বাম-কংগ্রেস শূণ্য পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ও তার নেপথ্যে
মোহাম্মদ সাদউদ্দিন, কলকাতা
খুলনা গেজেটমে ৫, ২০২১৩:১৪ অপরাহ্ণ
মমতা ব্যানার্জি ২০১১ সাল থেকে টানা তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হলেন তৃণমূল সুপ্রিমো হিসাবে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে গেল। আর সেটা হল ১৩৬ বছরের সুপ্রাচীন কংগ্রেস এবং ১০০ বছরের কমিউনিষ্ট পার্টি তথা বামপন্থীরা আজ বিধানসভা শূণ্য। এক কথায় বলা যেতে পারে এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা।
আমাদের মনে রাখতে হবে এই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা অবিভক্ত বাংলার আইনসভা। দেশ ভাগের আগে ও পরে কংগ্রেস ও কমিউনিস্টরা প্রতিনিধিত্ব করেছে। দেশভাগের পরে দুই পর্বে ২৫ বছর এবং সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট একটানা ৩৪ বছর ক্ষমতাসীন ছিল। দুটো এই প্রাচীন সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা থেকে সাফ হয়ে গেল। কিন্তু কেন? কেরালা সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট কেরালাকে বিজেপি শূণ্য করে দিল, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বাম- কংগ্রেস শূন্য হওয়ার মতো ঘটনা এক মর্মান্তিক ট্রাজেডি। মানুষকে পরিস্থিতি অনুসারে রণকৌশল ঠিক করতে হয়। সারা ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও নব্বইয়ের দশকে বিজেপি ১৭% ভোট পেয়েছিল। সে সময় পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট ক্ষমতায়। মমতা তখন বিজেপির সঙ্গে। কংগ্রেস তখন টিমটিম। সেই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে রুখতে মুসলিম-দলিত ভোট চলে যায় বামেদের দিকে।
২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কেবল মমতাকে জিতে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তারপর এই মমতা রাজনৈতিকভাবে বিজেপির সঙ্গ ছাড়লো, পশ্চিবঙ্গের মানুষ তাকে বামদের বিকল্প হিসেবে ভাবল। ২০১১সালে ৩৪ বছর ক্ষমতাধীন বামফ্রন্টকে উৎখাত। আর এই জয়ের আসল ভূমিকায় ছিল পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু ও সাধারণ মানুষ। বামফ্রন্ট বিশেষ করে সিপিআই এম এই তত্ব মানুষকে বলতে লাগল, বিজেপিকে রুখতে হলে তৃণমূলকে হঠাতে হবে। মানুষ এটা মোটেই সায় দেয়নি।
ভোট চলাকালীন শুভেন্দুর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনামূলক বক্তব্য মানুষকে আতঙ্কিত করেছে। আর শীতলকুচির ঘটনা মানুষকে মমতার দিকে টেনে নিয়ে গেছে। ফলে কংগ্রেস-বাম-আই এস এফ মিলে যে সংযুক্ত মোর্চা করা হয়েছিল তা সাড়া ফেলতে পারেনি। বিজেপির হাত থেকে রেহাই পেতে তৃণমূল হয়ে উঠল পশ্চিমবঙ্গের মসীহা। কিন্তু বিজেপি তার শক্তি বাড়িয়ে নিয়েছে ২৫ গুণ। সেটা কতখানি সামাল দেওয়া যাবে সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।