খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় এসবির রিপোর্টার নিহত
  চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে

বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, বিধিনিষেধ মানতে চলছে লুকোচুরি

নিজস্ব প্রতি‌বেদক

খুলনায় প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ৩১ শতাংশ। আর খুলনা করোনা হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। এখানে ধারণক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। ১০০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১২৯ জন। সেই সঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে।

করোনার বিস্তার ঠেকাতে খুলনা মহানগরীর সদর, খালিশপুর, সোনাডাঙ্গা ও রূপসা উপজেলায় এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। শুক্রবার (৪ জুন) শুরু হওয়া এ বিধিনিষেধ চলবে ১০ জুন পর্যন্ত।

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন ৩ জুন এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ-সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। এতে উল্লেখ করা হয় মহানগরীর খুলনা সদর, খালিশপুর ও সোনাডাঙ্গা থানাধীন সব দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি দোকান বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান ও ন্যূনতম তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। ওষুধের দোকান সার্বক্ষণিক খোলা রাখা যাবে। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো পার্সেলকৃত অথবা প্যাকেটজাত খাবার সরবরাহ করতে পারবে। সন্ধ্যার পর কোনো রাস্তার মোড়ে একের অধিক ব্যক্তি অবস্থান করা যাবে না।

এক সপ্তাহের ওই বিধিনিষেধের আজ মঙ্গলবার (০৮ জুন) পঞ্চম দিন। সড়কে যানবাহন চলাচল ও মানুষের আনাগোনা দেখে বোঝার উপায় নেই যে বিধিনিষেধ চলছে। নগরের বড় বড় মার্কেট ও শপিংমলগুলো বন্ধ রয়েছে। আর খোলা রয়েছে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকান।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিধিনিষেধ জারি হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ দেখা দিয়েছে। মানুষের মাঝে নেই সচেতনতা। বিধিনিষেধ মানতে চলছে লুকোচুরি। দোকান-পাটের বেচাকেনা চলছে অভিনব কায়দায়। অনেক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে রয়েছেন মালিক-কর্মচারী। এসব দোকানের সাটার বন্ধ থাকলেও অভিনব পদ্ধতিতে চলছে বেচাকেনা।

আবার কেউ কেউ সাটারের অর্ধেকটা খোলা রাখছে। প্রশাসনের কোনো গাড়ি দেখলেই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি সাটার বন্ধ করে দেয়। চলে যাওয়া মাত্রই ফের সাটার খুলে দেয়। এভাবে লুকোচুরির মধ্যদিয়ে চলছে তাদের বেচা-কেনা। অবশ্য অনেকেই দোকান খোলা রাখার অপরাধে জরিমানা গুনেছেন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে জরিমানা আদায় করা হয়।

সড়কে স্বাভাবিকভাবেই চলছে যানবাহন। বিধিনিষেধ আরোপের প্রথমদিকে মানা হলেও এখন মানুষের মাঝে অনীহা দেখা দিয়েছে। ভিড় রয়েছে কাঁচাবাজার ও ওষুধের দোকানগুলোতে। বিশেষ করে নগরীর হেরাজ মার্কেটে। এসব স্থানে অনেকের মুখেই নেই মাস্ক।

মহানগরীর রয়েল মোড়, শান্তিধাম মোড়, পিকচার প্যালেস, ডাকবাংলা মোড়, বড়বাজার, চিত্রালীবাজার, ময়লাপোতা মোড়, নিউ মার্কেট এলাকা, শিববাড়ি, সাতরাস্তা মোড়, ফেরিঘাট মোড়, পাওয়ার হাউজ মোড়, রেলস্টেশন এলাকা, খালিশপুর বিআইডিসি সড়ক, হাউজিং বাজার, আলমনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।

এদিকে শুরু থেকেই করোনাভাইরাস রোধে এবং মানুষকে সচেতন করতে মাঠে রয়েছে প্রশাসন। খুলনা জেলা প্রশাসন বিভিন্ন স্থানে গত তিনদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৬১ মামলায় মোট ১ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। সোমবার (০৭ জুন) ৫২টি মামলায় ৪৬ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রোববার (০৬ জুন) ৩৯টি মামলায় ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া শনিবার (০৫ জুন) ৭০টি মামলায় ৫৯ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলা ও মহানগরীতে ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ৩১ শতাংশ ছিল। খুলনায় ২৪ ঘণ্টায় ৪৭৯ নমুনা পরীক্ষা করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫১ জনের। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে খুলনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ জন। মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার এবং করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত খুলনা করোনা হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১২৯ জন রোগী। যার মধ্যে ৬৩ জন রেড জোনে, ২৮ জন ইয়োলো জোনে, আইসিইউতে ২০ জন এবং এইচডিইউতে ১৯ জন। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ৪ জন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে একজন মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩ জন।

খুলনা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। তবুও কেন যেন মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে অনীহা দেখাচ্ছে।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!