃতা করেন। জনসভা সফল করতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার আব্দুল হাফিজ, ছাত্র ইউনিয়নের মালিক আতাহার উদ্দীন, জাহিদুল হক, মিজানুর রহীম ও নূরুল ইসলাম নান্নু (গগন বাবু রোডের বাসিন্দা) এগিয়ে আসে। ২৫ মার্চ খুলনায় হরতাল ও অনুরূপ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার আব্দুল হাফিজ সভাপতিত্ব করেন। এম এ গফুর, এম এ বারী, আবু মুহম্মদ ফেরদৌস, আলতাফ খান প্রমুখ এ সভায় বক্তৃতা করেন।

খুলনা গেজেট/কেএম

 




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!